আওয়ামী লীগে ‘সুযোগ সন্ধানীর’ জায়গা নেই: হাছান মাহমুদ

দলে থাকা ‘সুযোগ সন্ধানীদের’ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

চট্টগ্রাম ব্যুরোউত্তম সেনগুপ্তবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 July 2019, 02:30 PM
Updated : 17 July 2019, 02:31 PM

বুধবার নগরীর এস এস খালেদ সড়কের একটি কনভেনশন সেন্টারে ‘গণতন্ত্র বন্দি দিবস’ উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় এই হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

সভায় হাছান মাহমুদ বলেন, “দল পরপর তিনবার ক্ষমতায়, অনেক সুযোগ সন্ধানী ঢুকেছে।

“যারা ২১ বছর বুকে পাথর বেঁধে সংগ্রাম করেছে, যাদের কারণে দল ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসেছে, ত্যাগী, দল অন্তঃপ্রাণ ও মূল্যবোধ যাদের জাগ্রত, সে ধরনের কর্মী দরকার। সুযোগ সন্ধানী দরকার নাই।”

তিনি বলেন, “গণসংগঠন করার অধিকার সবার আছে। পদ পাওয়ার অধিকার সবার নেই। পদ দিতে হবে বেছে বেছে; যারা সত্যিকারের কর্মী তাদের।

“যারা সুযোগ সন্ধানী এবং যাদের কারণে দলের বদনাম হয় তাদের চিহ্নিত করুন। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।”

জনসমর্থন ধরে রাখায় গুরুত্ব দিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, “১৯৭৪-৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের আগে কেউ ভাবেনি বঙ্গবন্ধুকে এভাবে হত্যা করা হতে পারে। তাই পরপর তিনবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় আছি বলে আমাদের ভাবার কোনো কারণ নেই যে দিন সবসময় এভাবেই যাবে। সেজন্যই যে কোনো পরিস্থিতির জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।

“একদিনও জনগণের সমর্থন ব্যাতিরেকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকতে চাই না। জনসমর্থন অব্যাহতভাবে পেতে হলে জনগণের পাশে থাকতে হবে। শেখ হাসিনা জনগণের পাশে ছিলেন বলেই জনগণ তার পাশে আছে। শেখ হাসিনার কারণেই আমরা পরপর তিনবার রাষ্ট্রক্ষমতায়। অন্য কোনো কারণে নয়।”

আলোচনা সভায় নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, “এখন রাজনীতিবিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু গুণগত মানে আমরা এগিয়ে যেতে পারিনি। এটা আমাদের সীমাবদ্ধতা, চিন্তার বিষয়।

“ভবিষ্যতে আমাদের শূন্য পদ যারা পূরণ করবেন, তারা আরও বেশি যোগ্য-দক্ষ হলেই প্রধানমন্ত্রীর উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।”

তিনি বলেন, “দল ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর অনেকে সম্পৃক্ত হয়েছেন, দুঃসময়ে আপনারা ছিলেন না। এই সুদিন নাও থাকতে পারে। দুঃসময়ের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

“আগামীতে যদি পরিস্থিতির উদ্ভব হয় তরুণ প্রজন্মের ত্যাগের কারণেই দুঃসময় মোকাবেলা সম্ভব হবে। তাই ভোগবিলাসী মনোভাব ত্যাগ করতে হবে। ত্যাগী মনোভাব ধারণ করতে হবে।”

নগর কমিটির সহ-সভাপতি নঈম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “ষড়যন্ত্র চলছে। বিএনপি-জামায়াতের প্রেতাত্মারা দলে প্রবেশের চেষ্টা করছে। দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো।

“আজকে এখান মধু আছে। নেতা-এমপি-মন্ত্রী হওয়া যায়, মধুর জন্য অনেকে আস্ফালন করবে। কিন্তু মৌমাছি হুল দিলে কয়জন থাকবে? ঘরের শত্রু বিভীষণ। এক এগারোর সময় অনেকে চলে গিয়েছিল। আজ স্লোগানের জন্য বক্তৃতা দেওয়ার অবস্থা নেই। দুঃসময়ে তারা থাকবে?”

২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির পর ১৬ জুলাই শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই দিনটি ‘গণতন্ত্র বন্দি দিবস’ হিসেবে পালন করছে আওয়ামী লীগ।

’ভিক্ষুকের হাতেও মোবাইল’

দিন বদল হয়ে গেছে দাবি করে হাছান মাহমুদ বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়ে গেছে। ভিক্ষুকের হাতেও আজকে মোবাইল ফোন আছে।

“রিকশাওয়ালার হাতে, যে বর্ণমালা জানে না তার হাতেও মোবাইল আছে। এটা কী? এটা ডিজিটাল বাংলাদেশ। দিন বদল হয়ে গেছে। খালি পায়ে কেউ আর হাঁটে না। ছেঁড়া কাপড় পড়া মানুষ দেখা যায় না। সন্ধ্যায় বা ভরদুপুরে - মা আমাকে বাসি ভাত দেন, এই ডাক শোনা যায় না।”

তিনি বলেন, “আমরা বলেছি গ্রামকে শহর বানাব। গ্রামে সব সুবিধা পৌঁছে গেছে। ডিশ আছে, ইন্টারনেট আছে। গ্রামে সোলার বাতি জ্বলছে। গ্রামের ছেলেরা এখন শহরের ছেলেদের চেয়েও স্মার্ট।”

কুমিল্লায় আদালতে আসামির হাতে আরেক আসামির খুনের ঘটনায় বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী আহমেদের বক্তব্য নিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, এই ঘটনার সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কোনো সম্পর্ক নেই, এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা।

“কারণে-অকারণে সংবাদ সম্মেলন করে সরকারের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করা পরিহার করুন। সন্দেহ হয়, কোনোদিন তিনি বলবেন, স্বামী-স্ত্রীতে যে ঝগড়া বেড়ে গেছে এটাও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি।”

বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের তারিখ ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “অতীতে চেয়ার ছোড়াছুড়ি করে নিজেরা নিজেদের সমাবেশ পণ্ড করেছেন। এবার আশা করি তা করবেন না। নিজেরা অন্তত নিজেদের সমাবেশ সফল করার যোগ্যতা অর্জন করুন।”

নগর কমিপির প্রচার সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুকের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন সহ-সভাপতি জহিরুল আলম দোভাষ ডলফিন, ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, সুনীল সরকার ও আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু।