ব্যাংকগুলোর ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা বাড়তে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ব্যাংকগুলোর নগদ জমা সংরক্ষণের হার (সিআরআর) ১ শতাংশ পয়েন্ট কমানো হয়েছে, যা কার্যকর হবে ১৫ এপ্রিল থেকে।
সেই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের রেপো সুদহার শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ পয়েন্ট কমিয়ে ৫ দশমিক ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। এ নির্দেশনা ১২ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে।
বৃহস্পতিবার বিকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আলাদা দুটি সার্কুলারে এ নির্দেশনা জারি করে।
করোনাভাইরাস সঙ্কেটে বাজারে অর্থ সরবরাহ বাড়াতে গত ২৩ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংক রেপো সুদহার ৬ শতাংশ থেকে দশমিক ২৫ শতাংশ পয়েন্ট কমিয়ে ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ করেছিল, যা ২৪ মার্চ থেকে কার্যকর হয়।
বৃহস্পতিবার তা আরও দশমিক ৫০ শতাংশ পয়েন্ট কমিয়ে ৫ দশমিক ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হল।
অন্যদিকে ২৩ মার্চ আরেক সার্কুলারে ব্যাংকগুলোর নগদ জমা সংরক্ষণের হার (সিআরআর) দ্বি-সাপ্তাহিক গড় ভিত্তিতে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ পয়েন্ট কমিয়ে ৫ শতাংশ এবং দৈনিক ভিত্তিতে ন্যূনতম ৫ শতাংশ থেকে দশমিক ৫ শতাংশ পয়েন্ট কমিয়ে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার দুই ক্ষেত্রে তা ১ শতাংশ পয়েন্ট কমিয়ে যথাক্রমে ৪ শতাংশ এবং ৩ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রেপো সুদহার কমানোর ফলে ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে রেপোর মাধ্যমে যে নগদ টাকা নেয় তার সরবরাহ বাড়বে। এতে বাজারে তারল্য বাড়বে।
“অপরদিকে সিআরআর কমানোর ফলে ব্যাংকগুলোকে এখন আগের থেকে কম টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নগদ জমা রাখতে হবে। এতেও বাজারে তারল্যের যোগান বাড়বে।”
প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের জন্যই রেপো সুদহার ও সিআরআর কমানো হয়েছে বলে জানান সিরাজুল ইসলাম।
গত ৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাঁচটি প্যাকেজের আওতায় মোট ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন। এ প্রণোদনার পুরোটাই বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে কম সুদে ঋণ হিসেবে দেওয়ার কথা।
সেই পেক্ষাপটে ব্যাংকগুলোর ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন অর্থনীতির গবেষক ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর।
তবে রেপো সুদহার ৪ শতাংশে নামিয়ে আনলে ‘আরও ভালো হত’ মন্তব্য করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমি মনে করি অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সংকট মোকাবিলায় সরকার সঠিক পথেই আছে। তবে একটা বিষয়ে আমি সরকারের শীর্ষ মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। এই তহিলের ঋণ যেন কোনো খেলাপির হাতে না যায়।
“যারা বিশেষ সুবিধা নিয়ে ঋণ পুনঃতফসিল করেছেন, যাদের ঋণ রাইট অফ (অবলোপন) করা হয়েছে এবং আদালতে যাদের মামলা বিচারাধীন, তারা যেন এই প্যোকেজ থেকে একটি পয়সাও ঋণ না পায়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। আর তা করা হলেই প্রণোদনা প্যাকেজের সুফল পাবে বাংলাদেশ।”
৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী তৈরি পোশাক শিল্প কারখানার শ্রমিকদের বেতন-ভাতার জন্য আগে ঘোষিত ৫ হাজার কোটি টাকার তহবিলের সঙ্গে নতুন চারটি প্যাকেজে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সার্ভিস সেক্টর, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন ঋণ সুবিধা,এক্সপোর্ট ডেভলপমেন্ট ফান্ডের (ইডিএফ) সুবিধা বৃদ্ধি এবং প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট রিফাইন্যান্স স্কিম চালুর ঘোষণা দেন।