চট্টগ্রামে সমবায় মার্কেটে আগুন পরিকল্পিত, অভিযোগ দোকানিদের

যাদের দিকে অভিযোগ সেই ইসলামাবাদ টাউন কো-অপারেটিভ ক্রেডিট সোসাইটি তা অস্বীকার করেছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Feb 2023, 01:55 PM
Updated : 22 Feb 2023, 01:55 PM

চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা সমবায় মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের পেছনে ষড়যন্ত্র দেখছেন ব্যবসায়ীরা; তাদের অভিযোগ পরিকল্পিতভাবে মধ্যরাতে তা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে।

রাতের আগুনে প্রাণ গেছে এক দোকান মালিকের বয়জ্যেষ্ঠ ছোট ভাইয়ের এবং পুড়েছে ছয়টি দোকান।

বুধবার সকালে ওই মার্কেটের দোকানের উপর দিয়ে যাওয়া বিদ্যুতের তারে পুনরায় আগুন লাগলে তা ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা নেভান। তবে এদিন কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

ক্ষতিগ্রস্ত এ সমবায় মার্কেটের দোকান মালিকরা জানান, ‘ইসলামাবাদ টাউন কো-অপারেটিভ ক্রেডিট সোসাইটির’ মালিকানাধীন এ জায়গায় এসব দোকান উচ্ছেদ নিয়ে ওই মার্কেটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সোসাইটির বেশ কয়েক বছর ধরে বিরোধ চলছিল। তাদের অভিযোগ, এর জেরে মঙ্গলবার রাতের বেলায় আগুন ‘লাগিয়ে’ দেওয়া হয়।

রাত সোয়া ১২টার দিকে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে রাত আড়াইটার দিকে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, আলম ইঞ্জিনিয়ারিং নামে একটি লেদ মেশিনের দোকানের দিক থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল।

পরে ওই দোকান থেকে মো. ইদ্রিস নামে আনুমানিক ৬০ বছর বয়সী এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়। যিনি ওই দোকান মালিকের ছোট ভাই এবং রাতে দোকানে থাকতেন বলে জানিয়েছেন স্বজনরা।

ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিকদের অভিযোগ, তাদের টিন শেডের দোকানগুলোর জায়গার মালিক ইসলামাবাদ কো-অপরেটিভ টাউন কো-অপারেটিভ ক্রেডিট সোসাইটি। সেখানকার বর্তমান পরিচালকরা তাদের উচ্ছেদ করে বহুতল ভবন নির্মাণ ও মার্কেট করার পরিকল্পনা নিয়েছেন। কিন্তু দোকান মালিকদের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় তা মামলা মোকাদ্দমায় গড়িয়েছে।

Also Read: চট্টগ্রামে অগ্নিকাণ্ডে ১ জনের মৃত্যু

তবে সোসাইটির পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।

এ অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে ফায়ার সার্ভিস একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

সংস্থার চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আব্দুল মালেক বলেন, আগুন পরিকল্পিতভাবে লাগানো হয়েছে না কি অন্য কোনো কারণে সূত্রপাত হয়েছে সেটি তদন্ত করে দেখা হবে।

আলম ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মালিক মো. শাহ আলমের ছেলে খোরশেদুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পারিবারিকভাবে প্রায় ৭০ বছর ধরে তারা ব্যবসা করে আসছেন। মূলত প্রেসের বিভিন্ন প্রিন্টিং মেশিনের সরঞ্জাম ঠিক করা হয় সেখানে।

তিনি বলেন, রাত ৯টা পর্যন্ত দোকান খোলা ছিল। রাত ১১টার দিকে তার চাচা নিহত ইদ্রিস ঘাটফরহাদবেগের বাসা থেকে ভাত খেয়ে প্রতিদিনের মত দোকানে ঘুমাতে যান। এরমধ্যে সোয়া ১২টার দিকে আগুন লাগার খবর পান।

খোরশেদের অভিযোগ, বেশ কয়েক বছর ধরে তাদের উচ্ছেদ করার জন্য চেষ্টা করছিলেন ইসলামাবাদ কো-অপারেটিভ ক্রেডিট সোসাইটির বর্তমান পর্ষদ। এ নিয়ে আদালতের স্থিতাবস্থাও জারি আছে।

আগুন লাগার ঘটনায় ব্যবসায়ীরা আইনগত পদক্ষেপ নেবেন বলেও জানান তিনি।

তাদের দোকান থেকে আগুন লাগার কোনো সুযোগ নেই দাবি করে তিনি বলেন, “দোকানে আগুনের কোনো কাজ নেই। আমাদের উচ্ছেদ করতেই দোকানের পেছনে টিনের চালে আগুন দেওয়া হয়, যা মুহূর্তের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ে।”

মঙ্গলবার রাতের এ আগুনে আলম ইঞ্জিনিয়ারিং নামের দোকানটি ছাড়াও একটি বই বাইন্ডিং, মুদি, রিফ্রাজেরটর মেরামতের দোকানসহ ছয়টি দোকান পুড়ে যায়।

ক্ষতিগ্রস্ত বই বাইন্ডিংয়ের দোকান আমানত আর্ট প্রেসের মালিক মীর তসলিম বলেন, দোকানের অর্ধেক দরজা বন্ধ করে রাতে বসে খবর দেখছিলাম। এসময় রাস্তার লোকজন আগুন আগুন বলে চিৎকার করতে থাকে। বের হয়ে দেখি আলম ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের টিনের চালের শেষ প্রান্তে আগুন জ্বলছে, যা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

এ আগুন পরিকল্পিতভাবে লাগানো হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, যে দিক থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় সে দোকানে থাকতেন নিহত ব্যক্তি। কিন্তু আগুন লেগেছে দোকানের পেছনে টিনের চালে। তাই আমাদের সন্দেহ আগুনটি পরিকল্পিতভাবে লাগানো হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে ইসলামাবাদ টাউন কো-অপারেটিভ ক্রেডিট সোসাইটির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি এএএম সাইফুদ্দিনের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

সেক্রেটারি মুনতাসির নূর রাহিদ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “তারা অমূলক কথাবার্তা বলছেন। তাদের সাথে আমাদের কোনো বিরোধ নেই। আমরা ঘর ভাড়া বাড়ানোর জন্য তাদের বলেছিলাম। কিন্তু তারা সেটা না মেনে আদালতে ভাড়া দিচ্ছেন। সে মামলাটি আদালতে বিচারাধীন। “ভাড়াটিয়া হলেও যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তারা আমাদের সদস্য। আগুনতো আমাদের অফিসের সামনেও চলে এসেছিল।”

ঘটনাটি কোনোভাবেই পরিকল্পিত নয় দাবি করে মুনতাসির বলেন, সোসাইটি জরুরি সভা করে পাঁচ সসদ্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছে।

এখন ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত প্রতিবেদন এবং এ কমিটির প্রতিবেদন দেখে বোঝা যাবে কীভাবে আগুন লেগেছে।

বহুতল ভবন নির্মাণের বিষয়ে তিনি বলেন, সোসাইটির অধীনে ৪০ শতক জায়গা আছে। এর মধ্যে অল্প একটু জায়গায় ক্ষতিগ্রস্থ দোকানগুলো ছিল। দোকানের জায়গা নিয়ে আদালতে মামলা বিচারাধীন থাকায় সেখানে ভবন নির্মাণের প্রশ্নই আসে না।