অর্থনীতির ‘সব সূচকেই উন্নতি’ দেখছেন অর্থমন্ত্রী

মহামারীর ধাক্কা সামলে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির প্রতিটি সূচকে ‘ইতিবাচক পরিবর্তন’ এসেছে বলেই মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 May 2021, 02:43 PM
Updated : 19 May 2021, 02:43 PM

বুধবার অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত এবং সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তার এমন মন্তব্য আসে।

মন্ত্রী বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহামারীর মধ্যে অর্থনীতি সচল রাখতে সাহসী পদক্ষেপগুলো নিয়েছেন, স্টিমুলাস প্যাকেজগুলো দিয়েছেন। যে কারণে সামষ্টিক অর্থনীতির গতিধারার প্রতিটি সূচকেই উন্নয়ন হয়েছে। সে কারণেই মাথাপিছু আয় বেড়েছে।

“সবার কাছে টাকা পৌঁছে গেছে। যারা চাকরি হারিয়েছে, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সবাইকে দেখাশোনা করা হয়েছে। এগুলো করার কারণে মানি সাপ্লাই অনেক বেশি। মানুষের কাছে টাকা পয়সা আছে। গ্রামের অর্থনীতি বড় হচ্ছে। কোনোটাতেই নেগেটিভ ইস্যু নাই। সারাবিশ্বে এমন চিত্র বিরল।”

পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে জানান, দেশে মাথাপিছু আয় ১৬৩ ডলার বেড়ে চলতি অর্থবছরে ২ হাজার ২২৭ ডলার হয়েছে, যা গত অর্থবছর ছিল ২ হাজার ৬৪ ডলার। অর্থাৎ মহামারী পরিস্থিতির মধ্যেও এ বছর মাথাপিছু আয় বেড়েছে।

অথচ মহামারীর সঙ্কটে বহু মানুষ কাজ হারানোয় নতুন করে অনেকে দারিদ্রসীমার নিচে নেমে যাচ্ছেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে আসছিলেন অর্থনীতিবিদরা। অর্থমন্ত্রী তখন দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বুঝতে বিবিএসের জরিপের অপেক্ষায় থাকার কথা বলেছিলেন।

বিবিএসের জরিপ থেকে দেশের সার্বিক অর্থনীতির চিত্র তুলে ধরে বুধবার তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি এখন ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ; এটা ‘আগের মতই’ আছে। চলমান সঙ্কটের মধ্যেও অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে ৩২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে; প্রবৃদ্ধি রয়েছে ৮ দশমিক ৭ শতাংশ।

মন্ত্রী তথ্য দেন, চলতি অর্থবছরের ১১ মাসেই রেমিটেন্স ২২ বিলিয়ন হয়ে গেছে; প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪০ শতাংশ।

গত জুনে রিজার্ভ যেখানে ৩৬ বিলিয়ন ডলার ছিল; এখন সেটা ৪৪ বিলিয়ন ডলারে রয়েছে। কিছুদিন আগে রিজার্ভ ৪৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়ালেও আমদানি ব্যয় মেটাতে পরে কমে যায়। আগামী অর্থ বছরে এর পরিমাণ ৫০ বিলিয়ন ডলার স্পর্শ করবে বলে আশা করছেন মুস্তফা কামাল। 

তিনি বলেন, ‘নন পারফর্মিং’ লোন অনেক কমে এসেছে। এখন এ ধরনের বাজে ঋণের পরিমাণ মোট ঋণের ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ। গতবছর জুনে তা ৯ দশমিক ১৬ শতাংশ এবং ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ১০ দশমিক ৩১ শতাংশ ছিল।

ব্যাংক ঋণে সুদের হারও কমে এসেছে; এখন গড় সুদ হার ৭ দশমিক ৪ শতাংশে রয়েছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ২০২০ সালের জুনে পুঁজিবাজারের মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন যেখানে ৩ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা ছিল, এখন তা বেড়ে ৪ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা হয়েছে। দৈনিক টার্নওভার ৩৫৮ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৫৮৯ কোটি টাকা হয়েছে।

“এপ্রিল মাস পর্যন্ত জাতীয় রাজস্বের প্রবৃদ্ধি হচ্ছে ১১ দশমিক ৮ শতাংশ। এটা নিয়ে আমরা সব সময় বিচলিত ছিলাম। ব্যালেন্স অব পেমেন্ট সব সময় নেগেটিভ ছিল। এখন আমাদের প্রায় সারপ্লাস আছে ৬ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ডলার। গত বছর এই সময় ছিল মাত্র ২ বিলিয়ন ডলার।

মন্ত্রী বলেন, “আমাদের কারেন্ট অ্যাকাউন্টও এখন সারপ্লাস। গত বছর ছিল দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার ঘাটতি ছিল। এটা এখন ১ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন। এভাবে অর্থনীতির প্রতিটি খাতেই আমরা ভালো করছি।”