কর্ণফুলী পেপার মিল ‘বাঁচাতে’ প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা

লোকসানের ভারে জর্জরিত দেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত কাগজকল কর্ণফুলী পেপার মিল (কেপিএম) রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Oct 2019, 01:15 PM
Updated : 5 Oct 2019, 01:15 PM

শনিবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে ‘কেপিএম বাঁচাই, চট্টগ্রাম’র ব্যানারে কারখানাটির সাবেক-বর্তমান শ্রমিক ও কর্মচারী এবং তাদের সন্তানরা মানববন্ধন করে এ দাবি জানান।

বেসরকারি কাগজকল মালিকদের একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে কেপিএম বন্ধ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তারা।

মানববন্ধনে বলা হয়, বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ সহায়তায় এবং যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি, সুইডেনের কারিগরি সহায়তায় ১৯৫৩ সালে পার্বত্য জেলা রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে কর্ণফুলী পেপার মিল প্রতিষ্ঠিত হয়। এশিয়ার বিখ্যাত ও ঐতিহ্যবাহী এই কাগজকলের বছরে উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ৩০ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু ৩৪ হাজার মেট্রিক টন কাগজ উৎপাদনের রেকর্ডও রয়েছে এই কারখানার।

“কেপিএম’র মুনাফা দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল কর্ণফুলী রেয়ন কমপ্লেক্স। স্বাধীনতা পরবর্তী ভঙ্গুর অর্থনীতির উন্নয়নে এই কারখানার বিশাল অবদান রয়েছে। অথচ এই কারখানাটিই এখন খুঁড়িয়ে চলছে।”

বক্তারা জানান, প্রতিষ্ঠার পর এই কারখানা থেকে দৈনিক ১৩০ থেকে ১৫০ মেট্রিক টন কাগজ উৎপাদন হলেও বর্তমানে এর উৎপাদন দৈনিক ১০ থেকে ১৫ মেট্রিক টনে নেমে এসেছে। একইসঙ্গে বন্ধ রয়েছে দেশের একমাত্র পাল্প উৎপাদন শাখা এবং লাভজনক কনভার্টিং শাখা।

মানববন্ধনে কেপিএম স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ সুবিমল চৌধুরী বলেন, প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাব, আধুনিক মেশিনারি সংযোজন না করা, দক্ষ শ্রমিকদের উদ্দেশ্যমূলকভাবে অন্যত্র বদলি করা, সময়োপযোগী পরিকল্পনা ও সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে কেপিএম ধীরে ধীরে লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।

“দেশের ব্যক্তি মালিকানাধীন কাগজ কলগুলোর দিন দিন ঈর্ষণীয় উন্নতি হচ্ছে। এর বিপরীতে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এই কারখানা লোকসানের যাঁতাকলে পড়ে হারিয়ে যাচ্ছে। ব্যক্তি মালিকানাধীন কাগজকলের একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে কেপিএম বন্ধে সক্রিয় আছে। তারা এটিকে লোকাসানি প্রতিষ্ঠান হিসেবে আখ্যায়িত করে বন্ধ করে দেওয়ার জন্য উচ্চপর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছে, যাতে কাগজের ব্যবসার একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে চলে যায়।

“সরকারি এই কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে কাগজের বাজার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়বে। হুমকির মুখে পড়বে দেশের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের শিক্ষা।”

মানববন্ধনে আসা শাকের হোসাইন নামে একজন সাবেক কর্মচারী দাবি করেছেন, কেপিএম’র কাছে তার পাওনা সাড়ে ১৪ লাখ টাকা।

আব্দুল কাদের নামে একজন ২৩ লাখ এবং ২০১৭ সালে প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদ থেকে অবসরে যাওয়া ফখরুল ইসলাম ২৫ লাখ টাকা কেপিএম’র কাছে পাবেন বলে জানিয়েছেন।

মানববন্ধনে সফিউল করিম খোকন নামে কেপিএম স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক একজন ছাত্র আধুনিকায়নের মাধ্যমে কারখানাটিকে পূর্ণমাত্রায় সচল করে এটিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার কাছে আকুতি জানান।

মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কাজী নজরুল ইসলাম, মাহবুবুল সজীব, মাকসুদুল রুমি, মাহবুবুল মজিদ, মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন, জালাল উদ্দিন সাগর প্রমুখ।