মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রীয় সম্মান না দেওয়ার প্রতিবাদে সভা, হামলায় পণ্ড

বাঁশখালীর প্রয়াত এক মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রীয় সম্মান না দেওয়ার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম নগরীর জামালখানে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের আয়োজনে একটি সমাবেশে হামলার ঘটনায় সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 August 2020, 08:55 AM
Updated : 24 August 2020, 01:59 PM

সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব চত্বরে বাঁশখালীর পৌর মেয়র সেলিম উল হকের নেতৃত্বে এ হামলা হয় বলে আয়োজকদের অভিযোগ।

সেলিম বাঁশখালী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে এলাকায় পরিচিত।

তবে তিনি হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।  

বাঁশখালীতে মুক্তিযোদ্ধা ডা. আলী আশরাফকে মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় সম্মান না দেওয়ায় এবং সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে সংসদ কর্তৃক অবমাননার প্রতিবাদে সকালে সমাবেশ, মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচির আয়োজন করে চট্টগ্রাম জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাঁশখালীর বেশকয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা, স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও চট্টগ্রাম মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোজাফ্ফর আহমদসহ বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা এবং সন্তান কমান্ডের নেতৃবৃন্দ সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

কর্মসূচির অন্যতম আয়োজক ও সংবাদকর্মী ফারুক আবদুল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কর্মসূচি শুরুর পর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পৌর মেয়র সেলিম উল হকের নেতৃত্বে ১৫-২০ জনের মতো একদল লোক তাদের কর্মসূচিতে লাঠিসোটা নিয়ে হামলা করলে কর্মসূচি পণ্ড হয়ে যায়।

এতে কর্মসূচিতে সংহতি জানাতে আসা চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, দক্ষিণ জেলা কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জহির উদ্দিন মো. বাবরসহ ১৫ জনের মতো কমবেশি আহত হয়েছেন। এছাড়া ওইখানে দয়িত্বপালনরত বেশ কয়েকজন ফটো সাংবাদিকও আহত হন।

পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে হামলাকারীদের লাঠিপেটা করে সরিয়ে দেয়।

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের কোতয়ালী জোনের সহকারী কমিশনার নোবেল চাকমা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শুনেছি সেটি বাঁশখালীর সংসদ সদস্য ও সেখানকার মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ঝামেলা রয়েছে। প্রেস ক্লাবের সামনে কর্মসূচিতে একপক্ষ হামলা করেছে। কয়েকজন সামান্য আহত হয়েছেন।

“আয়োজনকারীরা অভিযোগ করেছেন, বাঁশখালীর পৌর মেয়র সেলিম উল হকের নেতৃত্বে সেখানে হামলা হয়েছে। পরে ‍পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ দুইজন হামলাকারীকে আটক করেছে।”

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর প্রথম প্রতিবাদকারী প্রয়াত মৌলভী সৈয়দের ভাই মুক্তিযোদ্ধা ডা. আলী আশরাফ মারা যান গত ২৬ জুলাই। পরদিন বাঁশখালীতে নিজ বাড়িতে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই তার দাফন হয়।

এর প্রতিবাদে পরবর্তীতে বাঁশখালীতে মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় লোকজন মিলে বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচিও পালন করেন। এতে স্থানীয় সাংসদের অনুসারীরা মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননা করা ও হুমকির অভিযোগও ওঠে।

তবে সোমবার প্রেস ক্লাবের কর্মসূচিতে হামলার অভিযোগ প্রসঙ্গে বাঁশখালী পৌরসভার মেয়র সেলিম উল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার নেতৃত্বে সেখানে কোনো হামলা হয়নি। আমি সেখানে গিয়েছিলাম প্রকৃত সত্য কথা বলার জন্য। ”

পাল্টা অভিযোগ করে তিনি বলেন, “বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে তারা মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে ইতিহাস বিকৃতি করছেন; স্থানীয় সাংসদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছেন। আমি কর্মসূচিতে গিয়ে সত্য কথা বলতেই গিয়েছিলাম।

“কে বা কারা সেখানে হামলা করেছে আমি জানি না। এসময় লাঠির আঘাতে আমিও সামান্য আহত হয়েছি।”

ওই মুক্তিযোদ্ধার রাষ্ট্রীয় সম্মান দেয়া ছাড়া দাফনের ঘটনা তদন্তে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসককে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে গত ২৮ জুলাই নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।

মামলা

সমাবেশে হামলার ঘটনায় মামলা করেছেন প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা আলী আশরাফের ছেলে জহির উদ্দিন মো. বাবর।

এতে আসামি করা হয়েছে বাঁশখালীর সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমানের ব্যক্তিগত সহকারী এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান রাসেল ও বাঁশখালীর পৌর মেয়র সেলিম উল হক চৌধুরীসহ ২৬ জনকে।

সোমবার সকালে হামলার পর সোমবার বিকালে চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়।

কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন বলেন, “কর্মসূচিতে বেআইনিভাবে হামলার অভিযোগে এ মামলাটি হয়েছে। এতে ২৬ জনের নাম উল্লেখ এবং আরও অনেক অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।”

এর মধ্যে সাংসদের ব্যক্তিগত সহকারী রাসেলসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে ওসি জানান।

রাসেল ছাড়া গ্রেপ্তার বাকি তিনজন হলেন, মো. এনাম, আবুল কালাম ও মিজানুর রহমান।