ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসময় বক্তব্য রাখতে গেলে কনস্টেবলদের অনেককেই উত্তেজিত হয়ে ঘটনার সময় তারা কোথায় ছিলেন এমন প্রশ্ন করতে শোনা যায়।
Published : 07 Aug 2024, 07:36 PM
সরকারের পতনের দাবিতে আন্দোলনের মধ্যে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর চট্টগ্রামের দামপাড়া পুলিশ লাইন্সে বিক্ষোভ করেছেন কনস্টেবল থেকে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।
বুধবার বিকালে দামপাড়া পুলিশ লাইন্স সদর দপ্তরের সামনে প্রথমে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন কনস্টেবলরা।
পরে সেখানে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও এসে হাজির হন।
বিক্ষুব্ধরা এসময় আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ, মনিরুল ইসলাম ও বিপ্লব সরকারদের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। পাশাপাশি পদোন্নতি-পদায়ন বৈষম্য চলবে না বলেও বিভিন্ন স্লোগান দেন।
সরকারের পতনের পর তৈরি হওয়া ভীতিকর পরিস্থিতির বর্ণনা করতে গিয়ে অনেককেই কাঁদতে দেখা যায়।
পুলিশ সদস্যদের অভিযোগ, দুই দিন ধরে সিএমপি কমিশনার কর্মস্থলে নেই। সরকার পতনের পর বিভিন্ন থানায় হামলার ঘটনায় কতজন পুলিশ সদস্য হতাহত হয়েছেস তাদেরও কোনো তালিকা তারা পাননি।
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসময় বক্তব্য রাখতে গেলে কনস্টেবলদের অনেককেই উত্তেজিত হয়ে ঘটনার সময় তারা কোথায় ছিলেন এমন প্রশ্ন করতে শোনা যায়। তবে অন্যদের হস্তক্ষেপে তারা শান্ত হন।
এসময় কর্মকর্তারা কনস্টেবলদের দাবির যৌক্তিকতা আছে বলেও জানান।
পরে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন, অতিরিক্ত কমিশনার আ স ম মাহতাব উদ্দিন ও আব্দুল ওয়ারিশ।
মাহতাব উদ্দিন বলেন, “স্বাধীন পুলিশ কমিশনের দাবি আমাদের দীর্ঘ দিনের। আমরা দলীয় না হয়ে লেজুড়বৃত্তির ঊর্ধ্বে থেকে কাজ করতে চাই।
তিনি আরও বলেন, “পুলিশের চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে না পরলে এত লাশ পরত না। নতুন আইজিপি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাই মনে হচ্ছে আমরা আগের মত করে ঘুরে দাঁড়াতে পারব।”
মাহাতাব উদ্দিন আরও বলেন, “আমি বিশ্বাস করি কর্মবিরতি পালন করলেও পুলিশ দায়িত্বশীল। এসময়ে তারা জনগণের সেবা দিতে না পারলেও তারা তাদের ব্যারাক পাহারা দিচ্ছেন।”
এসময় মাহতাব প্রশ্ন রেখে বলেন, “নগরীর ১৬টি থানা। তার মধ্যে ১২টি থানা পুরোপুরি শেষ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় আমরা কীভাবে জনগণের সেবা দিব?”
চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুর ওয়ারিশকে সাংবাদিকরা আন্দোলনের গুলিতে নিহতদের বিষয়ে প্রশ্ন করেন।
তিনি বলেন, “আপনাদের বুঝতে হবে আমাদের হাত-পা বেঁধে দেওয়া হয়। আমরা আগে থেকেই স্বাধীন পুলিশ কমিশন চেয়ে আসছি। কিন্তু আমাদের তা দেয়া হয়নি।”
পুলিশের গুলিতে কারো মৃত্যু হয়নি দাবি করে ওয়ারিশ বলেন, “কাদের গুলিতে এসব মৃত্যু হয়েছে সেগুলো তদন্ত করে বলতে হবে। আমার সহকর্মীদের দাবির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করছি।”
পরে পুলিশ লাইন্স গেইট থেকে একটি মিছিল বের হয়ে আকরাম হোসেন ব্যারাকের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
এদিকে দায়িত্বভার নিয়ে ঢাকায় নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে নবনিযুক্ত মহাপরিদর্শক মো. ময়নুল ইসলাম, ভেঙে পড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ সদস্যদের স্ব স্ব ইউনিটে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
পুলিশ সদস্যদের কান্না
সরকার পতনের পর দামপাড়া পুলিশ লাইন্সের অবস্থার বর্ণনা করতে গিয়ে অনেক পুলিশ সদস্যকে কান্নায় ভেঙ্গে পড়তেও দেখা যায়।
এক পুলিশ সদস্য ঘটনার বর্ণণা দিয়ে বলেন, ৫ অগাস্ট পুলিশ লাইন্সের অধিকাংশ সদস্যই সড়কে দায়িত্ব পালনে ছিলেন। আগের দিন রাতে যারা দায়িত্বে ছিলেন এমন কিছু সদস্য সে সময় লাইনের ব্যারাকে ছিলেন।
তিনি বলেন, বেলা চারটা থেকে কয়েক দফায় পুলিশ লাইন্স গেইটে বিক্ষুব্ধরা হামলার চেষ্টা হয়। তাদেরকে অনেকেই বুঝিয়ে সরানোর চেষ্টা করলেও উত্তেজিত কিছু লোক হামলার চেষ্টা করে। সে সময় ভেতর থেকে সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদুনে গ্যাস ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।
এদিকে বুধবার দামপাড়া পুলিশ লাইনে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান ফটক, সদর দপ্তর ও অস্ত্রাগারের সামনে সেনা সদস্যরা পাহারায় আছেন।
১১ দাবি
এদিন বিক্ষুব্ধ পুলিশ সদস্যরা ১১ দফা দাবি ঊর্ধ্বতনদের কাছে দেন।
এসব দাবির মধ্যে আছে- চলমান ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পুলিশ হত্যা ও পুলিশী স্থাপনায় হামলায় জড়িতদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা, নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারকে এককালীন সহায়তা ক্ষতিপূরণ, আজীবন পেনশন-রেশন প্রাপ্তি এবং পরিবারের একজন সদস্যকে সরকারি চাকরি প্রদান ও আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা, পিএসসির অধীনে এসআই, সার্জেন্ট নিয়োগ এবং পুলিশ সদর দপ্তরের অধীনে কনস্টেবল নিয়োগে শতভাগ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, এসআই/সার্জেন্ট পদে পদোন্নতি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন করা, সহকারী কমিশনার (এএসপি) পদে ৩০ শতাংশ সরাসরি ও পরিদর্শক পদ থেকে ৭০ শতাংশ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করার দাবি জানানো হয়েছে।
এছাড়া কনস্টেবল/নায়েক/এটিএসআই/এএসআই পদোন্নতির ক্ষেত্রে পাসকৃতদের সিনিয়রিটি অনুসরণ ও পরের বছর পুনঃপরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা বাতিলের দাবিও রয়েছে।
পুলিশের কর্মঘণ্টা কমিয়ে আট ঘণ্টা করা এবং অতিরিক্ত কর্মঘণ্টার জন্য ওভারটাইমের ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে ১১ দফা দাবিতে।
পুলিশ সদস্যদেরকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিজ নিজ ইউনিটে যোগ দেওয়ার নির্দেশ