কিশোরগঞ্জের হাওরে হচ্ছে ১৫ কিলোমিটার উড়াল সড়ক

এটি হাওর অঞ্চল হিসেবে পরিচিত মিঠামইন, ইটনা ও অষ্টগ্রামের সঙ্গে কিশোরগঞ্জ জেলা সদরের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাবে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Jan 2023, 02:38 PM
Updated : 17 Jan 2023, 02:38 PM

হাওরে সড়ক নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার পর কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে ১৫ কিলোমিটারের বেশি দৈর্ঘ্যের একটি উড়াল সড়ক নির্মাণ করছে সরকার।

এ উড়াল সড়ক মিঠামইন উপজেলার সঙ্গে মিঠামইন সেনানিবাস ও করিমগঞ্জকে সরাসরি সড়ক যোগাযোগের আওতায় আনবে।

পাশাপাশি হাওর অঞ্চল হিসেবে পরিচিত ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলাসহ আশেপাশের হাওর এলাকার সঙ্গে কিশোরগঞ্জ জেলা সদরের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাবে বলে প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে।

মঙ্গলবার এজন্য ৫ হাজার ৬৫১ কোটি টাকার ‘কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলা সদর হতে করিমগঞ্জ উপজেলার মরিচখালী পর্যন্ত উড়াল সেতু নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক।

শেরে বাংলা নগরে পরিকল্পনা কমিশনে এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) এ সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রকল্পের আওতায় একইসঙ্গে কিশোরগঞ্জের নাকভাঙ্গা মোড় থেকে মরিচখালী বাজার পর্যন্ত বিদ্যমান ১৩ দশমিক ৪০ কিলোমিটার সড়কও প্রশস্ত করা হবে।

এদিন একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান জানান, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের নেওয়া এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে সেতু কর্তৃপক্ষ। ২০২৮ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য ধরা হয়েছে।

এটিসহ একনেক বৈঠকে ১০ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ১১টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

Also Read: হাওরে আর সড়ক নয়, মন্ত্রিসভায় নির্দেশনা

Also Read: ইভিএমের প্রকল্প একনেকে উঠেনি, তবে ইসি আশা ছাড়েনি

পানির প্রবাহ যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, সেজন্য হাওর এলাকায় নতুন করে আর কোনো সড়ক নির্মাণ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ২০২২ সালের ১৮ এপ্রিল মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে জানিয়েছিলেন তখনকার মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে হাওর এলাকায় ‘রাস্তাঘাটের বদলে উড়াল সড়ক করার নির্দেশনা দেওয়া হয়’।

মঙ্গলবার প্রকল্পটি নেওয়ার যৌক্তিকতা তুলে ধরে পরিকল্পনা সচিব সত্যজিত কর্মকার বলেন, “এই প্রকল্পের জন্য তেমন কিছু আমদানি করতে হবে না। যে অর্থ ব্যয় করা হবে তা পুরোটাই দেশে এবং দেশি মুদ্রা ব্যয় হবে। অর্থাৎ এই প্রকল্পের জন্য কোনও বিদেশি মুদ্রার প্রয়োজন নেই।”

চলতি অর্থবছরের জন্য মাত্র ৭৪ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আশা করা হচ্ছে আগামী বছরের দিকে অর্থনৈতিক ধীরগতি অনেকটাই কেটে যাবে। প্রকল্পটির মূল অর্থায়ন শুরু হবে আগামী বছর থেকে। তাছাড়া প্রথম বছর এই প্রকল্পের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে। অর্থাৎ আমাদের টাকা আমাদের কাছেই থাকবে। তাই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক শ্লথ এখানে ভূমিকা রাখবে না।”

দেশে উড়াল সড়ক নির্মাণে বেশি ব্যয় ধরা হয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তরে সচিব বলেন, আসলে একেক দেশের ব্যয় একেক ধরনের হয়। মাটির ধরনের উপর নির্ভর করে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়। অনেক সময় বাংলাদেশের সড়ক বা উড়াল সড়ক তৈরির খরচ বেশি, সেটা আবার অন্য দেশে কম হতে পারে। আবার অন্যান্য দেশে বেশি খরচ হয় এমন প্রকল্প বাংলাদেশে কম ব্যয়ে তৈরি হতে পারে।

সচিব জানান, বুয়েটের একটি দলের সমীক্ষার ভিত্তিতে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। আবার পরিবেশ অধিদপ্তরের সমীক্ষায় এ প্রকল্প হাওরের পরিবেশের জন্য বিপর্যয় ঘটাবে না বলে জানানোর পর প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে।

প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়, এ উড়াল সড়ক হলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি ফসল বাজারজাতে উপকার পাবেন কৃষক।

এটি ঢাকা, সিলেট ও অন্যান্য জেলার সঙ্গে কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলের সরাসরি ও নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ নেটওয়ার্ক তৈরিতে ভূমিকা রাখবে।

একনেক পরবর্তী সংবাদ বিফ্রিংয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম, ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য এমদাদুল্লা মিয়া, আইএমইডির সচিব আবুল কাশেম মহিউদ্দিন, আর্থ সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য নাসিমা বেগম এবং পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে অনুমোদন পাওয়া অন্যান্য প্রকল্প

>> চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার শ্রীমাই নদীতে মার্টিপারপাস হাইড্রোলিক এলিভেটর ড্যাম নির্মাণ প্রকল্প; ব্যয় ১৩৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।

>> বরিশাল জেলার কারখানা, বিঘাই এবং পায়রা নদীর ভাঙন থেকে শেখ হাসিনা সেনানিবাস এলাকা রক্ষা প্রকল্প (১ম পর্যায়); ব্যয় ৬৭৬ কোটি টাকা।

>> ঢাকা জেলার দোহার উপজেলাধীন মাঝিরচর থেকে নারিশাবাজার হয়ে মোকসেদপুর পর্যন্ত পদ্মা নদী ড্রেজিং ও বাম তীর সংরক্ষণ (১ম সংশোধনী) প্রকল্প; ব্যয় ৫২৮ কোটি টাকা।

>> এডাপটেশন ইনিশিয়েটিভ ফর ক্লাইমেট ভারনারেবল অফশোর স্মল আইল্যান্ডস অ্যান্ড রিভার চরল্যান্ড ইন বাংলাদেশ; ব্যয় ৭৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।

>> মাতারবাড়ী কয়লানির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প (সওজ অংশ) (২য় সংশোধিত); ব্যয় বাড়ছে ৩৬৪ কোটি ৮১ লাখ টাকা।

>> কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বহুলেন সড়ক টানেল নির্মাণ প্রকল্প; ব্যয় ৩১৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা।

>> স্টাবলিশমেন্ট অব গ্লোবাল মেরিটাইম ডিসট্রেস অ্যান্ড সেফটি সিস্টেম অ্যান্ড ইন্টারগ্রেটেড মেরিটাইম নেভিগেশন সিস্টেম (৩য় সংশোধিত) প্রকল্প; ব্যয় বেড়েছে ৯২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।

>> বাংলাদেশে ২৫টি শহরে অন্তর্ভুক্তিমূলক স্যানিটেশন প্রকল্প; ব্যয় ২ হাজার ২১০ কোটি ৭০ লাখ টাকা।

>> ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যাডপটেড আরবান ডেভলপমেন্ট (ফেজ-২ খুলনা) প্রকল্প; ব্যয় ৪৯১ কোটি ২৮ লাখ টাকা।

>> ঘোড়াশাল চতুর্থ ইউনিট রি-পাওয়ারিং (২য় সংশোধিত) প্রকল্প; ব্যয় বেড়েছে ৯৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।