পাহাড় ধসে নিহতদের স্মরণে মঙ্গলবার শেষ বিকেলে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক নাগরিক স্মরণ সভা ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলন কর্মসূচি থেকে এ দাবি জানানো হয়।
১১ জুনকে ‘পাহাড় রক্ষা দিবস’ ঘোষণার দাবিতে প্রতি বছর পরিবেশবাদী সংগঠন পিপলস ভয়েস, কারিতাস চট্টগ্রাম অঞ্চল ও বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস) একযোগে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে পিপলস ভয়েসের সভাপতি শরীফ চৌহান বলেন, ২০০৭ সালে পাহাড় ধসে প্রাণহানির পর পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি কিছু সুপারিশ করেছিল। সেসব সুপারিশের একটিও বাস্তবায়ন হয়নি।
“আমরা প্রতিবছর ১১ জুন কর্মসূচি পালন করে বিভিন্ন দাবি দাওয়া তুলে ধরি। আমাদের একটি দাবিও মানা হয়নি। আমরা প্রতিবছর বলে যাচ্ছি, কিন্তু তাদের শোনাতে পারছি না।”
তিনি বলেন, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছাড়া পাহাড় রক্ষা সম্ভব না, প্রাণহানিও ঠেকানো যাবে না। প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে পাহাড় কাটা থামবে না, সবার আগে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরী কমিটির সভাপতি ডা. এ কিউ এম সিরাজুল ইসলাম বলেন, “যারা প্রশাসনের বিভিন্ন চেয়ারে বসে আছেন তারা জনসেবার কথা বলেন। যারা মন্ত্রী-এমপি হয়েছেন তারাও জনগণের সেবা করার কথা বলেন। কিন্তু যারা ক্ষমতার লড়াই করেন তাদের তো রাজপথে দেখি না।
“একযুগ ধরে মানুষের কথা তারা শুনবেন না, মানুষের আকুতি তাদের কাছে পৌঁছাবে না, এটা কেমন কথা! এভাবে আর চলতে দেওয়া যায় না। যারা মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে, তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। মানুষ যখন জেগে উঠবে, তার চেয়ে বড় শক্তি আর কিছু নেই।”
পরিবেশবিদ অধ্যাপক ড. ইদ্রিস আলী বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের যে হিসাব প্রশাসন দেয়, তার সঙ্গে জনগণের হিসাবের ফারাক আছে।
“১৩ বছরে যাদের দিয়ে কিছু হয়নি সেই প্রশাসনিক লোকজন দিয়ে অগ্রসরমান বাংলাদেশের মানুষের যে প্রত্যাশা- তা পূরণ হওয়ার নয়। আশা করি প্রধানমন্ত্রী অবিলম্বে জনবান্ধব লোকজনকে এ বিষয়ে দায়িত্ব দেবেন।”
“পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি আসলে ‘কুম্ভকর্ণ’ কমিটি। প্রতিবছর বর্ষা এলে তাদের ঘুম ভাঙে আর একটি বৈঠক করে বিভিন্ন জ্ঞান বর্ষণ করে। প্রশাসনের চোখের সামনে কেন পাহাড় কাটা বন্ধ হয় না? কারা পাহাড়ে গ্যাস, পানি, বিদ্যুতের সংযোগ দেয়?তাদের একজনেরও কি বিচার হয়েছে?”
পিপলস ভয়েসের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আতিকুর রহমানের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে স্মরণসভায় বক্তব্য দেন আবৃত্তি শিল্পী রাশেদ হাসান, কারিতাস চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক জেমস গোমেজ এবং ভ্রমণ বিষয়ক পোর্টাল ‘ট্র্যাভেলিং চট্টগ্রাম’ এর প্রকাশক কাজী মমতাজুল ইসলাম।
খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরী, যুব মৈত্রী, ছাত্র মৈত্রী, প্রমা, উৎস, কত্থক থিয়েটার, আমরা রাঙ্গুনিয়াবাসী ও লিবার্টি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এ আয়োজনে সংহতি জানায়।
২০০৭ সালের ১১ জুন চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে নিহত ১২৭ জন ও ২০১৭ সালের ১৩ জুন রাঙামাটি-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে নিহত ১৫৬ জনের স্মরণ করা হয় এই কর্মসূচিতে। সভা শেষে নিহতদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বলন এবং দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।