আঞ্চলিক বিদ্যুৎ গ্রিড: কর্মপন্থা খোঁজার আলোচনায় বিমসটেক

বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলে বিদ্যুৎ গ্রিডের আঞ্চলিক সংযোগ তৈরির কর্মপন্থা ঠিক করতে আলোচনায় বসেছেন বিমসটেক দেশগুলোর বিশেষজ্ঞরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Feb 2020, 09:41 AM
Updated : 25 Feb 2020, 09:41 AM

আঞ্চলিক পর্যায়ে জ্বালানি সহযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে মঙ্গলবার ঢাকায় বিমসটেক সচিবালয়ে শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলন।

সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, “আজকের অনুষ্ঠানে আলোচনা হচ্ছে আমাদের গ্রিড কীভাবে কানেক্ট করা যায়।

”দুই-তিন হাজার কিলোমিটারের এই এলাকায় যদি একটি কানেকটিভিটি হয়, তাহলে সবগুলো দেশের সক্ষমতা বাড়বে। সক্ষমতা বাড়ার অর্থ হল গ্রাহকের জন্য দাম কম হবে।”

এ অঞ্চলের দেশগুলোর বিদ্যুৎ গ্রিড পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হলে চাহিদা অনুযায়ী আমদানি-রপ্তানির দ্বার উন্মুক্ত হবে বলেও মন্তব্য করেন তৌফিক-ই-ইলাহী।

ঢাকায় মঙ্গলবার ‘বিমসটেক অঞ্চলে জ্বালানি সহযোগিতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক দুইদিনের সম্মেলনে প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

“যেমন নেপাল থেকে যদি আমরা জলবিদ্যুৎ আনি, বর্ষা-গ্রীষ্মের সময় নেপাল যখন বিদ্যুৎ দিতে পারবে, তখন আমাদের চাহিদা বেশি। আবার শীতে নেপালের উৎপাদন কম, শীতে ওদের প্রয়োজন বেশি হয়। কাজেই আমরা তখন ওখানে রপ্তানি করতে পারব।

“এভাবে যদি একে অন্যের পরিপূরক হতে পারি, তাহলে বিদ্যুৎ সক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহার ও লোড ফ্যাক্টর ইউটিলাইজেশনের পাশাপাশি আমাদের গ্রাহকদের জন্য বিদ্যুতের দামও কমবে।”

আঞ্চলিক গ্রিডের স্থিতি ও স্থায়িত্বের উপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, “আমরা চাই, আমাদের শিল্প-বাণিজ্যে মানসম্মত বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। ভোল্টেজ ভালো হবে, বিদ্যুৎ বাধাগ্রস্ত হবে না। আমরা যদি আন্তঃ সংযোগ তৈরি করতে পারি, তাহলে আমাদের বিদ্যুতের মানও ভালো হবে।”

আঞ্চলিক পর্যায়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের উপায় ঠিক করার পাশাপাশি উৎপাদনে বিনিয়োগের পথ উন্মোচনের আহ্বান জানান তৌফিক-ই-ইলাহী।

গ্রিডের আন্তঃসংযোগের গুরুত্ব তুলে ধরে বিমসটেক মহাসচিব এম শহীদুল ইসলাম বলেন, এর ফলে বিভিন্ন দেশ তার প্রয়োজনে আমদানিও করতে পারে, রপ্তানিও করতে পারবে।

”তার মানে হচ্ছে, এক দেশ শুধুই রপ্তানি করবে অথবা শুধুই আমদানি করবে- এমন কথা থাকবে না। যার যখন সুবিধা… কারও যদি শীতকালে আমদানি করা বেশি দরকার হয়, সে আমদানি করবে। যার গরমকালে রপ্তানি করার সুযোগ থাকে, সে দেশ তা করবে।”

সঞ্চালন ও বিতরণের আলোচনার পাশাপাশি উৎপাদনের বিষয়ে কর্মপন্থা ঠিক করার আলোচনা চলছে জানিয়ে শহীদুল বলেন, “গ্রিড ইন্টারকানেকশন যদি আঞ্চলিকভাবে বড় ধরনের হয়, তাহলে এখানে বিদ্যুৎ ‍উৎপাদনে বিনিয়োগ সহজ হবে। এই অঞ্চলের মধ্য থেকে বিনিয়োগ আসতে পারে, বাইরে থেকেও আসতে পারে।”

ঢাকায় মঙ্গলবার ‘বিমসটেক অঞ্চলে জ্বালানি সহযোগিতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক দুইদিনের সম্মেলনে আঞ্চলিক শক্তি সহযোগিতা এবং সীমান্তের জ্বালানি বাণিজ্যের সম্ভাবনা শীর্ষক প্রতিবেদনের মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিরা। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

’বিমসটেক গ্রিড ইন্টারকানেকশন’ স্থাপনে ২০১৮ সালে সাত সদস্য দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার কথা তুলে ধরে মহাসচিব বলেন, ”তাতে তাদের শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত হয়। এর পরবর্তী ধাপ হল, কারিগরি পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা করে কীভাবে এই চুক্তির ধারাগুলো বাস্তবায়ন করা হবে।”

তিনি জানান, ইতোমধ্যে ‘বিমসটেক গ্রিড ইন্টারকানেকশন কমিটি’ গঠন করা হয়েছে। সদস্য দেশগুলোর বিদ্যুৎ খাতের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত এই কমিটি শিগগিরই প্রথম বৈঠকটি করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।

“প্রথম মিটিংটা হলে তারা বুঝতে পারবেন এখানে কী কী করতে হবে। নতুন ট্রান্সমিশন লাইনের প্রয়োজন থাকতে পারে, এমন হতে পারে যে ট্রান্সমিশন লাইন আছে, কিন্তু আইন-কানুনের এবং টেকনিক্যাল হারমোনাইজেশন দরকার, সেটার উপরে তারা জোর দিতে পারে।”

বিমসটেক ও সাউথ এশিয়া রিজিওনাল ইনেশিয়েটিভ ফর এনার্জি ইনটিগ্রেশন (এসএআরআই/ইএ) যৌথভাবে ‘বিমসটেক অঞ্চলে জ্বালানি সহযোগিতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে।

বিমসটেকের সাত সদস্য দেশ এবং অন্যান্য দেশের আমন্ত্রিত বিশেষজ্ঞরা দুই দিনের সম্মেলনে চারটি কর্ম-অধিবেশনে আলোচনায় অংশ নেবেন।