তা না পেলে বাংলাদেশ থেকে রাখাইনে যাবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন ১১ লাখের বেশি শরণার্থীর পক্ষে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সঙ্গে আলোচনায় বসা ৩৫ রোহিঙ্গা।
রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলোচনার পর মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ে বলেছেন, মিয়ানমারে ফেরত গেলে রোহিঙ্গারা নাগরিকত্বের সুযোগসহ কী কী পাবেন, তা বুঝিয়েছেন তিনি।
নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া লাখ লাখ শরণার্থীর প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার নিয়ে আলোচনায় আসা মিন্ট থোয়ে নেতৃত্বাধীন মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলটি শনিবার কক্সবাজার পৌঁছায়।
মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন অভিযান শুরুর পর ২০১৭ সালের অগাস্ট থেকে পরবর্তী সময়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। তার আগে গত কয়েক দশকে আসে আরও চার লাখ রোহিঙ্গা।
আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করে। ২০১৮ সালের নভেম্বরে প্রত্যাবাসন শুরুর প্রস্তুতিও নিয়েছিল বাংলাদেশ।
কিন্তু মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে রোহিঙ্গাদের মনে আস্থা না ফেরায় এবং তারা কেউ ফিরে যেতে রাজি না হওয়ায় সেই পরিকল্পনা অনির্দিষ্টকালের জন্য ঝুলে যায়।
প্রত্যাবাসন শুরুতে দেরির জন্য বাংলাদেশ মিয়ানমারকে দায়ী করার মধ্যে দুই দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের কয়েক দফা বৈঠকের পর কক্সবাজারে গিয়ে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে এল প্রতিনিধি দলটি।
মিন্ট থোয়ে নেতৃত্বাধীন ১৯ সদস্যের প্রতিনিধি দলটি শনিবার কক্সবাজার পৌঁছার পর উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গাদের ৩৫ জনের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দুদফা বৈঠক করেন।
কড়া নিরাপত্তার মধ্যে রোববার সকালেও কুতুপালংয়ে তৃতীয় দফায় বৈঠক করেন তারা। টানা ২ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা বৈঠকে মিয়ানমারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিজেদের নানা দাবি নিজেদের ভাষায় তুলে ধরেন রোহিঙ্গারা।
রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ রয়টার্সকে বলেন, “আমরা তাদের বলেছি, মিয়ানমার আমাদের রোহিঙ্গা হিসেবে না মানলে আমরা ফেরত যাব না।”
সেই সঙ্গে ফেরত যাওয়ার পর নিরাপত্তার সঙ্গে বসবাসের নিশ্চয়তাও চেয়েছেন রোহিঙ্গা নেতারা।
“আমরা নাগরিকত্ব চাই, আমরা আমাদের মর্যাদা চাই। আমরা তাদের বিশ্বাস করি না, সেজন্য আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়ায় আমাদের নিরাপত্তা দিতে হবে।”
নিজ ভূমে ফিরে যেতে ইচ্ছুক হলেও এসব দাবি পূরণ না হলে বাংলাদেশ থেকে না যাওয়ার কথা জানান দিল মোহাম্মদ।
মিয়ানমারের যে নাগরিকত্ব আইন রয়েছে, তাতে রোহিঙ্গাদের পূর্ণ নাগরিকত্ব পাওয়া দুষ্কর। দেশটির ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের জন্মগত নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ নেই তবে ‘অবস্থানগত নাগরিক’ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। আর রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের আদিবাসী গোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃতি দিতেও নারাজ মিয়ানমার সরকার।
মিন্ট থোয়ে বলেন, ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে যারা তিন পুরুষ ধরে মিয়ানমারে বসবাস করেন, তারা এক্ষেত্রে সুযোগ পাবেন।
রাখাইন থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ৪৪০টি হিন্দু পরিবারকে ফেরত নিতেও রাজি হওয়ার কথা জানান মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব।
মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলটি হিন্দু শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শনেও যান।
মিন্ট থোয়ে বলেন, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলোচনা আরও হবে। বিষয়টি নিয়ে তাদের আঞ্চলিক জোট আসিয়ানের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও আলোচনা হবে।
মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলটি ঢাকায় ফেরার পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও আলোচনায় বসবে।