মামলায় আসামিদের মধ্যে নাম উল্লেখ করা ব্যক্তিরা সরাসরি হামলার সঙ্গে জড়িত বলে দাবি পুলিশের। এদের সিসি ক্যামেরাসহ বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ ও স্থিরচিত্র দেখে শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কোতোয়ালি থানার ওসি নেজাম উদ্দিন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, “ঘটনার পরপর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েক জনকে আটক করা হয়েছিল। এরমধ্যে সিসি ক্যামেরাসহ বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ ও স্থিরচিত্র দেখে ৮৩ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে, যারা সরাসরি হামলার সাথে জড়িত ছিল।”
মামলায় পুলিশের ওপর হামলা, ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনের ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে বলে জানান তিনি।
গত শুক্রবার পূজামণ্ডবে হামলার ঘটনার পর রাত থেকেই মামলার প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। পরে গভীর রাতে মামলা দায়ের করা হয়। শনিবার এ বিষয়ে সাংবাদিকদের জানানো হয়।
পুলিশ জানায়, হামলাকারীদের অধিকাংশই ছিলেন নগরীর টেরিবাজার এলাকার বিভিন্ন দোকান কর্মচারী ও খলিফাপট্টি এলাকার বাসিন্দা।
তারা মসজিদে নামাজ শেষে কুমিল্লায় কথিত কুরআন অবমাননার প্রতিবাদে মিছিল, সমাবেশে অংশ নিয়েছিলেন। এ মিছিল আন্দরকিল্লা হয়ে চেরাগী পাহাড়ের দিকে চলে যাওয়ার সময় কিছু উচ্ছৃঙ্খল লোক জেএম সেন হল পূজা মণ্ডপে হামলা চালায়।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপ কমিশনার (দক্ষিণ) বিজয় বসাক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, কুমিল্লায় কুরআন অবমাননার অভিযোগ এনে একদল মুসুল্লী নামাজ শেষে সমাবেশ করে। সেখান থেকে তারা চলে যাওয়ার সময় কিছু লোক হঠাৎ জেএম সেন হলের দিকে দৌঁড়ে গিয়ে ব্যানার ছেঁড়া শুরু করে।
“এসময় সাথে সাথেই পুলিশ অ্যাকশনে যায়। এ কারণে বড় কোনো অঘটন কিংবা বিশৃঙ্খলা হতে পারেনি। ঘটনার পরপর পুলিশ আশেপাশে বিভিন্ন স্থানে অভিযান শুরু করে। ভোর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েক জনকে আটক করা হয়েছে।”
ওই সময় পুলিশ ফাঁকা গুলি ও টিয়ার সেল নিক্ষেপ করায় তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শী ও উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা পরে জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, হামলায় অংশ নেওয়াদের মধ্যে কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাদের সরাসরি সম্পৃক্ততা পাওয়া না গেলেও যাদের আটক করা হয়েছে, তাদের বেশির ভাগই সরকার বিরোধী বিভিন্ন দলের সমর্থক।
কুমিল্লার ঘটনার জের ধরে শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজের পর নগরীর রহমতগঞ্জ এলাকায় একটি মিছিল থেকে ঐতিহাসিক জেএম সেন হলের পূজামণ্ডপে হামলা হয়। এখানকার পূজার আয়োজক চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদ।
এ ঘটনার পর পূজা উদযাপন পরিষদ সেখানে অবস্থান গ্রহণ এবং নিরাপত্তা না পাওয়া পর্যন্ত প্রতিমা বিসর্জন না দেওয়ার ঘোষণা দেয়।
বৈঠক শেষে পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতাদের আশ্বাসে রাত ৮টার দিকে কর্ণফুলী নদী ও আশেপাশের বিভিন্ন পুকুরে দূর্গা প্রতিমা বিসর্জনের ব্যবস্থা করা হয়।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজার বিজয়া দশমীতে প্রতিবছর বন্দর নগরীর পতেঙ্গা সৈকতে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।