চট্টগ্রাম থেকে চোরাই মোটর সাইকেলসহ দুই যুবককে আটকের পর তাদের তথ্যে সন্দ্বীপ উপজেলা থেকে আরও ২৩টি চোরাই বাইক উদ্ধার করা হয়েছে।
পরে চট্টগ্রাম ও সন্দ্বীপ থেকে চক্রের আরও তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করার কথাও জানিয়েছে পুলিশ।
গ্রেপ্তার পাঁচজন হলেন- মিঠন ধর (২৯), খোরশেদ আলম (২৯), বাবর ওরফে বাবুল (৩৫), শাহেদ (২৬) ও রিপন (৪০)।
পুলিশের ভাষ্য, এ পাঁচজনই একটি চক্রের সদস্য, তাদের মধ্যে মিঠন ও খোরশেদ মোটর সাইকেল চুরি করে আসছিলেন। আর অন্যরা কমদামে তা কিনে বেশি দামে বিক্রি করছিলেন।
তাদের মধ্যে মিঠন ও বাবরকে পুরাতন স্টেশন এবং খোরশেদকে নগরীর ব্রিজ ঘাট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। অন্য দুই জনকে গ্রেপ্তার করা হয় সন্দ্বীপ উপজেলা থেকে।
রোববার নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সম্প্রতি চট্টগ্রাম নগরী ও আশপাশের বিভিন্ন স্থানে বেশকিছু মোটর সাইকেল চুরির ঘটনা ঘটেছে, যেগুলোর বিষয়ে বিভিন্ন থানায় মামলাও হয়েছে। এর মধ্যে কোতোয়ালি থানায় মোটর সাইকেল চুরির অভিযোগে মামলা করেন চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলাম।
“অন্যান্য মামলার পাশাপাশি এটির তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ মিঠন ধরের সন্ধান পায়। তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে এ চক্রের অন্য সদস্যদের সন্ধান মেলে।”
গত ১৫ মার্চ রাতে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে পার্ক করে রাখা অবস্থায় চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলামের মোটর সাইকেল চুরি হয়। এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করেন তিনি।
এর আগে গত মাসের মাঝামাঝি চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম এলাকায় বইমেলা থেকে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের প্রচার সম্পাদক খোরশেদুল আলম শামীমের মোটর সাইকেলও চুরি হয়।
দুটি মোটর সাইকেলই মিঠন ও খোরশেদ চুরি করেছি বলে পুলিশের ভাষ্য। তবে এগুলোর মধ্যে শামসুল ইসলামের মোটরসাইকেল সন্দ্বীপ উপজেলা থেকে উদ্ধার হলেও শামীমেরটির এখনও খোঁজ পাওয়া যায়নি।
উপ-কমিশনার মোস্তাফিজুর বলেন, “মিঠনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কোতোয়ালি থানা পুলিশের একটি দল চট্টগ্রামের দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপে স্থানীয় পুলিশের সহায়তায় অভিযান চালায়। সেখান থেকে ২৩টি মোটর সাইকেল উদ্ধার করা হয়।
“বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হওয়ায় সহজেই তারা মোটর সাইকেলগুলো সেখানে নিয়ে যায় এবং মোটর সাইকেল দ্বীপের অন্যতম বাহন হওয়ায় সাধারণ লোকজনের কাছে কম দামে বিক্রি করে।”
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) নোবেল চাকমা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মূলত মিঠন ও খোরশেদ মিলে মোটর সাইকেল চুরি করে। সিসি ক্যামেরার ভিডিওর সূত্র ধরে শনিবার সকালে পুরাতন স্টেশন এলাকা থেকে মিঠন ও বাবরকে একটি মোটর সাইকেলসহ আটক করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে মিঠন বিভিন্ন মোটর সাইকেল চুরির তথ্য দেয় এবং সেগুলোর অবস্থান জানায়।
চুরিতে দুই জন, ক্রেতা তিন জন
অভিযানে থাকা কোতোয়ালি থানার এসআই মোমিনুল হাসান জানান, এ চক্রের সদস্য মিঠন ও খোরশেদ বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ায়। সুবিধাজনক স্থানে তালা ছাড়া মোটর সাইকেল দেখলেই সুযোগ বুঝে চালিয়ে তারা চলে যায়।
“প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মিঠন জানিয়েছে, যেসব মোটর সাইকেল তারা চুরি করেন, সেগুলো বাবরের কাছে ১০/১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে। হাতবদল হয় মূলত পুরাতন স্টেশন ও ফৌজদারহাট টোল রোড এলাকায়। আর বাবর ওইসব মোটর সাইকেল কুমিরা অথবা বাঁশবাড়িয়া ঘাট দিয়ে ট্রলারে করে সন্দ্বীপ নিয়ে শাহেদ, রিপনসহ অন্য আরও কয়েকজনের কাছে বিক্রি করে দেয়।”
এসআই মোমিনুল জানান, সন্দ্বীপের আকবর হাট এলাকায় শাহেদের একটি মোটর সাইকেল গ্যারেজ আছে। তিনি বাবরের কাছ থেকে মোটর সাইকেল কিনে নিয়ে মেরামত করে বিভিন্ন জনের কাছে বিক্রি করেন।
সন্দ্বীপ থেকে উদ্ধার করা ২৩ মোটর সাইকেলের মধ্যে ১১টি শাহেদের গ্যারেজ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এসআই মোমিনুল বলেন, “এ চক্রটি গত কয়েক বছরে এত বেশি মোটর সাইকেল চুরি করেছে যে তারাও সঠিক হিসাব দিতে পারেনি। এর আগেও মিঠন এবং বাবর পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে একাধিক করে মামলা আছে।
“বই মেলা থেকে সাংবাদিক শামীমের মোটর সাইকেল চুরির কথা স্বীকার করলেও সেটির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তারা দিতে পারেনি।”
‘বাংলা বাইক’
পুলিশ জানায়, এ চক্রটির মূল টার্গেট থাকে ১০০/১২০ সিসির মোটর সাইকেল। এর কারণে হিসেবে তারা পুলিশকে বলেছে, এসব মোটর সাইকেলের চাকায় তালা লাগানো না থাকলে তাদের কাছে থাকা চাবি দিয়ে খুব সহজেই চালু করতে পারেন। যার কারণে তারা সেগুলোকে ‘বাংলা বাইক’ বলেন।