আপত্তি সত্ত্বেও চবির বঙ্গবন্ধু চেয়ারে উপাচার্য

আপত্তি সত্ত্বেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’র দায়িত্ব নিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 March 2019, 04:22 PM
Updated : 7 March 2019, 04:22 PM

বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে উপাচার্য প্রথমবারের মতো চালু হওয়া ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’র দায়িত্ব নেন।

কয়েকজন সিন্ডিকেট সদস্য ও উপ-উপাচার্য সিন্ডিকেট সভায় আপত্তি দিলেও একাডেমিক কাউন্সিলের কোনো মতামত না নিয়ে সিন্ডিকেট সভায় এটি পঠিয়ে দেওয়ায় যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।

তবে উপাচার্য ইফতেখার চৌধুরী বলছেন, ‘নিয়ম মেনেই’ নীতিমালা প্রণয়ন কমিটি তাকে মনোনীত করেছে।

বঙ্গবন্ধু চেয়ারের মনোনয়ন সম্পর্কে উপ-উপাচার্য অ্যধাপক শিরীন আখতার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘এটি সম্মানিত চেয়ার। উপাচার্যের এ চেয়ারে মনোনীত হওয়ার প্রক্রিয়াটি নিয়ম বহির্ভূত হওয়ায় আমি গত ২৩ ফেব্রুয়ারি হওয়া ৫২০তম সিন্ডিকেটে এ ব্যাপারে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছিলাম।”

তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধু চেয়ার অনুমোদনের ব্যাপারে একাডেমিক কাউন্সিল সুপারিশ করেছে। কিন্তু ওই চেয়ারের নীতিমালা তৈরি হওয়ার পর একাডেমিক কাউন্সিলের কোনো মতামত না নিয়ে রিপোর্ট আকারে সিন্ডিকেটে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সুতরাং বিষয়টি যথাযথ প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়নি।”

গত বছরের ২৭ অগাস্ট সিন্ডিকেট সভায় ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ নিয়ে নির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়। গত ৩ জানুয়ারি নির্বাহী কমিটির প্রথম সভায় এই পদ সৃষ্টি এবং এ সংক্রান্ত নীতিমালা অনুমোদন দেওয়া হয়।

একই দিন চার বছরের জন্য উপাচার্যকে এ পদে নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশও করা হয়। পরে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি কমিটির দ্বিতীয় সভায় একজন সদস্যের আপত্তির পরও উপাচার্যকে ওই পদে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়।

বিশিষ্টজনদের নামে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে 'চেয়ার অধ্যাপক' পদ রয়েছে। শিক্ষা ও গবেষণার প্রসারে এসব পদে সম্মানিত ব্যক্তিরা নিয়োগ পান। যেখানে নিয়োগপ্রাপ্ত অধ্যাপক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গবেষণা করে থাকেন। বাংলাদেশের উন্নয়ন, রাজনীতি, ইতিহাস প্রভৃতি বিষয়ে অধ্যাপক সমমর্যাদাসম্পন্ন একজন বিশিষ্ট গবেষক এ চেয়ারে নিয়োগ পেয়ে থাকেন।

তিনি অধ্যাপকের সমান বেতন-ভাতা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকার সুবিধা পান। এক বছরের মেয়াদ হলেও ক্ষেত্র বিশেষে তা দু'বছর করার সুযোগ রয়েছে।

বঙ্গবন্ধু চেয়ারের নীতিমালার ২(ঘ) ধারায় উল্লেখ রয়েছে, এই চেয়ারের দায়িত্ব নিতে হলে যোগ্যতা হিসেবে ‘বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের ইতিহাস বিষয়ে ২০ বছরের গবষেণা থাকতে হবে। সেই সাথে আন্তর্জাতিক মানের জার্নালে একই বিষয়ে অন্তত ১০টি নিবন্ধ/প্রবন্ধ/বুকচ্যাপ্টার থাকতে হবে।

এ ছাড়া নীতিমালার ৩(ঙ) ধারায় বলা হয়েছে, এই পদের নিয়োগপ্রাপ্ত অধ্যাপক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত অধ্যাপকের অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন না। পদাধিকারবলে একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য হতে পারবেন না। তিনি কোন প্রশাসনিক পর্ষদের সদস্য এবং প্রশাসনিকভাবে দায়িত্ব নিতে পারবেন না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. সুলতান আহমদ বিডিনিউজ টোয়ান্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সিন্ডিকেটে এ পদে (বঙ্গবন্ধু চেয়ার) কারও নিয়োগের ব্যাপারে আলোচনা হয়নি। শুধু এ পদ পরিচালনার জন্য যে নীতিমালা প্রয়োজন, তা অনুমোদন করা হয়েছে। যেহেতু বিষয়টি রিপোর্ট আকারে সিন্ডিকেটে আনা হয়েছে। সেহেতু এ বিষয়ে বিশদ আলোচনা করা সম্ভব হয়নি। বিষয়টি সিন্ডিকেটে এজেন্ডা আকারে উত্থাপন করলে আলোচনা সম্ভব ছিল।”

বঙ্গবন্ধু চেয়ারে নিজেই দায়িত্ব নেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ইফতেখার চৌধুরী বলেন, “এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো স্ট্যাটিউড পদ নয়। এটি একটি সম্মান। আমাদের যে নীতিমালা করা হয়েছে তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে করা। যারা কমিটিতে ছিলেন, তারা আমাকে এই পদে মনোনীত করেন।”

নিয়োগ পাওয়ার যোগ্যতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “গত ১৪-১৫ বছর ধরে দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখালেখি করছি। যা আমার কাছে সংরক্ষিত আছে।”

নীতিমালায় আন্তর্জাতিক প্রকাশনায় প্রবন্ধ থাকার বিষয়টি তুলে ধরলে অধ্যাপক ইফতেখার বলেন, “নীতিমালায় আন্তর্জাতিক শব্দটি আছে কি না, আমার জানা নেই। যারা নীতিমালা করেছে তারাই আমাকে এই চেয়ার অফার করেছেন।”