১২ লাখ চিহ্নিত, আয়কর না দিলে ব্যবস্থা: এনবিআর

নতুন এক জরিপের মাধ্যমে আয়কর দিতে সক্ষম, এমন ১২ লাখ ব্যক্তিকে চিহ্নিত করেছে  জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Oct 2019, 04:00 PM
Updated : 13 Oct 2019, 04:00 PM

এই ব্যক্তিরা এবছর আয়কর না দিলে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া।

রোববার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বৈঠকে তার এই হুঁশিয়ারি আসে।

এই সভায় রাজস্ব আদায় বাড়াতে এনবিআরকে তাগিদ দেন অর্থমন্ত্রী।

বাংলাদেশে এখন ই-টিআইএনধারীর সংখ্যা ৩৮ লাখের উপরে হলেও গত বছর তার মধ্যে ২২ লাখ আয়কর বিবরণি জমা দিয়েছিলেন।

গত বছর আয়কর আদায় আগের বছরের চেয়ে ২৭ শতাংশ বাড়লেও তা আরও বাড়াতে চায় সরকার।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “আমাদের দেশে আয়করের ভিত্তি খুবই কম, তা পরে কেউ বাড়ায় না। এ জন্য আমরা একটি জরিপ পরিচালনা করেছি। এ পর্যন্ত আমরা প্রায় ১২ লাখের মতো নতুন টিআইএন নম্বর ধার্য করেছি। তাদের তথ্য আনা হয়েছে এবং তাদেরকে এ বছর আয়কর দাখিলের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

“এই বিপুল সংখ্যক নতুন টিআইএনধারী ‍যদি আয়কর প্রদান না করেন, তাহলে পরবর্তী সময়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।“

আয়কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হওয়ায় এবার কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও জানান মোশাররফ।

“অনেকে আছেন আয়কর দেন, কিন্তু রিটার্ন দাখিল করেন না। এবার তাদের সবাইকে রিটার্ন দাখিল করাতে আমাদের কর কমিশনাররা প্রস্তুতি নিয়েছেন। এজন্য অনেক কর্মকর্তাও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি, আগামী নভেম্বর মাসের মধ্যে কমপক্ষে ৩০ লাখ লোক আয়কর রিটার্ন দাখিল করবেন।”

চলতি অর্থবছরে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন নিয়ে মাঠ কর্মীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অর্থমন্ত্রীর এই সভায় ‍তুলে ধরেন এনবিআর চেয়ারম্যান।

তিনি বলেন, “নতুন ভ্যাট আইনের ফলে কিছু কিছু লোক বা ব্যবসায়ীর মধ্যে অব্যাহতিতে চলে যাওয়ার একটা প্রবণতা আমরা লক্ষ্য করেছি। অনেক বলছেন, আমার বার্ষিক টার্নওভার ৫০ লাখ টাকার কম, তাই আমার ট্যাক্স দিতে হবে না। আবার অনেকে ৪ শতাংশ করসীমার মধ্যে থাকতে ৩ কোটি টাকার টার্নওভারের মধ্যে থাকতে চেয়েছে।”

ভ্যাট আদায় সহজ করতে এবং স্বচ্ছতা রাখতে ইলেকট্রিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) মেশিন চালু করছে সরকার।

তবে এই প্রক্রিয়া দীর্ঘ মেয়াদী উল্লেখ করে মোশাররফ বলেন, ইতোমধ্যে দুজন ঠিকাদারের মাধ্যমে ২০ হাজার মেশিন আমদানির আদেশ দেওয়া হয়েছে। নতুনভাবে আরও ৫ লাখ মেশিন আমদানির জন্য দরপত্র আহ্বান করা হবে।

ভ্যাট আদায়ে এ পর্যন্ত ২ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি আছে বলে সভায় জানান ভ্যাট বাস্তবায়ন সদস্য জামাল হোসেন।

তিনি বলেন, ইএফডি মেশিন স্থাপিত হয়ে গেলে কর আহরণ পুরোদমে শুরু হবে। তখন আরও বাড়বে।

অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামের কাস্টমস কমিশনার ফখরুল আলম জানান, চলতি অর্থবছরে প্রথম মাস জুলাইয়ে কাস্টমস আয় ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও আগস্ট মাসে আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ১৬ শতাংশ কমে যায়। তবে গত সেপ্টেম্বর মাসে প্রায় ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। সবমিলে এখন পর্যন্ত গত অর্থবছরের প্রায় সমান অর্থ আদায় হয়েছে। আগামী মাসগুলোতে আদায় বাড়িয়ে লক্ষ্য পূরণ করা যাবে বলে আশা করা যায়।

তিনি বলেন, “সরকার বিদেশি তৈরী পণ্যের উপর বেশি করারোপ করায় এখন কাঁচা পণ্য বেশি আমদানি হচ্ছে। যেমন সয়াবিন তেলের পরিবর্তে এখন সয়াবিনের দানা আমদানি বেশি হচ্ছে। আবার পেট্রোলিয়ামের আমদানি কমেছে, এলএনজি ও এলপিজি আমদানি বেড়েছে। তাই শুল্ক আহরণ কিছুটা কমেছে।”

কর প্রশাসন সদস্য কালিপদ হালদার জানান, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আছে। আরও প্রবৃদ্ধি চাইলে প্রবাসীদের আয়ে কিছুটা কর বসানো যায়।

মন্ত্রীর উদ্দেশে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “স্যার, আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই যে এনবিআর কর্মকর্তারা রাজস্ব আহরণের টার্গেট পূরণে আগের চেয়ে অনেক বেশি তৎপরতা দেখাচ্ছেন।

“এজন্য আমি শক্ত এবং নরম, দুটো অ্যাকশন নিচ্ছি। নরম হচ্ছে তাদের প্রাপ্য যা আছে আমি দিয়ে দিচ্ছি, যেমন- পদোন্নতিসহ আরও যা যা পাওনা আছে সেগুলো। আর শক্ত হচ্ছে কারও কোনো অবহেলা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশনও নিচ্ছি।”