রিটার্ন ও আয়কর আদায় বাড়ল ২০ শতাংশের বেশি

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “২০২০ সালে রিটার্ন দাখিল হয়েছিল ২০ লাখের মতো। চলতি অর্থবছরের শেষে গিয়ে এটা প্রায় ৪০ লাখ হতে পারে।”

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Feb 2024, 01:56 PM
Updated : 5 Feb 2024, 01:56 PM

গত জুনে সমাপ্ত করবর্ষে আয়কর রিটার্ন দাখিল আগের বছরের তুলনায় প্রায় ২১ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মু. রহমাতুল মুনিম। এই খাত থেকে রাজস্ব আদায় বেড়েছে ২০ শতাংশের কাছাকাছি।

চলতি কর বর্ষে রিটার্ন দাখিল আরো ১০ শতাংশ বেড়ে ৪০ লাখে উন্নীত হতে পারে বলে আশাবাদী তিনি।

সোমবার ঢাকার অর্থনৈতিক রিপোর্টারদের সংগঠন ইআরএফ এর সঙ্গে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রাক বাজেট আলোচনায় এনবিআর চেয়ারম্যান এই তথ্য দেন।

এনবিআর আয়কর অনুবিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, গত করবর্ষে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ৩৬ লাখ ৬২ হাজার ৮১টি আয়কর রিটার্ন জমা পড়েছে। এর মধ্যে অনলাইনে জমা পড়েছে ৫ লাখ ১৯ হাজার।

এর আগে এনবিআর প্রাথমিক হিসাবে সংখ্যাটি ৩৫ লাখ ৪০ হাজার বলে জানিয়েছিল।

তিনি জানান, এই রিটার্নের বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় ৫ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। আগের বছর এই অঙ্কটি ছিল ৪ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞদের বরাতে গণমাধ্যমে দেশের কর জিডিপির অনুপাত সন্তোষজনক নয় বলে সমালোচনা করা হয়। আমরাও কর জিডিপির অনুপাত বাড়ানোর জন্য নানা রকম কৌশল নিয়ে কাজ করেছি। এখন তার সুফল পাচ্ছি।”

তিনি বলেন, “২০২০ সালে রিটার্ন দাখিল হয়েছিল ২০ লাখের মতো। চলতি অর্থবছরের শেষে গিয়ে এটা প্রায় ৪০ লাখ হতে পারে। মাত্র ৫ বছরে রিটার্ন দাখিল দ্বিগুণে উন্নীত হওয়া বিশাল সফলতা।”

আয়কর আদায় বাড়াতে টিআরপি নিয়োগ ‘হতেই হবে’

রাজস্ব আহরণ বাড়াতে যে কর প্রস্তুতকারক বা টিআরপি কর্মসূচি বাস্তবায়নের কথাও জানান এনবিআর চেয়ারম্যান।

গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর (বিসিএস) অ্যাকাডেমি এই টিআরপি নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয়। পরে সেই বিজ্ঞপ্তির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বাংলাদেশ ট্যাক্স লইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন ও ঢাকা ট্যাকসেস বার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে হাই কোর্টে রিট আবেদন করা হয়।

সেই রিটের শুনানি নিয়ে গত ১৫ জানুয়ারি হাই কোর্ট রুল দিয়ে বিজ্ঞপ্তির কার্যক্রম ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে। রাষ্ট্রপক্ষ সেই আদেশ স্থগিতের আবেদন বাতিলের আবেদন করলে আপিল বিভাগ ১৯ ফেব্রুয়ারি শুনানির তারিখ রেখেছে।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “আমরা যে কোনোভাবে টিআরপি প্রোগ্রামটা করতে চাই। আমাদের অন্য কোনো ওয়ে নাই।”

কর জাল ও প্রত্যক্ষ কর বাড়ানোর লক্ষ্যের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “অনেকে বলেন, গ্রামে-গঞ্জেও এখন প্রচুর কোটিপতি আছে, কর দেওয়ার সক্ষমতা আছে। এ জন্য গ্রামে কর অফিস স্থাপন করতে হবে, লোক নিয়োগ দিতে হবে। কিন্তু আমি জানি না লোকজন ধরে এনে কর আদায় কতটা যৌক্তিক হবে। আমার মনে হয় খুব বেশি বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। আমরা সে জন্যই এই টিআরপি কর্মসূচিটাই জোর দিচ্ছি।”

টিআরপি নিয়োগ হলে আয়কর আইনজীবীদের লাভই হবে জানিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, তারা নতুন করদাতা নিয়ে আসবেন। কয়েক বছর সেই নতুন করদাতারা কিন্তু আয়কর আইনজীবীদের কাছেই যাবেন। তখন তাদেরও আয় বাড়বে।

আইনজীবীরাও টিআরপি হিসেবে কাজ করতে পারবেন বলেও জানিয়ে দেন তিনি।

৩৪টি ক্ষেত্রে রিটার্নে দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং তা আরো বাড়ানো হবে বলেও জানান তিনি। বলেন, বাড়িওয়ালাদেরও এর আওতায় আনার চিন্তা হচ্ছে।

ইআরএফ সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধার উপস্থিতিতে সংগঠনের পক্ষে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন দৌলত আক্তার মালা।

তিনি বলেন, “দেশের অনেক সম্পদশালী দীর্ঘদিন আগের মূল্য দেখিয়ে সম্পদ কর থেকে অব্যাহতি পাচ্ছেন। অথচ এসব সম্পদ যদি বাজার মূল্য অনুযায়ী নির্ধারণ করা হয় তাহলে এ খাত থেকে উল্লেখযোগ্য হারে কর আদায় করা যায়।"

অন্যদিকে যারা নতুন করে সম্পদ কিনছেন তাদের ওপর সম্পদ কর আরোপ করা হচ্ছে। এতে বৈষম্য হওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি 'বাজার মূল্যায়ন পদ্ধতি'তে সম্পদ কর আদায় করার প্রস্তাব করেন।

পাশাপাশি সভায় ইআরএফের পক্ষ থেকে জমি কেনাবেচার সময় কর বা রাজস্ব ফাঁকি রোধে বাজারভিত্তিক জমির মূল্য নির্ধারণ প্রস্তাব করা হয়।

এছাড়া এলডিসি থেকে উত্তরণের সঙ্গে সমন্বয় করে আমদানি শুল্ক নির্ধারণ এবং করমুক্ত আয়ের সীমা পাঁচ লাখ টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাবসহ মোট ১৬টি প্রস্তাব দেয় সংগঠনটি।