কপ২৬ ব্যর্থ: গ্রেটা থুনবার্গ

স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে বিশ্বনেতাদের যে সম্মেলনকে অনেকে পৃথিবীকে বাঁচানোর শেষ চেষ্টা হিসেবে দেখছিলেন, গ্রেটা থুনবার্গ বললেন, সেই কপ২৬ ‘ব্যর্থ’হয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Nov 2021, 07:37 PM
Updated : 5 Nov 2021, 07:40 PM

শুক্রবার স্কুল বাদ দিয়ে গ্লাসগোর বুক চিরে হাজারো কিশোর-তরুণের এক মিছিলের পর জর্জ স্কয়ারে আয়োজিত সমাবেশে এই সুইডিশ জলবায়ুকর্মী বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব যদি মোকাবেলা করতে হয়, কার্বন গ্যাসের নির্গমন এখনই বড় মাত্রায় কমানো দরকার, যা আগে কখনও হয়নি।     

বিবিসি লিখেছে, থুনবার্গের অনুসারী তরুণ পরিবেশবাদীদের সংগঠন ফ্রাইডেস ফর ফিউচারে স্কটল্যান্ড শাখা এ কর্মসূচির আয়োজন করে। 

গ্লাসগোতে চলমান জলবায়ু সম্মেলনের মধ্যে পরিবেশবাদীদের আয়োজিত সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ সমাবেশ ছিল এটা। 

থুনবার্গ বলেন, “কপ২৬ যে ব্যর্থ হয়েছে, সেটা গোপন কিছু নয়। যে প্রক্রিয়ায় আজ আমরা এই দুর্বিপাকের মধ্যে পড়ে গেছি, সেই একই প্রক্রিয়ায় যে আমরা সেখান থেকে উদ্ধার পাব না, এটা তো জানা কথা।” 

কার্বন নিঃসরণ কমানোর দাবিতে ক্লাস বর্জন করে ২০১৮ সালে সুইডিশ পার্লামেন্টের সামনে অবস্থান নিয়ে বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন গ্রেটা থুনবার্গ, তখন তার বয়স মাত্র ১৫। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তার মাধ্যমে তরুণদের মধ্যে জলবায়ু রক্ষার আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে।

গ্লাসগোর বিক্ষোভ সমাবেশে থুনবার্গ বলেন, ক্ষমতাসীনরা কল্পনার রঙিন বুদবুদের মধ্যে নিজেদের লুকিয়ে রাখতে পারেন; তারা ভাবতে পারেন যে কোনো একটি গ্রহে হঠাৎ করেই একদিন অলৌকিক কিছু ঘটে যাবে, প্রযুক্তির এমন শক্তি মানুষ পেয়ে যাবে যে আজকের সব সঙ্কট নিমেষেই কেটে যাবে।

“কিন্তু তারা যখন সেই স্বপ্নে বিভোর, এই পৃথিবী তখন আক্ষরিক অর্থেই পুড়ছে। সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছে যারা, এরই মধ্যে তাদের বইতে হচ্ছে জলবায়ু সঙ্কটের ক্ষত।”  

থুনবার্গের ভাষায়, জাতিসংঘের এই জলবায়ু সম্মেলন আসলে ছিল কার্বন দূষণকারী দেশগুলোর ‘আগের মতই চলার’ দুই সপ্তাহব্যাপী এক উদযাপন এবং নিজেদের সুবিধার জন্য নতুন নতুন ‘ছিদ্র তৈরির’ আসর।  

“আমাদের সম্রাটদের গায়ে যে আসলে কাপড় নেই, সেটা আমরা ভালোই জানি।”

বিভিন্ন দেশের আরও কয়েকজন পরিবেশবাদী ও জলবায়ু কর্মী এই বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন।

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে তাদের দেশ কীভাবে ক্ষতির মুখে পড়তে শুরু করেছে, সে কথা তারা তুলে ধরেন তরুণ অ্যাক্টিভিস্টদের সামনে।

উগান্ডা থেকে আসা ভানেসা নাকাতে বলেন, এযাবৎকালে বিশ্বের মানুষ যে পরিমাণ কার্বন গ্যাস বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়েছে, তাতে আফ্রিকার অবদান মাত্র ৩ শতাংশ। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের যেসব প্রভাব এরই মধ্যে দেখা দিয়েছে, তার কয়েকটি আফ্রিকাকেই ভোগাচ্ছে সবচেয়ে বেশি।

“জলবায়ু সঙ্কটে ঝুঁকির তালিকায় প্রথম দিকেই থাকছে দক্ষিণ গোলার্ধের দেশগুলো, কিন্তু আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রথম পাতায় তাদের জায়গা হচ্ছে না।”

গ্লাসগোর ১৪ বছর বয়সী শার্লি ও’রোর্কে স্কুল বাদ দিয়ে তার মা ও বোনকে সঙ্গে নিয়ে এই সমাবেশে যোগ দিতে এসেছিল।

সমাবেশে মঞ্চে এসে সে বললো, শুধু লাভের হিসাব না কষে কপ২৬ কে অবশই মানুষের কথা শুনতে হবে, পৃথিবীর জন্য কোনটা জরুরি, সেটা জানতে হবে। 

সমাবেশে যোগ দিতে বাবার সঙ্গে উল্লাপুল থেকে ট্রেনে করে গ্লাসগোতে এসেছে ১৪ বছর বয়সী ফিনলে প্রিঙ্গেল।

সে বললো, “আপনি যদি সত্যিই কোনো কিছু ভালোবাসেন, আর সেটা রক্ষা করতে চান… তাহলে দ্বিতীয়বার না ভেবে আপনার সেটাই করা উচিত।”

স্কটল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী নিকোলা স্টার্জন বলেছেন, সরকারের সঙ্গে এই তরুণ জলবায়ুকর্মীদের যোগসূত্র তৈরি করতে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় তাদের যুক্ত করতে তিনি অঙ্গীকারাবদ্ধ।

“স্কটল্যান্ডে আমরা এরই মধ্যে জলবায়ু সঙ্কট মোকাবেলায় কাজ শুরু করেছি। কিন্তু এইসব শিশুদের, তরুণদের কথা আমরা শুনলাম। তারা বলছে, আমরা যা করছি তা যথেষ্ট নয়। আমাদের আরও বেশি উদ্যোগী হতে হবে।”