প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ ও প্রতিবেদকের ভাষ্য

এ কোম্পানির অভিযোগ, “অসম্পূর্ণ অনুসন্ধান ও শব্দের ভুল চয়ন ও ব্যবহারের কারণে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে এবং এ কে খান এন্ড কোম্পানি লিমিটেডের নাম ও অবস্থান ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে।”

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 May 2023, 04:00 PM
Updated : 29 May 2023, 04:00 PM

‘চট্টগ্রামের কোল্ড স্টোরেজ থেকে ২৫ টন জাটকা জব্দ, আটক ১’ শিরোনামে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের প্রতিবাদ জানিয়েছে এ কে খান অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড।

কোম্পানির চিফ অপারেটিং অফিসার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সানাউল হক খান স্বাক্ষরিত প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়েছে, গত ২১ মে প্রকাশিত প্রতিবেদনে “অসম্পূর্ণ অনুসন্ধান ও শব্দের ভুল চয়ন ও ব্যবহারের কারণে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে এবং এ কে খান এন্ড কোম্পানি লিমিটেডের নাম ও অবস্থান ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে।”

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্তের বরাতে ওই প্রতিবেদনে “মাঝিরঘাটে ‘একে খান কোল্ড স্টোরেজে’ অভিযান চালিয়ে ২৫ টন জাটকা জব্দ করা হয়” লেখা হয়েছিল।

ওইদিন কোল্ড স্টোরেজের ম্যানেজার চন্দন দেকে আটক করে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়, সে কথাও প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল।

এ কে খান কোম্পানি তাদের প্রতিবাদলিপিতে বলেছে, “প্রকৃত বক্তব্য এই যে, মেসার্স রেশমী ফিশ ট্রেডার্স নামক প্রতিষ্ঠানটি চুক্তি ভিত্তিতে এ কে খান এন্ড কোম্পানি লিমিটেডের একটি হিমাগার ভাড়া নিয়ে তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন প্রকারের মাছ সংরক্ষণ এবং পরিচালনা করে আসছে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী উক্ত হিমাগারটি সম্পূর্ণরূপে ভাড়াটিয়া মেসার্স রেশমী ফিশ ট্রেডার্স এর নিয়ন্ত্রণাধীন থাকাকালীন সময়ে, গত ২০শে মে, ২০২৩ তারিখে ভ্রাম্যমাণ আদালত কর্তৃক জাটকা ইলিশ জব্দ করা হয়।

“যেহেতু উক্ত হিমাগারটি বহুদিন যাবত সাধারণ জনগণের কাছে ‘এ কে খান কোল্ড স্টোরেজ’ নামে পরিচিত, সেহেতু এ কে খান এন্ড কোম্পানি লিমিটেডের হিমাগার থেকে জাটকা ইলিশ জব্দ করা হয়েছে মর্মে ভুলভাবে সংবাদ প্রকাশিত হয়, যেখানে এ কে খান এন্ড কোম্পানি কোনরকম মাছ ধরা বা সংরক্ষণ এর ব্যবসায় নিয়োজিত নয়।

“এই বেআইনি কাজের সম্পূর্ণ দায়-দায়িত্ব রেশমী ফিশ ট্রেডার্সের, তবে অসম্পূর্ণ অনুসন্ধান এর ভিত্তিতে প্রতিবেদনটিতে এ কে খান এন্ড কোম্পানি লিমিটেডের নাম প্রকাশিত হয়।”

প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, “এ কে খান এন্ড কোম্পানি সর্বদা দেশের আইন-কানুন যথাযথভাবে মেনেই ব্যবসা পরিচালনা করছে। প্রতিবেদনটিতে কোম্পানির নামটি ভুলভাবে উপস্থাপনের ফলে কোম্পানির সুনাম ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ও জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। কোল্ড স্টোরেজ ভাড়া প্রদানকারী হিসেবে ভাড়াটিয়া কর্তৃক সংঘটিত অপরাধের দায় কোনোভাবেই এ কে খান এন্ড কোম্পানির উপর বর্তায় না।”

প্রতিবেদকের বক্তব্য

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, “জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত জানান, শনিবার রাতে মাঝিরঘাটে ‘এ কে খান কোল্ড স্টোরেজে’ অভিযান চালিয়ে ২৫ টন জাটকা জব্দ করা হয়।

“ওই সময় কোল্ড স্টোরেজের ম্যানেজার চন্দন দে আটক করা হয় এবং তাকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।”

এখানে কোম্পানির নাম আসায় এ কে খান কর্তৃপক্ষের আপত্তি। অথচ ওই হিমাগারের মালিক যে এ কে খান এন্ড কোম্পানি, সে কথা প্রতিবাদলিপিতেও স্বীকার করা হয়েছে।

ওই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত তথ্য চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্তের দেওয়া, প্রতিবেদকের নিজস্ব কোনো অনুসন্ধান সেখানে নেই।

মাঝিরঘাট এলাকায় অবস্থিত হিমাগারটির চারটি স্টোরেজের একটি রেশমী ফিস ট্রেডার্সের কাছে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। বাকি তিনটি অন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে ভাড়া দেওয়া।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, হিমাগারটির চারটি স্টোরেজ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মেয়াদে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে মাছ সংরক্ষণের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়।

এ কে খান কর্তৃপক্ষের প্রতিবাদের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অভিযান চলাকালে তিন থেকে চার ঘণ্টা সময়ে এ কে খান কোল্ড স্টোরেজের ম্যানেজার চন্দন দে ভাড়া দেওয়ার কোনো কাগজপত্র ভ্রাম্যমাণ আদালতকে দেখাতে পারেননি। ভাড়া দেওয়ার পর ভাড়াটিয়ার অবৈধ কার্যক্রমের দায়ও তার ঘাড়েই বর্তায়।”

সেখানে রেশমী ট্রেডার্সের কোনো নথি ‘ছিল না’ জানিয়ে প্রশাসনের এই কর্মকর্তা বলেন, “একে খান কোল্ড স্টোরেজের ম্যানেজার চন্দন দেকে আটক করেই পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের নথিতেও তা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ আছে।”

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে এ কে খান কোম্পানির চিফ অপারেটিং অফিসার সানাউল হক খান সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের নিজস্ব কোনো মাছ ছিল না। চুক্তির ভিত্তিতে রেশমী ফিসকে ভাড়া দেওয়া হয়েছিল, দায় তাদেরই।”

এ কে খান কোম্পানির কর্মীকে আটক ও জরিমানার বিষয়ে তিনি বলেন, “ওই প্রতিষ্ঠানের (রেশমী ফিস) কেউ না থাকায় তাকে (কোল্ড স্টোরেজের ম্যানেজার চন্দন দে) আটক করলেও জরিমানার টাকা রেশমী  ফিসের লোকজনই দিয়েছে। সুতরাং জরিমানা আমাদের করা হয়নি।”

রেশমী  ফিস ট্রেডার্সের সাথে এক বছরের চুক্তি থাকলেও তা বাতিল করার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান সানাউল হক খান।