ছটফটে ইরাবতী

মিয়ানমারের ভেতর দিয়ে উত্তর-দক্ষিণে বয়ে চলা ইরাবতী নদীর পশ্চিম তীরে এ কাঠবিড়ালি মূল বাসস্থান। তাই নদীর নামেই এর নাম।

মিঠুন চৌধুরীমিঠুন চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Oct 2022, 07:15 AM
Updated : 7 Oct 2022, 07:15 AM

রাঙামাটির কাপ্তাই হৃদের ধারে তার সাথে দেখা; গায়ের রঙ বাদামি, আকারে ছোট্ট, আর বড্ড দুরন্ত এক কাঠবিড়ালি। মানুষ তার নাম দিয়েছে ‘ইরাবতী’।

কয়েক সেকেন্ডে মাত্র তিনটি ছবি তুলতে না তুলতেই লাফিয়ে লেকের পাড়ের ঘন জঙ্গলে হারিয়ে গেল সে।

গত ২৭ সেপ্টেম্বর সকালে রাঙামাটিতে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সে লেকের ধারে দেখা মেলে ওই ইরাবতী কাঠবিড়ালির। 

প্রকৃতিকে ক্যামেরাবন্দি করার ফাঁকে হঠাৎ ফ্রেমে ধরা পড়ল উজ্জ্বল দুটো কালো চোখ; মুখে খাবার নিয়ে সতর্ক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে। চোখাচোখিও হল দুজনের।

ছটফটে স্বভাবের প্রাণিটি আরেকটু এগিয়ে ঝোপের কাছে আসায় ছবি নিতে সুবিধাই হল। কিন্তু সময় দিল সে বড্ড কম। লেজের নাচনে লতায় পাতায় কাঁপন তুলে দ্রুত হারিয়ে গেল।

২১ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যের বাদামি কাঠবেড়ালির লেজটি দেখার মত, সেটি ১৮ সেন্টিমিটার লম্বা। ছোটাছুটির সময় রোমশ বাদামি লেজটি ঝালরের মত ফুলে ওঠে।

শরীরের উপরের অংশ লালচে বাদামি হলেও পেটের কাছটায় ধূসর বা সাদাটে ধূসর। কোমরের অংশে সাদা পট্টিও থাকে কোন কোনটির, তাই অন্য নাম ‘Hoary-belied Squirrel’ (ধূসর সাদা পেটের কাঠবিড়ালি)।

রাঙামাটি অঞ্চলের প্রধান বন সংরক্ষক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আগে রাঙামাটি শহরের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়মিতই এই বাদামি কাঠবিড়ালি বা ইরাবতী স্কুইরেলের আনাগোণা ছিল। এখন মাঝে মাঝে দেখা যায়। তবে কাচালং বন ও রাইক্ষ্যং সংরক্ষিত বনাঞ্চলে এখনো প্রচুর ইরাবতী কাঠবিড়ালি আছে।

একসময় চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি বনে, গ্রামীণ ঝোপঝাড়, শহুরে উদ্যান বা গাছপালা ঘেরা জায়গাতেও অহরহ দেখা যেত বাদামি কাঠবিড়ালি। এখন কিছুটা কমলেও হারিয়ে যায়নি বলে জানান বন সংরক্ষক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।

মিয়ানমারের ভেতর দিয়ে উত্তর-দক্ষিণে বয়ে চলা ইরাবতী নদীর নামেই নাম পেয়েছে এ প্রাণি। মিয়ানমার ও বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, চীন ও নেপালেও ইরাবতী দেখা যায়। চিরসবুজ, আধা চিরসবুজ বনে এই কাঠবিড়ালির অবাধ বসবাস হলেও কৃষি এলাকাতেও দেখা মেলে।

শুকনো ঘাস, পাতা ও ছোট ছোট কাঠি জড়ো করে গাছের মগডালে বাসা বানিয়ে থাকে ইরাবতী। খাবারের মধ্যে আর ইরাবতীর পছন্দ বীজ, ফুল, ফল, গাছের ছাল, শাকসবজি, ফুলের রস।  

এই কাঠবিড়ালার বৈজ্ঞানিক নাম Callosciurus pygerythrus; বংশবিস্তারের সময় মার্চ থেকে জুলাই এবং ওই সময়ের মাঝে বছরে একবার তিন থেকে চারটি বাচ্চা দেয়।

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারবেশন অব নেচার (আইইউসিএন) ২০১৬ সালে ইরাবতী কাঠবিড়ালিকে ‘নূন্যতম বিপদগ্রস্ত’ হিসেবে তাদের লাল তালিকার অন্তর্ভুক্ত করে। অর্থাৎ, এ প্রজাতি সহজেই দেখা যায় ও ব্যাপকভাবে বিস্তৃত।