পাহাড়ে হাতির জন্য করিডোর করার ভাবনা

হাতি ও বাঘ সংরক্ষণে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে ‘বঙ্গবন্ধু কনজারভেশন করিডোর’ নামে অভয়ারণ্য তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

সাজিদুল হক নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Sept 2019, 03:20 AM
Updated : 17 Sept 2019, 04:21 AM

বন অধিদপ্তর এই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে কাজ করছে। এশীয় হাতির চলাচলের জন্য দেশের সীমানায় তিনটি সংযোগ পথ তৈরির কথা বলা হয়েছে এ পরিকল্পনায়।

এর মধ্যে ৫২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের প্রথম পথটি বান্দরবান বনাঞ্চলের সঙ্গে কক্সবাজার বনাঞ্চলকে যুক্ত করবে। ৬৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দ্বিতীয় পথটি যাবে কাপ্তাই থেকে বিলাইছড়ি-জুরাইছড়ি-বরকল হয়ে বাঘাইছড়ি পর্যন্ত। আর ৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ তৃতীয় পথটি হবে পাবলাখালি বন্যপ্রাণি অভয়ারণ্য ও কাসালং রিজার্ভ ফরেস্টের মধ্যে।

প্রস্তাবিত এ প্রকল্পের ওপর একটি প্রতিবেদন সম্প্রতি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে উপস্থাপন করে মন্ত্রণালয়।

গত ২৯ জুলাই কমিটির বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা যায়, সংরক্ষিত বনাঞ্চলগুলোর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে এই করিরোড করার আগে পার্বত্য চট্টগ্রামের সংশ্লিষ্টদের মধ্যে আলোচনা করতে হবে বলে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বৈঠকে বলেন, আগামী এক বছরের মধ্যে ওই করিডোর করতে পারলে ভালো হয়।

বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই কনজারভেশন করিডোরের কাজ এখন প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। সম্ভ্যাবতা যাচাই করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।“

সংসদীয় কমিটিতে মন্ত্রণালয়ের দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের চারটি বনাঞ্চলে অন্যদেশ থেকে আসা হাতি দেখা যায়।

এই বনাঞ্চলগুলো হলো- ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বনাঞ্চল (কাসালং) ও বান্দরবান (সাঙ্গু)।

ময়মনসিংহে যে হাতিগুলো দেখা যায়, সেগুলো ভারতের মেঘালয় থেকে আসে। সিলেট ও কাসালংয়েরগুলো ত্রিপুরা ও মিজোরাম থেকে এবং সাঙ্গুরগুলো মিয়ানমার থেকে আসে।

সাবেক প্রধান বন সংরক্ষক ইশতিয়াক উদ্দিন আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, “যে করিডোরের প্রস্তাব এসেছে, তা করতে পারলে সেটা আমাদের হাতি সংরক্ষণের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ হবে। বাঘ ও হাতি আমাদের জীববৈচিত্র্যে ‘ফ্ল্যাগশিপ’ প্রজাতি।”

বর্তমানে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় পরামর্শক হিসেবে কাজ করা ইশতিয়াক জানান, বাংলাদেশে আবাসিক ও অনাবাসিক মিলিয়ে এখন মোটামুটি ২৯৬টি হাতি রয়েছে। 

তবে উখিয়ায় রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরের কারণে উখিয়া-ঘুনধুম করিডোরে হাতির চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে বলে প্রকল্পের ধারণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

সুন্দরবন এই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের আবাস

পার্বত্য এলাকায় বাঘ

প্রস্তাবিত এই সংরক্ষিত বনাঞ্চলে বাঘেরও দেখা মিলছে বলে মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, কাসালং সংরক্ষিত বনাঞ্চল এবং সাঙ্গু অভয়ারণ্যে বাঘ থাকতে পারে।

তবে এই বাঘ বাংলাদেশের, না কি ভারত বা মিয়ানমার থেকে আসা সে নিয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।

বন সংরক্ষক মিহির কুমার বলেন, “দুটি এলাকায় বাঘ থাকার বিষয়ে কিছু তথ্য এসেছে। কেউ কেউ দাবি করে থাকে সেখানে বাঘ আছে। পায়ের ছাপ দেখেছে। সেগুলো আমাদের নাকি বাইরে থেকে এসেছে সেটা এখনও প্রমাণিত নয়। সঠিক পদ্ধতিতে যাচাই করে দেখতে হবে।”

ইশতিয়াক উদ্দিন আহমেদ বলেন, “বাঘ যদি থেকেই থাকে, তবে তার জন্য সংরক্ষিত অঞ্চল রাখতে পারলে খুব ভালো। বাঘের জন্য টেরিটরি দরকার। সে আমাদের দেশের হোক বা বাইরের হোক বাঘ থাকলেই সেটি সংরক্ষণ করা দরকার।”

সর্বশেষ জরিপ করে গত মে মাসে বন অধিদপ্তর জানিয়েছে বর্তমানে সুন্দরবনে ১১৪টি রয়েল বেঙ্গল টাইগার আছে।