সীতাকুণ্ডের ডিপোতে পুড়েছে ‘৪০০ কন্টেইনার’ পোশাক

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম ডিপোতে আগুনে রপ্তানির চারশ কন্টেইনার পণ্য পুড়েছে বলে প্রাথমিক হিসাব দিয়েছেন তৈরি পোশাক ব্যবসায়ীরা।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 June 2022, 04:20 PM
Updated : 5 June 2022, 04:23 PM

তারা পুরো হিসাব জানাতে না পারলেও শুধু চট্টগ্রামের রপ্তানিকারকদেরই ১৮ মিলিয়ন (১৬০ কোটি টাকা) ডলারের পণ্য পুড়েছে বলে দাবি করছেন।

বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্প। তার প্রায় সবই যায় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। আর এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকে কন্টেইনার ডিপোগুলো।

বেসরকারি কন্টেইনার ডিপো বিএম কন্টেইনার টার্মিনালে শনিবার রাতে আগুন লাগার পর একের পর এক কন্টেইনার পুড়তে থাকে, সেই সঙ্গে ঘটতে থাকে বিস্ফোরণ।

অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণে প্রায় অর্ধশত নিহত এবং দুই শতাধিক আহত হয়। রোববার বিকালের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। 

রোববার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজেএমইএ’র প্রতিনিধিরা।

এরপর বিজেএমইএ’র সহ-সভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, কমপক্ষে ৭০ জন রপ্তানিকারকের পোশাক ভর্তি কন্টেইনার ছিল বিএম ডিপোতে।

“এখন পর্যন্ত আমরা যে তথ্য পেয়েছি, আমাদের (পোশাক ব্যবসায়ী) ৪০০ রপ্তানি পণ্যবাহী কন্টেইনার পুড়ে গেছে। সারাদেশের কমপক্ষে ৭০ জন রপ্তানিকারকের পোশাক বিএম ডিপোতে ছিল। এরমধ্যে ১৫ জন রপ্তানিকারক চট্টগ্রামের।”

চট্টগ্রামের রপ্তানিকারকদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তিনি বলেন, “শুধু চট্টগ্রামের রপ্তানিকারকদের ১৮ মিলিয়ন ডলারের রপ্তানি পণ্য ছিল ডিপোতে। ঢাকাসহ সারাদেশের রপ্তানিকারকদের মোট কত টাকার পণ্য ছিল, সে তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি।”

আগুনের কারণে চলতি সপ্তাহে নির্ধারিত এসব পণ্যের শিপমেন্ট (জাহাজীকরণ) আর সম্ভব হবে না।

রাকিবুল বলেন, “বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড এইচএন্ডএমসহ টিভিএইচ, টার্গেটসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পণ্যে ছিল এসব কন্টেইনারে। এছাড়া ডিএইচএল’র কিছু পণ্য ছিল। যেগুলো মূলত অনলাইন শপিং প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্রয়াদেশের বিপরীতে পাঠানো হচ্ছিল।”

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের মধ্যে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরাও আছেন। ছবি: সুমন বাবু

বিএম কন্টেইনার টার্মিনালের ম্যানেজার নুরুল আকতার খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে রোববার জানান, তাদের ডিপোতে ৪ হাজার ৩০০ কন্টেইনার ছিল। যার মধ্যে ৩০০০ খালি কন্টেইনার। বাকিগুলোর মধ্যে ৮০০ কন্টেইনারে রপ্তানি পণ্য এবং ৪৫০টিতে আমদানি পণ্য ছিল।

তবে কত কন্টেইনার আগুনে পুড়েছে, তার কোনো হিসেব দিতে পারেনি বিএম ডিপো কর্তৃপক্ষ বা ফায়ার সার্ভিস।

বিএম ডিপোতে ছিল প্রাণ আরএফএল গ্রুপের খাদ্যপণ্যও ছিল, যা রপ্তানির জন্য রাখা হয়েছিল।

এই গ্রুপের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট হবিগঞ্জ এগ্রো লিমিটেডের সাব অ্যাসিটেন্ট ম্যানেজার আমিরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ ডিপোর ২০ শতাংশ পণ্য আমাদের। প্রায় ২০০ কন্টেইনার আমাদের বিভিন্ন খাদ্যপণ্য এখানে রপ্তানির জন্য ছিল। ১ জুন থেকে ৪ জুন পর্যন্ত এনে এসব পণ্য রপ্তানির জন্য রাখা ছিল ডিপোতে। আমাদের বেশিরভাগ কন্টেইনার পুড়ে গেছে।”

অগ্নিকাণ্ডে নিজেদের ইব্রাহিম নামে এক কর্মী নিহত এবং তিনজন আহত হয়েছেন বলে জানান আমির।

প্রাণ গ্রুপের কত কন্টেইনার পুড়েছে বা কত টাকার পণ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দিতে পারেননি আমির।

পণ্য আমদানি-রপ্তানির প্রক্রিয়ায় যুক্ত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কাস্টমস বিষয়ক সম্পাদক আশরাফুল আলম খান স্বপন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হাজার কোটি টাকার পণ্য আছে এই ডিপোতে। শত শত কন্টেইনার পুড়েছে। এটা দেশের জন্য বিরাট ক্ষতি। কারণ এখানে বেশিরভাগই ছিল রপ্তানি পণ্য।”