‘লিবারেশন ডকফেস্ট চট্টগ্রাম-২০২২’ শুরু

শুক্র ও শনিবার প্রতিদিন বেলা ১১টা, বিকাল ৪টা এবং সন্ধ্যা ৬টায় মোট তিনটি করে প্রদর্শনী হবে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Oct 2022, 02:59 PM
Updated : 13 Oct 2022, 02:59 PM

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের আয়োজনে তিন দিনের ‘লিবারেশন ডকফেস্ট চট্টগ্রাম-২০২২’ শুরু হয়েছে চট্টগ্রামের থিয়েটার ইনস্টিটিউটে। মানবাধিকার ও মুক্তিযুদ্ধের ওপর নির্মিত চলচ্চিত্র নিয়ে এই উৎসবের আয়োজন।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ও গবেষক মফিদুল হক বলেন, “জাদুঘরের কর্মকাণ্ড প্রসারে সবসময় সহযোগিতা পাই লোকসমাজের কাজ থেকে। মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা শহীদরা এ মাটিতে বপন করে গেছেন এটা তারই প্রতিফলন।

“মিলান কুন্ডেরা বলেছিলেন- বিস্মৃতির বিরুদ্ধে স্মৃতির লড়াই হলো সভ্যতা। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণে সে লড়াই করছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।” 

 

তিনি বলেন, “সেগুনবাগিচার জাদুঘরে খুব ছোট আকারে এ উৎসব (লিবারেশন ডকফেস্ট বাংলাদেশ) শুরু হয়েছিল। জাদুঘর স্থানান্তর করার সময় এই আয়োজনে একটু ছেদ পড়ে। জাদুঘর গড়ে ওঠার নেপথ্যে এবং বিকাশের পিছনেও মানুষের বড় ভূমিকা। এখন ২ হাজারের ওপর প্রামাণ্যচিত্র বাছাইয়ের জন্য জমা পড়ে। এটাই বড় প্রাপ্তি।”

মফিদুল হক বলেন, “হাজারো মুক্তিযুদ্ধের গল্প ছড়িয়ে আছে এ মাটিতে। এসব নিয়ে চলচ্চিত্র হতে পারে। আশা করি প্রতিবছর লিবারেশন ডকফেস্ট চট্টগ্রামে হবে। মুক্তিযুদ্ধের সময় তোলা আলোকচিত্রী মার্ক রিভুর ছবির একটা প্রদর্শনী করার চেষ্টা করব চট্টগ্রামে।”

প্রতিবছর চট্টগ্রামে এই উৎসব আয়োজনের আশা জানান জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন বলেন, “বাংলা ভাষাভাষী জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ঘটনা মুক্তিযুদ্ধ। ৩০ লাখ মানুষ প্রাণ দিয়েছেন। দেশ ত্যাগ করেছেন কোটি লোক। দেশের ভেতরে দেড় কোটি লোক ঘর ছাড়েন। বিশ্বের ইতিহাসে এরকম মাত্র কয়েকটি আত্মবিসর্জনের ঘটনা আছে।

“রাষ্ট্রে ব্যক্তির স্বাধীনতার জন্য বিভিন্ন মানুষের যে আত্মত্যাগ তা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সংরক্ষণ করে। আমাদেরও মুক্তিযুদ্ধকে স্মরণ করতে হবে। আমাদের উত্তর প্রজন্ম দুশ-তিনশ বছর পরে এই ইতিহাস স্মরণ করবে।”

অনুপম সেন বলেন, “এখন বিশ্ব জুড়ে সংস্কৃতির ভাটা। এর বড় কারণ সবকিছু করপোরেশন গ্রাস করেছে। মধ্যবিত্তের ক্ষমতা কমিয়ে দেয়া হচ্ছে নানা ভাবে। তারাই আগে সবকিছু করত। থিয়েটার, ফিল্ম, কবিতা, গান এগুলো সব অসাধারণ শিল্প। অসাধারণ চলচ্চিত্র দেখে মুগ্ধ হয়েছি। আজ সেসব হচ্ছে না কেন?

“তখন অসাধারণ সব বাণিজ্যিক ছবিও হয়েছে। এখন হয়ত হচ্ছে, আমরা জানি না। আমাদের কাছে আসছে না। এসব বাধা-বিপত্তি অভাবকে জয় করে আমাদের এগুতে হবে। আমাদের ভেতরের শিল্পবোধ যেন বেঁচে থাকে তাই এ চেষ্টা।”

তিনি বলেন, “নতুন প্রজন্মের মধ্যে শিল্পবোধ জাগিয়ে তোলার কাজ করবে এমন আয়োজন। মুক্তিযুদ্ধকে আমাদের অনুপুঙ্ক্ষভাবে জানতে হবে। এটা বাঙালির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ঘটনা। এটা যেন কেউ ভুলতে না পারে সে চেষ্টা করতে হবে।”

থিয়েটার ইনস্টিটিউট চট্টগ্রামের পরিচালক আহমেদ ইকবাল হায়দার বলেন, “এখন সব ঢাকা কেন্দ্রিক হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের পর ঢাকায় যখন গ্রুপ থিয়েটার চর্চা শুরু হয় তখন চট্টগ্রামেও শুরু হয়েছিল। পরে সব ঢাকা কেন্দ্রিক হয়ে গেছে।

“আমাদের নিজস্ব চলা, বলা সংস্কৃতি হারিয়ে যাচ্ছে। সব এক-কেন্দ্রিক হয়ে গেছে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের এ আয়োজনের প্রভাব অবশ্যই পড়বে। ঢাকার বাইরে এই প্রথম এসেছে। ধন্যবাদ, চট্টগ্রামের শক্তিটাকে তারা অনুভব করছেন।”

ফেস্টিভ্যাল ডিরেক্টর তারেক আহমেদ বলেন, “সংস্কৃতি অঙ্গনে নানা রকম স্থাপনা হয়েছে। তবে সংস্কৃতি চর্চাটা স্থানীয় পর্যায়ে নেই। সব ঢাকায় হয়ে যায়। একটা বড় রকম খরা চলছে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের এ আয়োজনের মাধ্যমে আমরা একরকম চেষ্টা করছি।

“চেষ্টা থাকবে প্রতি বছর চট্টগ্রামে এবং বড় জেলা শহরগুলোতে করার চেষ্টা করব। সিনেমার অবস্থা যদি বলি পপুলার সিনেমা মিসিং হয়ে গেছে। বিশ্বব্যাপী নানা ভাবে ছবি বানানো হচ্ছে। এখন স্থানীয় গল্প নির্ভর ছবির চাহিদা পুরো পৃথিবীব্যাপী। লোকাল কনটেন্ট খোঁজার চেষ্টাও এই আয়োজনের লক্ষ্য।”

শরিফুল ইসলাম শাওনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন চলচ্চিত্র নির্মাতা রফিকুল আনোয়ার রাসেল।

ডকফেস্টে শুক্র ও শনিবার প্রতিদিন বেলা ১১টা, বিকাল ৪টা এবং সন্ধ্যা ৬টায় মোট তিনটি করে প্রদর্শনী হবে।

এই উৎসব উপলক্ষ্যে ‘এক্সপোজিশন অফ ইয়াং ফিল্ম ট্যালেন্ট ২০২২ চট্টগ্রাম’ শীর্ষক কর্মশালার উদ্বোধন হয় বৃহস্পতিবার সকালে। ১৪ ও ১৫ অক্টোবর সকালে উৎসবে কর্মশালায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের নির্মাণ করা এক মিনিটের চলচ্চিত্রও প্রদর্শিত হবে।