চলচ্চিত্রে অনুদান বাড়িয়ে ১০ কোটিতে নিতে চান তথ্যমন্ত্রী

চলচ্চিত্র নির্মাণ বাবদ সরকারি অনুদান বাড়িয়ে দ্বিগুণ করার পাশাপাশি ‘বাণিজ্যিক’ চলচ্চিত্রেও এই প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Oct 2019, 12:38 PM
Updated : 5 Oct 2019, 01:31 PM

একই অনুষ্ঠানে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত নির্মাতা অমিতাভ রেজা চৌধুরী সিনেমা নির্মাণে সরকারি অনুদান দেওয়ার ক্ষেত্রে ঘুষ দাবির অভিযোগ তোলেন।

শনিবার চট্টগ্রামের প্রথম সিনেপ্লেক্স সিলভার স্ক্রিন-এর বর্ষপূর্তিতে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

তিনি বলেন, “চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য ৬০ লাখ টাকা কম। বোম্বেতে স্ক্রিপ্ট রাইটাররাও অনেক টাকা নেন। চলচ্চিত্রের জন্য বছরে পাঁচ কোটি টাকা দেওয়া হয়। এটা বছরে ১০ কোটি টাকা করে দিতে চাই।

“একটা ছবিতে কমপক্ষে ৭৫ লাখ টাকা করে দেওয়া যায় কি না সেটা ভাবছি। সিনেমা হলগুলো যাতে মোডিফিকেশনের জন্য ঋণ পায় এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথেও আলোচনা করেছি।”

বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রেও অনুদান দেওয়ার পরিকল্পনা তুলে ধরে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “অনুদানের ছবি বেশিরভাগই আর্ট ফিল্ম। এগুলো খুব কমই হলে মুক্তি দেওয়া হয়। বেশিরভাগ টেলিভিশনের কাছে বিক্রি করে দেয়। এতে তাদের লাভ হয়।

“এখন থেকে কর্মাশিয়াল মুভিকেও আমরা অনুদান দেব। শর্ত থাকবে সেগুলো অবশ্যই হলে মুক্তি দিতে হবে। তবে আর্ট ফিল্মকেও অনুদান দেব। না হলে আর্ট ফিল্ম হবে না। এগুলোর প্রয়োজন আছে। তবে পার্সেন্টেজ ঠিক করে দেব।”

দেশের বিভিন্ন জেলায় তথ্য কেন্দ্র করা হবে জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, “এ রকম ২৫-৩০টি করব। এসব তথ্যকেন্দ্রে একটি করে ৩০০ আসনের হল থাকবে। জমি পেলে চট্টগ্রামে এ রকম দুটি করব।”

মন্ত্রীর আগে বক্তব্যে নির্মাতা অমিতাভ রেজা চৌধুরী বলেন, “সরকার সিনেমার পেছনে যে পরিমাণ টাকা দিচ্ছে এটা কল্পনাতীত। আমাদের মতো গরিব দেশে ৬০ লক্ষ টাকা করে সিনেমার অনুদান দেওয়া হয়। বছরে তিনটা করে ছবি যদি দেওয়া হয় তাহলে গত পাঁচ বছরে ১৫টা সিনেমা হয়। কই এই ১৫টা সিনেমা?

“কথা হচ্ছে এই ছবিগুলো কিউরেট করা হয় না। এ ছবিগুলো কোথায়? কেন আমরা এগুলো দেখি না? এ ছবিগুলোতে তো ব্যবসা করার কোনো উদ্দেশ্য নাই। তাহলে কেন ছবিগুলোকে ঠিকমতো কিউরেট করা হচ্ছে না? প্রবলেম ইজ কিউরেটিং।”

‘আয়নাবাজি’ চলচ্চিত্রের পরিচালক অমিতাভ বলেন, “আমি গত তিন বছর ধরে অনুদানের জন্য জমা দিয়ে রাখলাম। যদিও আমি পাই নাই। অনেক বছর আগে, আমার আসলে ঠিক মনে নাই। আমাকে বলা হয়েছিল যে, পাঁচ লক্ষ টাকা দেন অনুদানের টাকা পেয়ে যাবেন।

“আমি বলেছি, লাগবে না মাফ করেন। এর চেয়ে বিজ্ঞাপন বানাই অনেক ভালো আছি।”

‘অদ্ভূত ন্যারেটিভ ও দুর্নীতির’ কারণে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্প দাঁড়াচ্ছে না মন্তব্য করে অমিতাভ রেজা বলেন, “আমরা একটা অদ্ভূত ন্যারেটিভ তৈরি করছি। ওই ন্যারেটিভের কারণে আমরা মনে করতেছি, আমাদের কোনো কালচার নাই, কোনো গল্প নাই। আমাদের টেলিভিশন প্রডাকশনের গল্পও ভারতীয় চলচ্চিত্রের চেয়ে অনেক শক্তিশালী গল্প বলে।

“আমাদের ভয় কিসের? আমাদের পায়ের নিচের যে মাটি সেটা আমরা দেখি না। পাশের বাসার বউকে ভাল্লাগে বেশি। এই পরকীয়াটা বাদ দিয়ে আমরা যদি নিজের গল্পটা হাজির করতে পারি তাহলে আমাদের সিনেমা দাঁড়িয়ে যাবে।”

দুর্নীতির উদাহরণ দিয়ে অমিতাভ রেজা বলেন, “এফডিসিতে ক্যামেরা আনা হয়, ট্রাইপডটা আনা হয় না। এফডিসিতে যে কালার কালেকশন দ্যা ভিঞ্চি আনা হয়েছে- অসাধারণ, মনিটর লাগানো হয়েছে স্যামসাংয়ের। ভাই এত চুরি করলে তো প্রবলেম!

“বুঝতে পারি অদ্ভূত কোনো করাপশন চলতেছে। সরকার প্রচুর টাকা বিনিয়োগ করছে। সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও মাঝখানের কিছু চোর-ছ্যাঁচ্চড়ের কারণে সিনেমা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদের অসম্ভব মেধাবী ছেলেরা আছে ছবি বানানোর জন্য। তারা যে কোনো কিছু করতে প্রস্তুত।”

এফডিসির বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, “এটি সত্য যে এফডিসিতে যন্ত্রপাতি কেনা হয় কিন্তু সেগুলোর সঠিক ব্যবহার নেই। দেখা গেল যন্ত্রপাতি কেনার সময় কিছু পার্টস মিসিং। সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এ রকম হয়ে আসছে।

“এগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এফডিসিতেও আগের মতো এসব অনিয়ম চলবে না।”

সেমিনারে ‘বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্প এবং বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ সম্পাদক রুশো মাহমুদ।

সাংবাদিক কামরুল হাসান বাদলের সঞ্চালনায় সেমিনারে আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেক, পূর্বকোণ সম্পাদক ম. রমিজউদ্দিন চৌধুরী, প্রাবন্ধিক আবুল মোমেন, সাংসদ ওয়াসিকা আয়শা খান, আরটিভির সিইও আশিক রহমান ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ওমর কায়সার।