নেত্রী ঐক্য চান: চট্টগ্রামে কাদের

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামে দলীয় নেতাদের মধ্যে ঐক্য দেখতে চান বলে জানিয়েছেন ওবায়দুল কাদের।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Jan 2018, 04:03 PM
Updated : 14 Jan 2018, 05:17 PM

রোববার বিকালে চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে প্রয়াত মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর শোকসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন তিনি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, “সকাল বেলা আমি যখন নেত্রীকে মেসেজ দিয়েছি যে, আমরা আজ চট্টগ্রামের বীর মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্মরণ সভায় এসেছি। তিনি বলেছিলেন, শুধু একটা কথা বলবে, মহিউদ্দিন চৌধুরীর অবর্তমানে আজকের এই সময়ে আমি চট্টগ্রামের নেতাকর্মীদের মধ্যে ঐক্য চাই।

“নেত্রী ঐক্য চান। মহিউদ্দিন চৌধুরীর আত্মাকে যদি আমরা শ্রদ্ধা নিবেদন করতে চাই তাহলে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। দুঃসময়ে দুর্দিনে মহিউদ্দিন চৌধুরী যেমন চট্টগ্রামবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন আজকে শেখ হাসিনাও বঙ্গবন্ধুর দুর্ভেদ্য ঘাঁটি এই চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ অগ্রযাত্রা প্রত্যাশা করেছেন।”

দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, “আপনারা কি নেত্রীর এ আশা পূর্ণ করবেন? আপনারা কি ঐক্যবদ্ধ থাকবেন? আওয়ামী লীগ যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে চট্টগ্রামে কোনো শক্তি আওয়ামী লীগের বিজয় ঠেকাতে পারবে না। আপনারা ঐক্যবদ্ধ হোন।

“চট্টগ্রামকে আবারও আন্দোলন সংগ্রাম আর মুক্তিযুদ্ধের গণতন্ত্রের ঐক্যবদ্ধ দুর্ভেদ্য ঘাঁটিতে পরিণত করুন। আপানাদের কাছে তার আত্মা এটাই আহ্বান জানাচ্ছে।”

তিনি বলেন, “এখানে অনেক নেতা। এই নেতারাই নেতা বানায়। সবাই সংগ্রামী মানুষ। শুধু অনুরোধ করব, কমিটি করতে গিয়ে পকেট কমিটি করবেন না। কমিটি করতে গিয়ে পকেট ভারী করবেন না।

“অনেক দুঃসময়ের কর্মীরা এখনও এখানে কোণঠাসা হয়ে আছে। নগর, উত্তর, দক্ষিণ তিন কমিটির নেতাদের বলব, কমিটিতে জায়গা থাকলে দুঃসময়ের কর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করুন। অনেকে এখানে আছেন, দুঃসময়ে থাকবে না।”

যখন অন্ধকার আর দুর্দিন আসবে তখন ‘সাইবেরিয়ার অতিথি পাখিরা’ থাকবে না বলে নেতাদের সতর্ক করে কাদের বলেন, “যখন ক্ষমতা থাকবে না পাঁচ হাজার পাওয়ারের বাতি জ্বালিয়ে তাদের খুঁজে পাওয়া যাবে না। কাজেই এসব লোককে প্রমোট করে কী লাভ?

“এখানে হানিফ (মাহবুব-উল-আলম হানিফ) আছে, এনামুল হক শামীম আছে, যারা দায়িত্বে আছেন, চট্টগ্রামের অভিজ্ঞ নেতারা আছেন। ছাত্রলীগের ভেতরে যে সমস্যা আছে, অন্যান্য সংগঠনে যে সমস্যা আছে, তা মিটিয়ে ফেলুন। নেত্রী আজ আমাকে নির্দেশে দিয়েছেন, কোনো প্রকার অন্তর্কলহের কারণ যেন সৃষ্টি না হয়।”

মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্মৃতিচারণ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, “যেদিন চট্টগ্রামের প্রাণপুরুষ মহিউদ্দিন চৌধুরী চলে গেলেন সেদিন আমি এই চট্টগ্রামে এসেছিলাম। আমার কাছে মনে হয়েছিল, মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যু জালালাবাদ পাহাড়ের চেয়েও ভারী।

“আজকে তাকে স্মরণ করতে এসেছি। লালদীঘিতে যতবার এসেছি এই মঞ্চে সভাপতি ছিলেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। আজ সেই প্রিয় চট্টলবীর আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। তিনি আজ নেই।”

তিনি বলেন, “মহিউদ্দিন চৌধুরী মরেও বেঁচে আছেন। কেন? হৃদয়ে নাম লিখিয়েছেন। যেমন লিখেছেন বঙ্গবন্ধু মুজিব, যেমন হৃদয়ে নাম লিখে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুর সুকন্যা দেশরত্ন রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা।

“তিনি (মহিউদ্দিন চৌধুরী) জাতীয় নেতা হতে পারতেন। আহ্বান ছিল। নেত্রী তাকে প্রেসিডিয়াম মেম্বার হতে বলেছিলেন। মহিউদ্দিন চৌধুরী জাতীয় নেতা হতে চাননি। তিনি চেয়েছেন চট্টগ্রামের আপন মানুষ হতে। একটা শূন্যতা আচ্ছন্ন করে রেখেছেন আমাদের। এই শূন্যতা কবে পূরণ হবে আমি জানি না।”

দেশে ষড়যন্ত্র চলছে মন্তব্য করে সরকারের এই মন্ত্রী বলেন, “আবারও ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছি। এই সংকটে আবারও আপনাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সাম্প্রদায়িকতার বিষবৃক্ষকে উৎপাটন করে আগামী নির্বাচনে নৌকাকে বিজয়ী করতে হবে। সেটাই হবে মহিউদ্দিন চৌধুরীর প্রতি আপনাদের শ্রদ্ধা নিবেদনের স্বার্থকতা।

“মহিউদ্দিন চৌধুরীর জানাজায় লাখো মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করে তিনি মানুষকে ভালোবাসতেন। মানুষ তাকে ভালোবেসেছে। ঘরের মধ্যে ঘর করবেন না, অনেক হয়েছে। এনাফ ইজ এনাফ। যে নেতা জনতা মানে না ওই নেতার দরকার নেই।”

চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ যৌথভাবে ‘চট্টল বীর এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর শোকসভা’র আয়োজন করে।

দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় সভায় সভাপতিত্ব করেন নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব ‍উদ্দিন চৌধুরী।

গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন।

সভা চলাকালে শ্লোগান ও হাততালি দেওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন নেতারা। মাহবুব-উল-আলম হানিফের বক্তব্যের সময় পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ছাত্রলীগের একটি মিছিল এলে তাতে নেতৃত্ব দেওয়া কয়েকজন চেয়ার তুললে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।

পলিটেকনিক ছাত্রলীগ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। এসময় মহিউদ্দিনের অনুসারী এমইএস কলেজ ছাত্রলীগ পাল্টা শ্লোগান দেয়। পরে নেতাদের হস্তেক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম ও মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, সাংসদ এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, সাংসদ আফসারুল আমীন, আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, আমিনুল ইসলাম আমিন, উত্তর জেলার সভাপতি নুরুল আলম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক এম এ সালাম, দক্ষিণ জেলার সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।