তাহসানের গান চলাকালেই আঁতশবাজির ঝলকানি চমকে দেয় ধানমন্ডি লেকের আকাশ। সেই সঙ্গে গানের সুরে উন্মাতাল দর্শক-শ্রোতার বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে মাতোয়ারা হয় পুরো পরিবেশ।
Published : 23 Jun 2024, 12:34 AM
নাচ, গান ও আবৃত্তিতে মুখরিত এক পরিবেশে ঢাকার ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে আওয়ামী লীগের ৭৫ বছর পূর্তি উদযাপন করল ঢাকা-১০ আসনের বাসিন্দারা।
পুরো উৎসবে সাংস্কৃতিক পরিবেশনার পাশাপাশি ছিল ইতিহাসের উচ্চারণ; অতিথিদের বক্তব্যে উঠে আসে স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া রাজনৈতিক দলটির ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অমর কীর্তিগাঁথা।
রোববার ৭৫ বছর পূর্ণ হচ্ছে আওয়ামী লীগের। এ মাইলফলক উদযাপনে তিন দিনের কর্মসূচি পালন করছে ক্ষমতাসীন দলটি। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতার নেত্বত্ব দেওয়া দলটির। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া এ দলে এখন নেতৃত্ব দিচ্ছেন তার মেয়ে শেখ হাসিনা, যিনি টানা চার মেয়াদে সরকার পরিচালনা করছেন।
শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় অভিনেত্রী ও নাট্যনির্দেশক হৃদি হক মঞ্চে এসেই আবৃত্তি করেন ‘আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে' কবিতাটি। পুরো রবীন্দ্র সরোবর চত্বরে তখন উৎসবের আমেজ।
আবৃত্তি শেষ করেই তিনি মঞ্চে ডেকে নেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে।
উচ্ছ্বসিত জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমাকে মন্ত্রী হিসেবে অনেকে পরিচয় করিয়ে দেন। মন্ত্রীর চেয়েও বেশি ভালো লাগে আমি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মত একটা প্রাচীনতম দলের সাধারণ সম্পাদক। এ দলটির রাজনৈতিক ঐতিহ্য সুবিস্তৃত।”
এ ভূখণ্ডের রাজনৈতিক পরম্পরা আছে মন্তব্য করে কাদের বলেন, “নবাব সিরাজউদ্দৌলা, মাস্টারদা সূর্য সেন, তিতুমীরসহ অনেক নেতার ধারাবাহিকতার মধ্য দিয়ে আমাদের যে রাজনৈতিক পরম্পরা, তার চূড়ান্ত সাফল্য এনে দিয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
“বাঙালির লড়াই-সংগ্রামের সুদীর্ঘ ইতিহাস থাকলেও বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর জন্ম হয়েছিল বলেই ১৯৭১ সালে আমরা একটা স্বাধীন দেশ পেয়েছি।”
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল, পদ্মা সেতুসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কথা তুলে ধরে ওবায়দুল কাদের বলেন, “শেখ হাসিনা আছে বলেই বাংলাদেশ এখন ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ হওয়ার পথে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য স্মার্ট কর্মী দরকার।”
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান বলেন, আওয়ামী লীগের ৭৫ বছরের পথ চলায় গণমানুষের মুক্তির লক্ষ্যে প্রথমে বঙ্গবন্ধু এবং বর্তমানে তারই সুযোগ কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ।
বক্তব্য পর্বের পরই আবৃত্তি নিয়ে মঞ্চে আসেন হৃদি হক, বিজরী বরকতুল্লাহ, দীপা খন্দকার, তানভীন সুইটি, নাদিয়া, শামীমা তুষ্টি ও ফেরদৌস আহমেদ।
নাচ পরিবেশন করেন সোহাগ ড্যান্স ট্রুপের শিল্পীরা। মঞ্চেই 'স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১' শিরোনামে একটি নতুন গানের উন্মোচন করা হয়।
সঙ্গীতশিল্পী আঁখি আলমগীর মঞ্চে এসে রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ এর লেখা ‘ভালো আছি ভালো থেকো’ দিয়ে পরিবেশনা শুরু করেন। একে একে শোনান 'বন্ধু আমার রসিয়া', 'মধু হই হই বিষ হাওয়াইলা', 'দিলে যখম লাগে উহু আহা’, 'বন্দে মায়া লাগাইছে', 'আমি ফুল বন্ধু ফুলের ভ্রমরা', 'জল পড়ে পাতা নড়ে' গান।
চলচ্চিত্র অভিনেত্রী অঞ্জনা- 'ঢাকা শহর আইসা আমার আশা ফুরাইছে' গানের মাধ্যমে দর্শকের আনন্দকে আরও বাড়িয়ে দেন।
উৎসবে আরও আনন্দ যোগ করেন সঙ্গীতশিল্পী আলভী খান। তরুণ এ শিল্পী 'আষাঢ় শ্রাবণ মানে না তো মন' গানটি শুরু করতেই পুরো প্রাঙ্গণ মেতে উঠে গানের সুরে।
এরপর অভিনেত্রী আশনা হাবিব ভাবনা আসেন নাচের পরিবেশনা নিয়ে। সবশেষে ছিল অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ তাহসান খান।
রাত সাড়ে ৯টায় মঞ্চে আসেন তাহসান। প্রস্তুতি নিয়ে গান শুরু করেন ৯টা ৪০ মিনিটে। তাহসান মঞ্চে আসতেই দর্শক সারিতে শোনা যায় উচ্ছ্বাসের জোরালো আওয়াজ।
তাহসান বললেন, "অনেক বছর পর এসেছি এই ধানমন্ডি লেকে গান শোনাতে।"
এরপর গেয়ে শোনান, 'কে তুমি দাঁড়িয়ে', 'তুমি ছুঁয়ে দিলে এ মন', 'তুমিই প্রথম', 'প্রেম তুমি', 'বিন্দু আমি', 'আলো'সহ শিল্পীর জনপ্রিয় সব গান।
তাহসানের গান চলাকালেই আঁতশবাজির ঝলকানি চমকে দেয় ধানমন্ডি লেকের আকাশ। সেই সঙ্গে গানের সুরে উন্মাতাল দর্শক-শ্রোতার বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে মাতোয়ারা হয় পুরো পরিবেশ।
রাত ১০টায় পর্দা নামে উৎসবের, যার মূল আয়োজক ঢাকা-১০ এর সংসদ সদস্য ফেরদৌস আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন দল আওয়ামী লীগ, এই উপমহাদেশের রাজনীতির ইতিহাসেও অন্যতম প্রাচীনতম দল। এই দলের প্রতিবার্ষিকী সবার আনন্দের দিন।
অনুষ্ঠানটি আয়োজনে সহযোগিতা দিয়েছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, বে ও প্রবাসী পল্লী গ্রুপ।