অফশোর ব্যাংকিং বিল পাস

আইনটির সুবিধা আর অসুবিধাগুলো তুলে ধরার আহ্বান জানান জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 March 2024, 02:33 PM
Updated : 5 March 2024, 02:33 PM

আইনি কাঠামোর মধ্য দিয়ে দেশে অফশোর ব্যাংকিংয়ের সুযোগ তৈরি করতে বিল পাস হয়েছে জাতীয় সংসদে।

অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী মঙ্গলবার সংসদে ‘অফশোর ব্যাংকিং বিল–২০২৪’ পাসের জন্য উত্থাপন করেন। পরে বিলটি স্পিকার ভোটে দিলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।

এর আগে বিলটির জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি করা হয়।

বিলটি নিয়ে সমালোচনা করে বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, “অফশোর ব্যাংকিং সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণা নেই। আইনটি আগে ছিল না। উদ্দেশ্য ও কারণে বিস্তারিত থাকলে আমরা বলতে পারতাম। আমার মনে হয় না সরকার ও বিরোধী দলের এমপিদের আইনটি সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা আছে।”

আইনটির সুবিধা আর অসুবিধাগুলো তুলে ধরার আহ্বান জানান জাতীয় পার্টির এই সংসদ সদস্য।

চুন্নু বলেন, “অফশোর ব্যাংকের মূল উদ্দেশ্য ছিল সমুদ্র দূরবর্তী তীরে বাহামা দ্বীপের মত দ্বীপে সেখানে বড় বড় চোরারা, রাঘব-বোয়ালরা, রাষ্ট্র নায়কেরা, চোরকারবারিরা অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে হালাল করে তারপর বিদেশে ট্রান্সফার করত। বাংলাদেশেরও কোনো কোনো ব্যক্তির নাম এসেছে পত্রিকায়।

“তারাও অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা হালাল করে, বিদেশে বাড়ি করেছেন, হোটেল করেছেন। যে সমস্ত চোরারা বাংলাদেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছে তারা যদি এ ফাঁকে কর ছাড়া টাকা ফেরত আনেন ভালো। টাকা পাচারকারীরা ফেরত আনবে বলে মনে হয় না।”

অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাচার বাড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ।

জাতীয় পাটির সংসদ সদস্য মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী ও হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদও সমালোচনা করেন বিলটি নিয়ে।

এতদিন আইন না থাকলেও অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে দেশে অফশোর ব্যাংকিং চালু আছে ১৯৮৫ সাল থেকে। পরে ২০১৯ সালে অফশোর ব্যাংকিং নীতিমালা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপর কয়েকটি প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়। এখন এ বিষয়ে আইন করা হচ্ছে।

বিলে বলা হয়েছে, অফশোর ব্যাংকিংয়ে বিদেশের বিভিন্ন উৎস এবং অনুমোদিত বিশেষায়িত অঞ্চলে পরিচালিত শতভাগ বিদেশি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদিত উৎস থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় তহবিল নেওয়া যাবে।

এ আইনে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন সময়ে দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী অনিবাসী বা ক্ষেত্রমত বাংলাদেশে নিবাসী ব্যক্তির সঙ্গে পরিচালিত ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে।

রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল, বেসরকারি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল, অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাইটেক পার্কসমূহের শতভাগ বিদেশি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে আমানত গ্রহণ করতে পারবে। পাশাপাশি অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট তাদের স্বল্প মেয়াদি ঋণ ও অগ্রিম বা বিনিয়োগ, ঋণপত্র ও গ্যারান্টি সুবিধা প্রদান, বিল ডিসকাউন্টিং, বিল নেগোশিয়েটিং এবং অন্যান্য বৈদেশিক বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট বহি:লেনদেন সেবা প্রদান করতে পারবে।

বিলে বলা হয়েছে, অনিবাসী বাংলাদেশি, বিদেশি ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট আমানত ও ঋণ গ্রহণ করতে পারবে।

অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট যেকোনো অনুমোদিত বৈদেশিক মুদ্রায় হিসাব পরিচালনা করতে পারবে বলেও বিলে বলা হয়েছে। এ ব্যবসায় অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের আমানতকারী বা বৈদেশিক ঋণদাতাদের প্রদেয় সুদ বা মুনাফা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করমুক্ত থাকবে। আমানতকারী বা বৈদেশিক ঋণদাতাদের হিসাব যেকোনো প্রকাশ শুল্ক ও লেভি মুক্তও হবে।

অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার আলোকে সংশ্লিষ্ট তফসিলি ব্যাংকের পর্ষদের অনুমোদিত নীতিমালা থাকতে হবে। তফসিলি ব্যাংকের অফশোর কার্যক্রমের জন্য পৃথক হিসাবপত্র সংরক্ষণ করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ অনুমোদনে অভ্যন্তরীণ ব্যাংকিং ইউনিট থেকে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটে তহবিল স্থানান্তর করা যাবে।

পুরনো খবর

Also Read: অফশোর ব্যাংকিং বিল সংসদে উপস্থাপন

Also Read: অফশোর ব্যাংকিংয়ে লেনদেন করা যাবে ৫ বিদেশি মুদ্রায়