জাদুঘরের নামফলকে ‘জিয়া’ না ফিরলে স্মারকলিপি, মানববন্ধন

চট্টগ্রামে জিয়া স্মৃতি জাদুঘরের নামফলক থেকে মুছে দেওয়া জিয়ার নাম পুনরায় স্থাপনের দাবি জানিয়ে নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত থেকেও সরে আসার দাবি জানিয়েছেন চট্টগ্রাম নগর বিএনপির নেতারা।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Feb 2019, 08:32 AM
Updated : 19 Feb 2019, 08:43 AM

মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানান তারা।

আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জাদুঘরের নামফলক আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়া না হলে পরদিন সিএমপি কমিশনাকে স্মারকলিপি ও ২৬ ফেব্রুয়ারি মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে।

সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সভাপতি শাহাদাত হোসেন বলেন, নির্বাচনে ভোট জালিয়াতি থেকে দৃষ্টি ভিন্নখাতে নিতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসের পাশে জিয়া স্মৃতি জাদুঘরের নাম পরিবর্তনের জন্য মন্ত্রিসভায় প্রস্তাব তোলা হয়। প্রস্তাব তোলার পরের দিন ‘মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের ছাত্র ফোরামের’ নামে কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসী জিয়া জাদুঘরের নামফলক থেকে প্রকাশ্যে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়ার নাম মুছে ফেলে।   

“সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে এভাবে দিনের বেলায় নামফলক মুছে ফেলার সময় পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। পরদিন পুলিশের উপস্থিতিতে জাদুঘরের সামনে শহীদ জিয়ার মুর‌্যাল কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়।”

রাষ্ট্রযন্ত্রের মদদেই এই কাজ হয়েছে বলে মনে করেন বিএনপি নেতা শাহাদাত।

গত ১১ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিসভার বৈঠকে চট্টগ্রাম-৯ আসনের সাংসদ মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল চট্টগ্রামের জিয়া স্মৃতি জাদুঘরের নাম পাল্টে ‘মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর’ করার প্রস্তাব করেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

নওফেলের প্রস্তাবের পক্ষে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বৈঠকে বক্তব্য রাখেন এবং প্রধানমন্ত্রী প্রস্তাবে নীতিগত সমর্থন দেন বলে গণমাধ্যমের খবর।

ওই প্রস্তাবের পরদিন জাদুঘরের নামফলকে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নাম কালো কালি দিয়ে মুছে দেয় ছাত্র ফোরাম নামে একটি সংগঠন।

সংগঠনটির সভাপতি পদে রয়েছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সাবেক কার্যকরী সদস্য আব্দুর রহিম শামীম। আর নগর ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক রাহুল দাশ এর সাধারণ সম্পাদক।

জিয়ার নাম মুছে জাদুঘর এলাকায় সাংসদ নওফেলের ছবি টাঙিয়ে দেওয়ার কথা উল্লেখ করে বিএনপি নেতা শাহাদাত বলেন, “তিনি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। তার কাছ থেকে আমরা অনেক ভালো কিছু আশা করেছিলাম।”

জিয়ার নাম মুছে দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করা হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “জিয়াউর রহমান একজন সেক্টর কমান্ডার ও জেড ফোর্সের অধিনায়ক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদান রাখায় তাকে বীর উত্তম উপাধিতে ভূষিত করেছেন।

“আওয়ামী লীগ নেতারা মুখে মুক্তিযুদ্ধে চেতনার কথা বলেন, কিন্তু তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করেন না। সেজন্য একজন মুক্তিযোদ্ধা ও সেক্টর কমান্ডারের নামে প্রতিষ্ঠিত জিয়া জাদুঘরের নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত ও নামফলক মুছে ফেলার মতো ধৃষ্টতা স্থাপন করে মুক্তিযুদ্ধকে অপমাণিত করেছেন। তাদের এ উচ্ছৃঙ্খল কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের রাজনীতিকে বিপজ্জনক যুগে নিয়ে যাচ্ছে।”

শাহাদাত জানান, ঘটনার পরদিন তারা জাদুঘরের দায়িত্বে থাকা মতিউর রহমানের সাথে দেখা করে আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তা আগের রূপে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কল্যাণ পার্টির সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহীম, নগর বিএনপির সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান, সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর।

কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি বদরুল আনোয়ারসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংসগঠনের নেতারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।