নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়নের আহ্বান স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর

“মানুষ অর্থ দিতে পারবে না। রোজগারের ব্যবস্থা করে দিতে পারলে তবে মানুষ টাকা দিবে,” বলেন মন্ত্রী।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 March 2024, 01:02 PM
Updated : 9 March 2024, 01:02 PM

স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজেদের আয় থেকে প্রকল্প বাস্তবায়নে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।

শনিবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) ষষ্ঠ নির্বাচিত পরিষদের তৃতীয় বর্ষ পূর্তির অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, “সারাদেশে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। চট্টগ্রামের জন্যও অনেক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যেসব প্রকল্প নেয়া হয় তা ২০৪১ সালের উন্নত বাংলাদেশ গড়ার জন্য পঞ্চ বার্ষিকী পরিকল্পনার পথরেখা অনুসারে নেয়া হয়।

“চট্টগ্রামের গুরুত্ব অনেক বেশি। আগে চট্টগ্রাম ছিল একমাত্র সমুদ্র বন্দর। এখন আরো বন্দর ডেভেলপ করছে। একটা বন্দর দিয়ে আমাদের ডেভেলপমেন্ট হবে না। কিন্তু চট্টগ্রামের গুরুত্ব কমে যায়নি বা যাবে না। আগামীতেও চট্টগ্রামের চাহিদা মাথায় রেখে বরাদ্দ দেয়া হবে।”

প্রকল্প বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে দায়িত্ব নিতে হবে উল্লেখ করে তাজুল ইসলাম বলেন, “স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে। এর মানে তারা নিজেদের আয় বর্ধন করবে, ব্যয় করবে এবং নিজেদের আয় থেকে প্রকল্প করবে।

“মানুষ অর্থ দিতে পারবে না। রোজগারের ব্যবস্থা করে দিতে পারলে তবে মানুষ টাকা দিবে। মানুষ যখন সেবা পাবে এবং বুঝবে এর বেনফিট পাচ্ছে তখন নাগরিকরা কর দিবে। ইনকাম জেনারেশনের যদি ব্যবস্থা করতে পারেন যদি তখন তাদের আয় বাড়ে, তখন কর দিবে।”

বন্দর নগরীর আবর্জনা অপসারণে নতুন প্রকল্প দেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “মাথাপিছু আয় বাড়লে আবর্জনার পরিমাণ বাড়বে। ল্যান্ডফিল, এটা-সেটা করে হবে না। ময়লা থেকে এনার্জি জেনারেশন করতে হবে।

“মেয়র আমাকে নিউমার্কেট, ইপিজেড ও বহদ্দারহাটে আন্ডারপাসের কথা বলেছেন। প্রিলিমিনারি স্টাডি করে দেন। ফিজিবিলিটি করে উপযোগী হলে প্রকল্প পাস করার ব্যবস্থা করব।”

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী মন্ত্রীকে বলেন, “চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে অন্য সিটি করপোরেশনের চেয়ে ভিন্ন ভাবে দেখতে হবে। কারণ আমাদেরকে ৮২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ৫৬টি হেল্থ কমপ্লেক্স, চারটি মাতৃসদন, কম্পিউটার ইনস্টিটিউশনসহ বিভিন্ন জনসেবামূলক কার্যক্রম চালাতে হয়। আমাদের আর্থিক চাপ অনেক বেশি। অতীতের দায়দেনাও আছে। আর্থিক সমস্যা থেকে যাতে আমরা মুক্তি পাই সে বিষয়ে আপনার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।”

অনুষ্ঠানে সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী ১৯৮২ সালের সিটি করপোরেশন অধ্যাদেশ বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে মন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, “আমাদের সময়ে বন্দর, সিডিএ, স্বাস্থ্যসহ সরকারি সংস্থার প্রধানদের অফিসিয়াল কাউন্সিলর করার বিধান ছিল। সে আইন বাতিল হয় ১৯৯৩ সালে। সেটা বহাল করুন। না হলে কোনো কাজের সুফল মিলবে না সমন্বয়ের অভাবে।

“মেয়র ঠুঁটো জগন্নাথ। কেউ উনার কাছে জবাবদিহি করবে না, শুধু ময়লা পরিষ্কার করবে, এভাবে হবে না। যদি তার ক্ষমতা না দেন, তাহলে কেন নির্বাচন করবেন। আপনি প্রধানমন্ত্রীকে বুঝিয়ে অফিসিয়াল কাউন্সিলর পদ পুনর্বহাল করুন।”

চট্টগ্রাম-১১ আসনের সংসদ সদস্য এম এ লতিফ বলেন, “এত কাজ প্রতিটি ওয়ার্ডে হচ্ছে। সাধারণ মানুষের অনেক অবজারভেশন থাকে, সেগুলো শেয়ার করুন। মেয়র মহোদয় ক্লোজলি মনিটর করুন। অনেক ত্রুটির কারণে সুবিধার চেয়ে অসুবিধা বেশি হচ্ছে। ভুক্তভোগীরাই সেটা আপনাকে বলতে পারবে।”

কোনো বাড়ি বা দোকানের সামনে ময়লা পেলে মালিককে জরিমানা করতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “কর্ণফুলীতে প্রতিদিন ৩৫০-৪০০ টন পলিথিন গিয়ে পড়ে। নাব্যতা নষ্ট হচ্ছে। জোয়ার ভাটা হয় প্রতিদিন। সিটি করপোরেশনের বর্জ্যের কারণে দেশ কর্ণফুলীর মত এত বড় সম্পদ হারাবে তা হতে পারে না।

“কিছুদিন আগে ফুটপাতগুলো চাঁদাবাজরা দখলে নিয়েছিল। সারাজীবন যারা চাঁদার উপর নির্ভর করেছে তাদের থেকে শহরকে রক্ষা করতে হলে মেয়রকে আরো শক্ত হতে হবে।”

চট্টগ্রাম-১০ আসনের সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চু বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য সব দায়িত্ব নিয়েছেন। তাই চট্টগ্রামের উন্নয়নে অন্যদেরও মানসিকতার পরিবর্তন এখন প্রয়োজন। পদ্ধতিগত পরিবর্তন আনতে হবে শহরকে আধুনিক ও বাসযোগ্য করতে হলে।”

চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য আবদুচ ছালাম বলেন, “চট্টগ্রামের মানুষের আকাঙ্ক্ষা মন্ত্রী মহোদয় ভালো করে জানেন। চট্টগ্রামের মানুষ যানজটমুক্ত, জলাবদ্ধতা মুক্ত, বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে চট্টগ্রাম চায়। মেয়র মহোদয় আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আগামী ২ বছর বাকি আছে। আমরা যারা সাংসদ, উনার পাশে থেকে সার্বিক সহযোগিতা করব।”

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. শের আলী, চট্টগ্রামে নিযুক্ত ভারতের সহকারী হাই কমিশনার ডা. রাজীব রঞ্জন, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার, প্যানেল মেয়র গিয়াস উদ্দিন, আফরোজা কালাম ও আবদুস সবুর লিটন এবং সিসিসি'র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মো. তৌহিদুল ইসলাম।