কর নিয়ে জুলুম নয়, উদ্বুদ্ধ করতে হবে: শেখ হাসিনা

ঘরে বসেই এখন যে কর দেওয়া যায়, তার ব্যাপক প্রচার চালানোর তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Feb 2023, 01:33 PM
Updated : 5 Feb 2023, 01:33 PM

অর্থনৈতিক সক্ষমতা বাড়লেও দেশে আয়করদাতার সংখ্যা যে সেভাবে বাড়েনি, তা মনে করিয়ে দিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেছেন, “আমি মনে করি, এখানে কোনো জোর জুলুম খাটাবেন না। মানুষকে কোনো ভয়-ভীতিকর পরিস্থিতিতে ফেলা যাবে না। মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। জনগণকে জানাতে হবে যে, আপনি যে কর দেন, সেটা কিন্তু আপনার কাজেই লাগে।

“আজকে রাস্তাঘাট, পুল, ব্রিজ বা এই যে পোর্ট, কৃষি, শিক্ষা বা স্বাস্থ্য-সব ক্ষেত্রেই যেগুলো সরকার করে দিচ্ছে, সবগুলোর সুফল ভোগ করছে জনগণ। আর যারা এই সুফলটা ভোগ করছে, তাদেরকেও তো কিছু দিতে হবে, রাষ্ট্রতো আর এমনি এমনি সবকিছু দিতে পারে না। আর অন্যের কাছে আমরা হাতও পাতব না।”

বাসস জানায়, রোববার ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দুই দিনব্যাপী রাজস্ব সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তৃতায় এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। দেশে রাজস্ব ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে এ ধরনের অনুষ্ঠান এটাই প্রথম।

করের পরিমাণ বাড়ানোর পরিবর্তে করদাতার সংখ্যা সম্প্রসারণে আন্তরিকতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “এটা শুধু রাজধানীকেন্দ্রিক নয়, সারা দেশেই আমি সকলকে বলব- যারা কর দেবার সামর্থ রাখেন, আপনারা দয়া করে কর দেবেন। সেটা আপনাদের সেবায়ই সরকার কাজে লাগাবে।”

কর ফাঁকি রোধে ডিজিটাইজেশনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, “যাদের কর ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা রয়েছে- সর্বক্ষেত্রে ডিজিটাল সিস্টেম হয়ে গেলে, তারা এই ফাঁকিটা আর দিতে পারবে না।

“মানুষ যাতে কর ফাঁকি না দেয়- সেজন্য আর করের পরিমাণটাও এমন রাখতে হবে- যাতে প্রতিটা মানুষ স্বতস্ফূর্তভাবে দিতে পারে। মানুষকে জানাতে হবে, ব্যাপক প্রচার করা দরকার।”

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাব বাংলাদেশের উপরও পড়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “কাজেই, আমাদের সেগুলোর মোকাবেলা করেই এগিয়ে যেতে হবে। আমরা যত বেশি ট্যাক্স সংগ্রহ করব, ততই এটি অতিক্রম করা সহজ এবং সম্ভব হবে।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যেহেতু বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা, আজকে প্রতিটা জিনিসের দাম বেড়েছে। আজকে তেল, গ্যাস, গম, ভোজ্যতেল, চিনিসহ প্রত্যেকটা জিনিষের দাম বেড়ে গেছে। আমাদের আওয়ামী লীগ সরকার তা সত্বেও এগুলো অধিকমূল্যে কিনে নিয়ে আসছে। সেখানে পরিবহন ব্যয়ও বেড়েছে, ৮০০ ডলারের জাহাজ ভাড়া এখন ৩ হাজার ৮০০ ডলার।

“আমরা ভর্তুকি দিয়ে অধিক মূল্যে কিনে এনে তা কম মূল্যে দেশের মানুষকে দিচ্ছি। এক কোটি মানুষ টিসিবির কার্ড পেয়েছে, সেখানে ভর্তুকি মূল্যে মানুষকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সরবরাহ করা হচ্ছে। কৃষিতে সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে, করোনাকালীন শিল্প ও কলকারখানা চালু রাখার জন্য ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা দিয়েছে সরকার। এভাবেই সরকার সকলকে দুঃসময়ে ভর্তুকি অব্যাহত রেখেছে।”

ভর্তুকি দিতে গিয়ে দেশের অন্যান্য কর্মকাণ্ড যাতে ব্যাহত না হয়, সেই বাস্তবতার কথা তুলে ধরতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন “এখন সরকার যাতে রাষ্ট্র চালাতে পারে বা মানুষের জন্য কাজ করতে পারে, সেদিকে সকলকে দৃষ্টি দিতে হবে। কারণ ভর্তুকি আমরা আর কত দিতে পারব। তাছাড়া আমাদের উন্নয়ন কাজগুলো যাতে ব্যহত না হয়, সেদিকেও দেখতে হবে ।”

আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিন মেয়াদের উন্নয়নের বর্ণনা করতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আপনারা উপজেলা বা ইউনিয়ন পর্যায়ে যদি যান, যে পরিবর্তন হয়েছে গত ১৪ বছরে- সেই পরিবর্তনটা আপনারা দেখতে পাবেন।

“এখন আর কেউ কুঁড়ে ঘরে বাস করে না, ভূমিহীন-গৃহহীন প্রত্যেককে সরকার বিনে পয়সায় ঘর তৈরি করে দিচ্ছে। আর্থিক সহায়তা দিয়ে জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের সুযোগও করে দেওয়া হচ্ছে।”

প্রান্তিক জনপদেও অর্থনীতির গতির সঞ্চার হয়েছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, “সরকার ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিচ্ছে, যেখানে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের তৃণমূল পর্যায়ের উন্নয়ন নীতির কারণে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়েও অর্থনীতির গতিশীলতা তৈরি হয়েছে।

“আমি এটুকু বলতে পারি যে গত ১৪ বছরে আমুল পরিবর্তন এসেছে। করদানের সক্ষমতা কিন্তু আমাদের উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়েও রয়েছে। সেখানে আমরা যদি একটু প্রচার-প্রচারণা ভালভাবে চালাই, তাহলে মানুষ কিন্তু স্বতস্ফূর্তভাবে আসবে কারণ তারা তো সেবা পাচ্ছে।”

সরকার প্রধান জানান, দ্বিতীয়বার তার সরকার ক্ষমতায় এসে সবার আয় বাড়ানোর পাশাপাশি সবাইকে করের আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়। প্রত্যেক সংসদ সদস্যকেও আয়কর দেওয়ার বিধান তার সরকারই প্রথম চালু করে। সংসদ সদস্যরা ব্যক্তিগতভাবে আগে কর দিলেও সংসদ সদস্য হিসেবে তাদের কর রেয়াত ছিল।

কেবল রাষ্ট্রপতি ছাড়া প্রধানমন্ত্রীরও কর দেওয়ার বিধান আওয়ামী লীগ সরকার চালু করে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ফলে করদাতার সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়।

“ই-টিনধারীদের রিটার্ন প্রদানে উদ্বুদ্ধ করে সক্ষম করদাতাগণকে কর নেটের আনা হয়েছে। …করদাতাগণ যাতে ঘরে বসে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারেন, তার জন্য ই-ফাইলিং ব্যবস্থাও চালু করা হয়েছে।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আয়কর, কাস্টমস ও মূসক বিভাগকে অটোমেটেড এবং ডিজিটালাইজড করার মাধ্যমে করদাতা, ব্যবসায়ী এবং জনগণকে সহজ ও নিরবচ্ছিন্নভাবে সেবা প্রদানের জন্য বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

“করদাতাগণ এখন বাংলাদেশ ব্যাংক বা সোনালী ব্যাংকে না গিয়ে ঘরে বসেই নিজ ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে সুবিধাজনক সময়ে সরাসরি বাংলাদেশ ব্যাংকে কর পরিশোধ করতে পারছেন।”

এই সুবিধার কথা ব্যাপকভাবে প্রচার করার তাগিদ দেন তিনি।

অন্যদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনীম ও সদস্য ড. আব্দুল মান্নান শিকদার অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য প্রদ্যুৎ কুমার সরকার।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ৪১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নবনির্মিত ১২ তলা রাজস্ব ভবন উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি ভবনটির বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেন।