হাওরে আর সড়ক নয়, মন্ত্রিসভায় নির্দেশনা

পানির প্রবাহ যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, সেজন্য হাওর এলাকায় নতুন করে আর কোনো সড়ক নির্মাণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 April 2022, 10:28 AM
Updated : 18 April 2022, 12:59 PM

সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার দপ্তরে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয় বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান।

বৈঠকের পর সচিবালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করতে এসে তিনি বলেন, “আজ ক্লিয়ার ইনস্ট্রাকশন দিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, হাওর এলাকাতে কোনো রকমের রাস্তাঘাট এখন থেকে আর করা যাবে না। এখন থেকে এলিভেটেড করতে হবে, যদি কিছু হয়; যাতে করে পানি চলাচলে বাধা না আসে।

কিশোরগঞ্জ জেলায় হাওরের বুকে ইটনা থেকে মিঠামইন হয়ে অষ্টগ্রাম পর্যন্ত ২৯.৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক চালু হয় ২০২০ সালের ৮ অক্টোবর। হাওরের বিশাল জলরাশির মাঝখানে সড়কটি এখন আকর্ষণীয় পর্যটনস্থলে পরিণত হয়েছে। শুকনো মৌসুমে হাওরবাসীর চলাচলও সহজ হয়েছে।

কিন্তু এ সড়কের কারণে বর্ষায় পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হওয়ায় পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে বলে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

এখন ওই সড়কে সেতুর সংখ্যা বাড়িয়ে পানি প্রবাহ বাড়ানো যায় কি না, সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে খন্দকার আনোয়ারুল বলেন, “পারটিকুলারলি এটা দেখতে বলা হয়েছে, সিলেটের (অঞ্চল) পানিটা মূলত নামে অষ্টগ্রামের দিক দিয়ে। এখানে যে রাস্তাটা করা হয়েছে মিঠামইন থেকে অষ্টগ্রাম, সেটাতে কোনো এফেক্ট হল কি না- এটাও দেখতে বলা হয়েছে।”

পাশাপাশি সড়ক ও জনপথ বিভাগকে এ বিষয়ে সমীক্ষা চালাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে সচিব বলেন, “প্রতি আধা কিলোমিটার পরপর দেড়শ থেকে দুইশ মিটার ব্রিজ করে দেওয়া যায় কি না…। এখানে এখনও ব্রিজ আছে, তারপরেও তাদের সার্ভে করতে বলা হয়েছে।

“এই সড়ক যেটা তারা করেছে, সেটার কারণে পানি যদি আটকে যায়, তাহলে তারা প্রেফারেবলি আধা কিলোমিটার বা আরেকটু লজিক্যাল ডিসটেন্সে, যদি মনে করে যে এই সড়কটা পানির জন্য বাধা, তাহলে যাতে পানির ফ্লো ঠিক হয়- এজন্য পর্যাপ্ত ব্রিজ করে দেওয়া যায় কি না, সেটা তারা ঠিক করবে।”

উজানের ঢলে এবার সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় অন্তত পাঁচটি ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে বিপুল জমির বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সে প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বছরে প্রায় ৫ হাজার মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয় ওই এলাকায়। কিন্তু ১ থেকে ৬ এপ্রিল হয়েছে ১২০০ মিলিমিটারের বেশি।

“এর ফলে স্বাভাবিকভাবেই উপর (উজান) থেকে পানি চলে এসেছে। প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানে প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার হেক্টর চাষ হয়। আজকেও ডিসিদের সাথে কথা বলেছি। যদি আর বৃষ্টি না হয়, তাহলে ভালো অবস্থায় থাকবে।”

আগামী কয়েক দিন বৃষ্টি না হলে নতুন করে হাওরে ক্ষতি হবে না আশা প্রকাশ করে সচিব বলেন, "হাওরে ৩০ এপ্রিলের মধ্যে মোটামুটি সব ধান কাটা হয়ে যায়, এদিকে একটু দেরিতে হয়। হাওরে এপ্রিলের শেষ থেকে মে মাসের প্রথমেই পানি চলে আসে, এটা আমাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা। আগামী ৮-১০ দিন যদি বৃষ্টি না হয়, আশা করা যায়- কোনো ক্ষতি হবে না।”

আগাম জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে হাওরে ফসল উৎপাদনের ঝুঁকি কমানোর চেষ্টা চলছে বলে জানান খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

তিনি বলেন, “কৃষি মন্ত্রণালয় চেষ্টা করছে এখানে আর্লি ভ্যারাইটি করা যায় কি না, যাতে করে এপ্রিল মাসের ১০-১২ তারিখের দিকেই ধান কেটে ফেলা যায়।“

গত ৫ এপ্রিল সন্ধ্যার আগে পাউবোর প্রকল্পভুক্ত সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার চন্দ্রসোনার তাল হাওরের ডুবাইল বাঁধ ভেঙে ১৮৫ হেক্টর জমির বোরো ধান তলিয়ে যায়। পরদিনই দিরাই উপজেলার চাপতির হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকতে শুরু করে।

৬ এপ্রিল ক্ষতিগ্রস্ত ডুবাইল বাঁধ পরিদর্শন করেন পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম। পরদিন তিনি চাপতি হাওরপাড়ের মানুষদের সঙ্গে কথা বলেন, শোনেন নানা অনিয়মের কথা। সেখানে বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়ার কথা পরে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন উপমন্ত্রী।

রোববার মন্ত্রিসভার বৈঠকে বাঁধ নির্মাণের মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠার কথা জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “পরিকল্পনামন্ত্রী অনুরোধ করেছেন, যে বাঁধগুলো দেওয়া হয়েছে, সেগুলো ফ্রুটফুল কি না বা কোয়ালিটি ঠিক আছে কি না- এটা দেখতে। এই বর্ষায় তো আর কিছু করা যাবে না। আগামী বর্ষার আগে যেন এটা রিভিউ করে সমাধান করা হয়।

“আলোচনা হয়েছে যে, নদী-নালা ও হাওরে যেখানে বেশি পলি পড়ে গেছে, সেগুলোকে পুনঃখনন করে আগামী বর্ষার আগেই প্রকল্প শুরু করে কাজ নেয়ার জন্য। রিসেন্টলি একনেকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্প পাস হয়েছে, সেটি সুনামগঞ্জ থেকে আসবে; সেটিও এলিভেটেড হচ্ছে। শুধু হাওর না যেসব এলাকা লো লাইন এলাকা, সেগুলোতে যতো সড়ক হবে সেগুলো এলিভেটেড হবে।”