“মানুষের হৃদয়ে ব্যান্ডসংগীত কতটা ছড়িয়েছে, এটি তারও একটি উদাহরণ,” বলেন মাইলসের প্রধান হামিন আহমেদ।
Published : 05 Jul 2024, 08:49 AM
চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সেট কোডে উঠে এসেছে জনপ্রিয় কয়েকটি গানের ব্যান্ডের নাম; যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনার মধ্যে এটিকে বাংলা ব্যান্ড ও রক গানের এক ধরনের ‘স্বীকৃতি’, ’ভালোবাসার প্রকাশ’ হিসেবে দেখছেন ব্যান্ড শিল্পীরা।
সাধারণত প্রশ্নপত্রের কোডের নাম ফুল, ফল কিংবা নদীর নামে হলেও এবারের ব্যতিক্রমকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন তারা।
গত ৩০ জুন বাংলা (আবশ্যিক) প্রথমপত্র দিয়ে এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়। প্রশ্নপত্রে দেখা যায়, এর সেটগুলো সাজানো হয়েছে বাংলা গানের বিভিন্ন ব্যান্ডের নামে। পরীক্ষার পরই প্রশ্নপত্র ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের প্রশ্নের সেট কোড ছিল ক্যাকটাস ও দোহার, রাজশাহী বোর্ডে লালন, চট্টগ্রাম বোর্ডে মাইলস, ময়মনসিংহ বোর্ডে পরশপাথর, কুমিল্লা বোর্ডে পেন্টাগন, যশোর বোর্ডে প্রমিথিউস, বরিশাল বোর্ডে অবসকিউর ও দিনাজপুর বোর্ডের সেট কোডে মেঘদল ব্যান্ডের নাম দেখা যায়। প্রশ্নপত্রে অ্যাশেজ, ওয়ারফেজ, আভাস, চিরকুট ও ফিডব্যাক ব্যান্ডের নামও দেখা যায়।
প্রশ্নপত্রে এমন নাম দেখে অবাকই হয়েছেন বাংলাদেশ মিউজিক্যাল ব্যান্ডস অ্যাসোসিয়েশনের (বামবা) সভাপতি হামিন আহমেদ।
মাইলস ব্যান্ডের দলপ্রধান হামিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটি বাংলাদেশের ব্যান্ড চর্চার সার্থকতা। মানুষের হৃদয়ে ব্যান্ডসংগীত কতটা ছড়িয়েছে, তারও একটি উদাহরণ। এটি কিন্তু স্বতঃস্ফূর্তভাবেই এসেছে। ফলে মানুষ ব্যান্ড পছন্দ করেছে বলেই এটি হয়েছে। এ বিষয়টি ব্যান্ডশিল্পীদের গর্বিত করেছে।”
স্বাধীনতার পরপরই বাংলাদেশে রক গানের চর্চায় নতুন পথ তৈরি হতে শুরু করে। ‘পপগুরু’ আজম খান ও তার বন্ধুরা মিলে গড়ে তোলেন ব্যান্ড দল ‘উচ্চারণ’। ফেরদৌস ওয়াহিদ ও ফিরোজ সাঁইসহ কয়েকজন মিলে গড়ে তোলেন 'স্পন্দন'।
ফিডব্যাক, মাইলস, চাইম, ফিলিংস, নগরবাউলসহ বেশ কিছু জনপ্রিয় ব্যান্ড তখন গড়ে ওঠে। পরে এলআরবি, আর্ক, প্রমিথিউস, অবসকিউরসহ বেশ কিছু ব্যান্ড বাংলা রক গানের নতুন পথ তৈরি করে। সেই সময়ে জনপ্রিয়তার সঙ্গে এ প্রজন্মের তরুণদের মাঝেও আলাদা টান রয়েছে ব্যান্ডের গানের প্রতি।
তবে প্রশ্নপত্রে ব্যান্ড দলগুলোর নাম দেখে কেউ কেউ নেতিবাচক মন্তব্যও করছেন বলে তার চোখে পড়ার কথা তুলে ধরেন হামিন আহমেদ।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এটাও শুনছি, কেউ কেউ বলছেন দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার কী হাল! তাদের উদ্দেশে বলব- ফুলের নাম থাকলেও শিক্ষা ব্যবস্থার কিছু হত না। ব্যান্ডের নাম থাকাতেও শিক্ষা ব্যবস্থার কিছু হবে না। এটি মূলত ফুলের প্রতি বা ব্যান্ডের প্রতি এক ধরনের ভালোবাসার প্রকাশ। আমাদের ব্যান্ডশিল্পীরা মানুষের ভালোবাসাটি অর্জন করতে পেরেছে বলেই এটি হয়েছে।”
অবসকিউর ব্যান্ডের দলপ্রধান সাঈদ হাসান টিপু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যিনি বা যারা এই কাজটি করেছেন, তারা ব্যান্ডসংগীতকে ভালোবাসেন বলেই করেছেন। তবে এতে আমি খুব একটা ‘এক্সাইটেড’ হতে পারিনি।”
কারণ জানতে চাইলে দেশের সংগীত শিল্প সামগ্রিকভাবে ভালো নেই বলে জানান টিপু।
তার ভাষ্য, “আমাদের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি তো এখনও রয়্যালটির জায়গাগুলোই তৈরি করতে পারেনি। মানুষ গান শুনছে, কিন্তু শিল্পীরা টাকা পাচ্ছেন না। সামগ্রিকভাবে আমাদের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির সিস্টেমটা তো দাঁড়াল না।
“সামগ্রিক জায়গা থেকে এসব দেখে আমরা একটু খুশি হতেই পারি, কিন্তু আমাদের ব্যান্ডগুলো ভালো আছে? তবে যারা ব্যান্ডকে ভালোবেসে এটি করেছেন, তাদের ধন্যবাদ জানাই। এই সব ছোট ছোট ভালোবাসাতেও হয়ত আমাদের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি একটা সিস্টেমের উপর দাঁড়াবে বলে স্বপ্ন দেখি।”
প্রশ্নপত্রে ওয়ারফেজ ব্যান্ডের নাম দেখে তাদের ফ্যানদের অনেকেই শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বলে জানান ব্যান্ডের ড্রামার ও দলপ্রধান শেখ মনিরুল আলম টিপু।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরডটকমকে তিনি বলেন, “এটা আমাদের ব্যান্ড সংশ্লিষ্টদের জন্য খুবই সারপ্রাইজিং একটা ব্যাপার।”
ফিডব্যাক ব্যান্ডের ফুয়াদ নাসের বাবু বলেন, “এটা একটা স্বীকৃতিও বলা যায়। ব্যান্ডের প্রতি ভালোবাসা থেকেই এটা করা হয়েছে। আমরা খুব খুশি হয়েছি। খুব ভালো লাগছে।”
প্রশ্নপত্রে কোড হিসেবে ব্যবহার করা ক্যাকটাস, পরশপাথর ও দোহার মূলত ভারতের ব্যান্ড। তবে বাংলাদেশেও তাদের জনপ্রিয়তা রয়েছে এবং বাংলা ব্যান্ডের ইতিহাসে এ নামগুলোও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন ‘বাংলার রক মেটাল’ গ্রন্থের লেখক হক ফারুক।
বইটিতে বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতের বিস্তারিত ইতিহাস তুলে ধরেছেন তিনি।
হক ফারুক বলেন, “যে ব্যান্ড সংগীতকে একসময় অপসংস্কৃতি বলার একটি প্রয়াস ছিল, এখন সেই ব্যান্ড সংগীত আমাদের গর্বের জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই গর্বের জায়গাটি তৈরি করতে অনেক বাধা অতিক্রম করে আসতে হয়েছে।
“যারা ব্যান্ড নিয়ে লিখেছেন, যারা ব্যান্ডে যুক্ত এবং যারা ব্যান্ড সংগীত ভালোবেসেছেন, সবাই মিলে এই গর্বের জায়গাটি তৈরি হয়েছে। প্রশ্নপত্রে ব্যান্ডের নাম কোড হিসেবে ব্যবহার করা একটি বড় বিষয় এবং অবশ্যই ইতিবাচক।”