বাজেট সহায়তা ‘কমতে পারে’ এক বিলিয়ন ডলার

গেল অর্থবছরে সরকার ৩ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা পেয়েছিল।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Feb 2023, 01:09 PM
Updated : 7 Feb 2023, 01:09 PM

চলতি অর্থবছরের জন্য ২ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা পাওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, গত অর্থবছরে (২০২১-২২) বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীর কাছ থেকে সরকার ৩ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ বাজেট সহায়তা পেয়েছিল। এবার ২ দশমিক ২৩ বিলিয়ন পাওয়া যেতে পারে।

সেই হিসেবে গেল অর্থবছরের থেকে বাজেট সহায়তা কমতে পারে প্রায় এক বিলিয়ন ডলার বা ৩১ দশমিক ৬ শতাংশ।

নোয়াখালী-২ আসনের সংসদ সদস্য মোরশেদ আলমের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে সরকার বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রম নেয়। সংস্কারমূলক এসব কাজ বাস্তবায়নকে ত্বরান্বিত করতে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘বাজেট সাপোর্ট’ শীর্ষক নীতি ঋণ বা পলিসি ক্রেডিট দেয়।

“কাজেই, রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের কারণে সৃষ্টি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সঙ্কটসহ জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার বাজেট সাপোর্ট গ্রহণ করছে– বিষয়টি এরকম নয়; এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া।”

বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ১৫ বিলিয়ন ডলারের ৫৩টি প্রকল্প চলমান রয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী।

ঢাকা-৭ আসনের সদস্য হাজী মো. সেলিমের প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রকল্পগুলোর মধ্যে একটি ২০২২ সালের ১৫ জুন এবং নয়টি ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়েছে। এছাড়া ১০টি আগামী জুনে, ১৪টি ডিসেম্বরে, ১২টি ২০২৪ সালে, ১৩টি ২০২৫ সালে এবং ছয়টি ২০২৬ সালে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

সরকার দলীয় সংসদ সদস্য কাজিম উদ্দিন আহম্মেদ ও আলী আজমের আলাদা প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার বৃদ্ধির কোনো পরিকল্পনা আপাতত সরকারের নেই। বিনিয়োগ পরিস্থিতি বিবেচনা করে সেটি পুনঃনির্ধারণ করা হতে পারে।

আরেক প্রশ্নের জবাবে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, দেশের কৃষির উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃষি সহায়তা’ দেওয়ার জন্য কৃষকদের সুদবিহীন ঋণ দেওয়ার কোনো পরিকল্পনাও সরকারের নেই।

অর্থমন্ত্রী বলেন, চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা শতভাগ অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কাজ করছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে এর আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় সম্ভব হয়েছে বলেও জানান তিনি।

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব খাতে আয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে কর হিসেবে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা আদায় করার লক্ষ্য ধরা হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১২ শতাংশের বেশি।

২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় ৩ লাখ ২০০ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ করা সম্ভব হয়। এর আগে দেশের ইতিহাসে রাজস্ব সংগ্রহ কখনো তিন লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়নি।

নুরন্নবী চৌধুরী শাওনের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, চলতি অর্থবছরে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) পক্ষ থেকে বাংলাদেশের খাদ্য যোগানে কোনো অনুদান পাওয়া যায়নি।

কোন মোবাইল কোম্পানির কাছে কত পাওনা

কুষ্টিয়া- ১ আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম সরওয়ার জাহানের প্রশ্নের জবাবে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার জানান, রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল অপারেটর কোম্পানি টেলিটক বাংলাদেশে লিমিটেডের কাছে সরকারের পাওনা এক হাজার ৬৯৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।

মন্ত্রী বলেন, টেলিটকের কাছে পাওনা টাকার মধ্যে এক হাজার ৫৮৫ কোটি ১৩ লাখ টাকা থ্রিজি স্পেকট্রাম অ্যাসাইনমেন্ট ফি বাবদ, স্পেকট্রাম চার্জ বাবদ ২৭ কোটি ১৫ লাখ টাকা, রেভিনিউ শেয়ারিং বাবদ ৩৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকা এবং এসওএফ বাবদ ৪৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে।

এছাড়া গ্রামীণফোনের কাছ থেকে ১০ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৪ লাখ ৭৬ হাজার ১৩৫ টাকা, রবি আজিয়াটার কাছে ৭২৯ কোটি ২৩ লাখ ৯১ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে সরকারের।

২০২১ সালের নিলামে বরাদ্দ করা তরঙ্গের দ্বিতীয় কিস্তি এবং ২০২২ সালের তরঙ্গ নিলামের ডাউন পেমেন্ট বাবদ বাংলালিংকের কাছে ২৭৩ কোটি ২৫ লাখ ৪১ হাজার ২৯২ টাকা পাওনা রয়েছে সরকারের।

এছাড়া বন্ধ হয়ে যাওয়া সিটিসেলের কাছে ১২৮ কোটি ৬ লাখ ৯৮ হাজার ৩২৩ টাকা পাওনা রয়েছে বলে জানান মোস্তফা জব্বার।

সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মোহম্মদ হাবিব হাসানের প্রশ্নের জবাবে মোস্তাফা জব্বার বলেন, গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিটিআরসির ইস্যু করা বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং বা কলসেন্টার রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেটধারী কোম্পানির সংখ্যা ১৭৯টি। এর মধ্যে কাজে আছে ৬৮টি কল সেন্টার। এর ৪৫টি আন্তর্জাতিক কল সেন্টার এবং ২৩টি কল সেন্টার অভ্যন্তরীণ সেবা দেয়।

চট্টগ্রাম ১১ আসনের সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে মোস্তাফা জব্বার বলেন, প্রতিবেশী দেশ ভারতে ব্যান্ডউইথ রপ্তানি হয়।

“ভারতের সঙ্গে আইপি ট্রানজিট লিজ প্রদান সংক্রান্ত একটি চুক্তি ২০১৫ সালের ৬ জুন স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী দেশটির পূর্বাঞ্চলের প্রদেশগুলোর জন্য প্রাথমিকভাবে ১০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ লিজ দেওয়া হয়।”

বাংলাদেশ সাবমেরিক কেবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল) বর্তমানে ভারতের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি বিএসএনএলকে ত্রিপুরায় ২০ জিবিপিএস ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ রপ্তানি করছে বলে জানান মন্ত্রী।

মঙ্গলবার বিকালে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের অধিবেশন শুরু হয়। প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপিত হয়।