নর্থ সাউথের শিক্ষার্থী পায়েল হত্যা মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানি ২৭ মার্চ

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাইদুর রহমান পায়েল হত্যা মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য ২৭ মার্চ দিন ধার্য করেছে চট্টগ্রামের বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 March 2019, 09:22 AM
Updated : 20 March 2019, 09:28 AM

বুধবার ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত বিচারক আবদুল হালিম এ আদেশ দেন। তিনি চট্টগ্রামের সন্ত্রাস বিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারকও।

পাশাপাশি হত্যা মামলার তিন আসামি হানিফ পরিবহনের বাসের চালক জামাল হোসেন, চালকের সহকারী ফয়সাল হোসেন ও সুপারভাইজের জনির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

এসব তথ্য পায়েলের আইনজীবী মনজুর আহমেদ আনছারী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।

তিনি বলেন, “আসামিরা আজ অনুপস্থিত থেকে সময় প্রার্থনা করেছিল। আদালত তা নাকচ করেছেন।”

তিন আসামিই উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন।

আইনজীবী মনজুর আহমেদ আনছারী বলেন, “নিয়ম অনুসারে নিম্ন আদালতে মামলার কার্যক্রম শুরু হওয়ায় আসামিদের আত্মসমর্পণ করে জামিনের কাগজপত্র জমা দেওয়ার কথা।

“তারা আজ জামিননামার সাথে যে কাগজপত্র জমা দেয় তাতে জিম্মাদারের ভোটার আইডি জাল। জিম্মাদারের নাম শিউলি বেগম। কিন্তু জমা দেওয়া আইডিতে ছবিটি একজন পুরুষের। এরপর আদালত তাদের জামিন বাতিলের নির্দেশ দেন।”

বাম থেকে আসামি বাসচালক জামাল হোসেন, তার সহকারী ফয়সাল হোসেন ও বাসের সুপারভাইজর জনি

পায়েলের মামা ও মামলার সাক্ষী ফাহাদ চৌধুরী দিপু বলেন, “তারা আমার নিরীহ ভাগ্নেকে খুন করার পর নিজেরাই আদালতে জবানবন্দি দিয়ে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেছে।

“অথচ জামিনের কাগজপত্রের সাথে জাল আইডি আদালতে জমা দিয়েছে। নানা কৌশলে অপরাধীরা পার পেয়ে যেতে চাইছে। আমরা পায়েল হত্যার দ্রুত ও ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করি।”

গত বছরের ২১ জুলাই রাতে দুই বন্ধু আকিবুর রহমান আদর ও মহিউদ্দিনের সঙ্গে হানিফ পরিবহনের একটি বাসে করে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার পথে রওনা হওয়ার পর নিখোঁজ হন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. সাইদুর রহমান পায়েল।

দুইদিন পর ২৩ জুলাই মুন্সিগঞ্জ উপজেলার ভাটেরচর সেতুর নিচের খাল থেকে পায়েলের লাশ উদ্ধার করে গজারিয়া থানা পুলিশ।

এরপর হানিফ পরিবহনের ওই বাসের সুপারভাইজার জনিকে ঢাকার মতিঝিল এবং চালক জামাল হোসেন ও তার সহকারী ফয়সাল হোসেনকে আরামবাগ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আদালতে তাদের জবানবন্দির বরাতে পুলিশ জানায়, গজারিয়া এলাকায় গাড়ি যানজটে পড়ায় প্রসাব করার কথা বলে বাস থেকে নেমেছিলেন পায়েল। বাস চলতে শুরু করলে তিনি দৌড়ে এসে ওঠার সময় দরজার সঙ্গে ধাক্কা লেগে সংজ্ঞা হারান। নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে দেখে তাকে হাসপাতালে নেওয়ার বদলে দায় এড়াতে ভাটেরচর সেতু থেকে নিচের খালে ফেলে বাস নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন আসামিরা।

পায়েলকে অচেতন অবস্থায় সেতু থেকে খালে ফেলে দেওয়ার আগে পরিচয় লুকাতে বাসচালক তার মুখ থেঁতলে দিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ করেছে তার পরিবার।

পায়েলের বাবা গোলাম মাওলা ও বড় ভাই গোলাম মোস্তফা কাতার প্রবাসী। বড় ভাইয়ের সন্তান হওয়ার খবরে জুলাই মাসে চট্টগ্রামে গিয়েছিলেন পায়েল। সেখান থেকে ঢাকায় ফেরার পথেই ঘটে ওই ঘটনা।

পায়েলের মৃত্যুর পর তার মামা গোলাম সরোয়ার্দী বিপ্লব বাদী হয়ে চালক জামাল হোসেন, তার সহকারী ফয়সাল হোসেন ও সুপারভাইজার জনিকে আসামি করে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ পঞ্চম সেমিস্টারের ছাত্র পায়েলের বাসা চট্টগ্রামের হালিশহর সিডিএ আবাসিক এলাকায়।

গজারিয়া থানার পুলিশ ওই তিন আসামির বিরুদ্ধে গত ৩ অক্টোবর অভিযোগপত্র জমা দেয়।

পরে অভিযোগ গঠনের মধ্যে দিয়ে মুসিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলার বিচার কাজ শুরু হলেও পায়েলের পরিবারের আবেদনে গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ মামলাটি চট্টগ্রামের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরে প্রজ্ঞাপন জারি করে।

প্রজ্ঞাপনটি ১৬ জানুয়ারি পায় পায়েলের পরিবার। এর আগে ১৮ ডিসেম্বর উচ্চ আদালত থেকে জামিনে যান বাসচালক জামাল হোসেন ও সহকারী ফয়সাল হোসেন। পরে সহকারী জনিও উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেন।=