চট্টগ্রাম আ. লীগ নেতা তারেক সোলেমান সেলিমের মৃত্যু

চট্টগ্রাম নগরীতে রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ আলকরণ ওয়ার্ডের চারবারের কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতা তারেক সোলেমান সেলিম মারা গেছেন।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Jan 2021, 02:49 PM
Updated : 18 Jan 2021, 02:52 PM

ক্যান্সারে আক্রান্ত সেলিম ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার বেলা ২টার দিকে মারা যান বলে নগর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুক জানিয়েছেন।

আলকরণ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. সালেহ আহমদের বড় ছেলে তারেক সোলেমান সেলিম ((৫৮) ছাত্রাবস্থায় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। বেশ কয়েকবার তিনি হামলার শিকার হন। কারাবরণও করতে হয়েছে বিভিন্ন সময়।

স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের নেতা তারেক সোলেমান সেলিম ছিলেন সাংস্কৃতিক সংগঠকও। তিনি নগর ছাত্রলীগেরও সাবেক সভাপতি। নগরীর রাজনীতিতে ‘পরিচ্ছন্ন ও লড়াকু’ হিসেবে পরিচিত এই নেতার মৃত্যুতে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এক শোক বার্তায় তারেক সোলেমান সেলিমের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবার, সহকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।

পৃথক শোক বার্তায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও তারেক সোলেমান সেলিমের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন।

তারেক সোলেমান সেলিম এবারও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছিলেন। তবে এবার তিনি দলের মনোনয়ন পাননি।  তার স্ত্রী, এক ছেলে, দুই মেয়ে ও চার ভাই রয়েছে।

রাজনৈতিক সহকর্মী শফিকুল ইসলাম ফারুক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সালেহ আহমদের পরিবারের অবদান চট্টগ্রামের আওয়ামী পরিবারে অতুলনীয়। সেলিম ভাই অকালে চলে গেলেন। জুন মাস থেকে তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন।”

চট্টগ্রামে রাজনৈতিক আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্রস্থল নিউ মার্কেট সংলগ্ন আলকরণ ওয়ার্ড এবং সিটি কলেজ ঘিরেই চলত নানা কর্মসূচি।

বিভিন্ন আন্দোলনের সময় তারেক সোলেমান সেলিম এই এলাকায় বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন, যা তার মৃত্যুর পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্নজনের স্মৃতিচারণায় উঠে আসে।

তার ‍মৃত্যুতে শোক জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন।

তাদের বিবৃতিতে বলা হয়, “নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য ৩১ নম্বর আলকরণ ওয়ার্ডের সাবেক চারবারের নির্বাচিত সফল কাউন্সিলর তারেক সোলেমান সেলিমের মৃত্যুতে গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক অঙ্গনে অপূরণীয় শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে।

“সেলিম একজন আপাদমস্তক ও নির্মোহ রাজনীতিক। তিনি রাজনীতিকে কখনও অর্থবিত্তের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেননি। দলের সকল স্তরের নিবেদিত প্রাণ নেতা-কর্মীদের সাথে তার নিবিড় সখ্য ছিল। তাই তার অভাব কখনও আমরা ঘোচাতে পারব না। তিনি দলের নিবেদিত প্রাণ-নেতাকর্মীদের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।”

পৃথক শোকবার্তায় চট্টগ্রাম-৯ আসনের সাংসদ শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, “তারেক সোলেমান সেলিম স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, বিএনপি-জামায়াত জোটবিরোধী আন্দোলনসহ দুঃসময়ে আওয়ামী পরিবারের একজন সাহসী সৈনিক ছিলেন। আন্দোলন-সংগ্রামে তার অগ্রণী ভূমিকা চট্টগ্রামের মানুষ আজীবন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।”

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বলেন, “নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী গণআন্দোলনে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা তারেক সোলেমান সেলিম যে ভূমিকা রেখেছেন, তা দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

“তিনি শুধু রাজনৈতিক কর্মী ছিলেন না। তিনি দক্ষ সাংস্কৃতিক সংগঠক হিসেবে খেলাঘরে বিরাট ভূমিকা রেখেছেন। এ রকম একজন প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্মীর অকাল প্রয়াণ গণতান্ত্রিক রাজনীতির বিকাশে অপূরণীয় ক্ষতি।”

সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরীও পৃথক এক বার্তায় শোক জানিয়েছেন।

পৃথক শোকবার্তায় নগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিনা মহিউদ্দিন বলেন, “তারেক সোলেমান সেলিম একজন আপাদমস্তক ও নির্মোহ রাজনীতিক। তিনি দলের নিবেদিত প্রাণ নেতা-কর্মীদের কাছে চির স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।”

সেলিম ছাত্রজীবনে সিটি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। পরে তিনি নগর ছাত্রলীগের সভাপতি হন। কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের সদস্য সেলিম জুঁই খেলাঘর আসরের সাবেক সভাপতি। তিনি নগর আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য।

১৯৯৪ সালে প্রথমবারের মতো তিনি আলকরণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।

খেলাঘর সংগঠক সেলিমের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন খেলাঘর মহানগরী কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. একিউএম সিরাজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী রূপক চৌধুরীসহ নেতৃবৃন্দ।

জুঁই খেলাঘর আসরের সাধারণ সম্পাদক লিটন কুমার শীল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তারেক সোলেমান সেলিম ভাই একজন শিশু অন্তঃপ্রাণ সংগঠক ছিলেন। তার হাতে অনেক সাংস্কৃতিক সংগঠক ও রাজনৈতিক কর্মীর সৃষ্টি হয়েছে।”

মঙ্গলবার বেলা ২টায় নগরীর পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন চত্বরে তারেক সোলেমান সেলিমের জানাজা হবে।