সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবিতে সমাবেশ

বাজেটে সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং ডিসি হিল ও সিআরবির মুক্তমঞ্চ সংস্কৃতি চর্চার জন্য উন্মুক্ত করার দাবিতে সমাবেশ করেছে চট্টগ্রামের সংস্কৃতি কর্মীরা।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 June 2022, 03:45 PM
Updated : 18 June 2022, 03:45 PM

শনিবার বিকেলে নগরীর চেরাগী পাহাড় মোড়ে অনুষ্ঠিত সমাবেশে খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরী এবং পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ চট্টগ্রামের সভাপতি ডা. এ কিউ এম সিরাজুল ইসলাম বলেন, “সংস্কৃতি হচ্ছে একটি জাতির প্রাণশক্তি। এ খাতে বিনিয়োগ ভবিষ্যত অসাম্প্রদায়িক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের বিনিয়োগ।

“হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প যেমন প্রয়োজন, তেমনই আধুনিক উন্নত দেশ গঠন করতে হলে আগে প্রয়োজন সাংস্কৃতিক বিনির্মাণ। বাজেটে সংস্কৃতি খাতে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তা দেশের জনসংখ্যা বিবেচনায় অত্যন্ত অপ্রতুল।”

সাংস্কৃতিক ভিত্তি রচিত না হলে ভবিষ্যত প্রজন্ম সঠিকভাবে দেশপ্রেম ও স্বাধীনতার চেতনা হৃদয়ে ধারণ করতে পারবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, “তাই সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দ অবশ্যই বাড়াতে হবে। দেশের সব বিভাগ, জেলা শহর এবং উপজেলায় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে।”

সংস্কৃতিচর্চা এখন নানা ঘেরাটোপে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে মন্তব্য করে সঙ্গীতশিল্পী কল্পনা লালা বলেন, “এরকম প্রতিকূলতার মাঝে সংস্কৃতির বিকাশ সম্ভব নয়। শিল্পীদের জীবনমান উন্নয়নে রাষ্ট্রের ভূমিকা প্রধান। শিল্পীদের মর্যাদা, অধিকার ও সম্মান রক্ষায় রাষ্ট্রকেই অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে।

“সংস্কৃতি চর্চাকে বিকশিত করতে এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার কোনো বিকল্প নেই। একজন শিল্পী যদি শেষ জীবনে অসহায় হয়ে পড়েন, তাহলে নতুন প্রজন্ম শিল্প চর্চায় আগ্রহী হবে না।”

বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক আবৃত্তি শিল্পী রাশেদ হাসান বলেন, “জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত সাংস্কৃতিক মিলনায়তন অবশ্যই গড়ে তুলতে হবে। এজন্য প্রয়োজন যথাযথ বরাদ্দ।

“অস্বচ্ছল শিল্পীদের মাসিক যে ভাতা দেয়া হয় তা আজকের বাজার মূল্যের বিবেচনায় অত্যন্ত অপ্রতুল। এতে একজন শিল্পীর ওষুধ খরচও চলে না। এই ভাতা কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা করতে হবে। সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর বার্ষিক অনুদান বৃদ্ধি করার এখন সময়ের দাবি।”

সঙ্গীতশিল্পী শ্রেয়সী রায় বলেন, “সংস্কৃতি একটি সুকুমার বৃত্তি। আর্থিক যোগান এবং প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা না থাকলে সংস্কৃতি চর্চা এগিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে সরকার যে বিনিয়োগ করবে তার হয়ত আর্থিক ফল লাভ হবে না কিন্তু এর সার্বিক ফলাফল অনেক ব্যাপক ও সুদূর প্রসারী।

“শিল্পী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো যদি আর্থিক নিশ্চয়তার অভাবে শিল্প চর্চা করতে না পারে তাহলে সেই স্থান নেবে অপসংস্কৃতি। যার বিভিন্ন লক্ষণ আমরা এখনই দেখতে পাচ্ছি। সংশোধিত বাজেটে অবশ্যই সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।”

‘মানবিক সমাজ নির্মাণে চাই সাংস্কৃতিক জাগরণ’ স্লোগান নিয়ে ‘সর্বস্তরের সংস্কৃতিকর্মী, চট্টগ্রাম’ ব্যানারে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

এতে বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত আবৃত্তি জোট চট্টগ্রামের সভাপতি হাসান জাহাঙ্গীর, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক দেবাশীষ রুদ্র, খেলাঘর সংগঠক মোরশেদুল আলম, আবৃত্তি শিল্পী কংকন দাশ, সংগঠক মো. সাজ্জাত হোসেন, শব্দ নোঙর আবৃত্তি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক দিলরুবা খানম, কণ্ঠনীড় আবৃত্তি সংগঠনের সভাপতি সেলিম রেজা সাগর, বোধন আবৃত্তি পরিষদের সংগঠক শান্তুনু মিত্র, উদীচী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক পার্থ প্রতীম মহাজন।