মাদকের আন্তর্জাতিক চোরাকারবারি ছিল বন্দুকযুদ্ধে নিহত ফারুক: র‍্যাব

চট্টগ্রামে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত ফারুক হোসেনকে ‘আন্তর্জাতিক’ মাদক চোরাকারবারি আখ্যায়িত করে র‌্যাব বলছে, মিয়ানমার ও ভারত থেকে ইয়াবা, ফেনসিডিল ও হেরোইন এনে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করতেন তিনি।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Oct 2017, 02:10 PM
Updated : 20 Oct 2017, 02:10 PM

সম্প্রতি বাংলাদেশে গন্ধহীন হলুদ ইয়াবার যেসব চালান পাওয়া সেগুলো ফারুকই প্রথম চট্টগ্রামে নিয়ে আসে বলে জানায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এই বিশেষ ইউনিটি।

বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বন্দরনগরীর কোতোয়ালি থানার আইস ফ্যাক্টরি রোড বরিশাল কলোনি এলাকায় র‌্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় মো. ফারুক হোসেন (৪২)।

চট্টগ্রামের মাদক ব্যবসার অন্যতম নিয়ন্ত্রক ফারুক নগরীতে ‘কালা ফারুক’ ও ‘বাইট্টা ফারুক’ নামে পরিচিত।

র‌্যাব-৭ এর সহকারী পরিচালক এএসপি মিমতানুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ফারুক মিয়ানমার থেকে ইয়াবা এবং ভারত থেকে ফেনসিডিল সরাসরি চট্টগ্রামে নিয়ে আসত। এছাড়া সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে মাদক পাচার করে।

গত সেপ্টেম্বরে র‌্যাব ১০ হাজার ইয়াবার একটি চালান আটক করেছিল, যা লালচে রংয়ের ইয়াবার চেয়ে ভিন্ন এবং গন্ধহীন।

র‌্যাব কর্মকর্তা মিমতানুর জানান, “আটক করা ওই চালানটি ছিল ফারুকের। মাদকের ক্ষেত্রে সচরাচর লালচে ইয়াবার চেয়ে এ হলুদ ইয়াবাটি অনেক দামি এবং এ ইয়াবাগুলো সেই পাচার করে।”

ফারুকের বিরুদ্ধে নগরীর বিভিন্ন থানায় মাদক আইনে ১৮টিরও বেশি মামলা আছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

‘লোকাল বাসের ঘড়ি চোর থেকে মাদক বিক্রেতা’

ফাইল ছবি

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক সময়ে লোকাল বাসে যাত্রীদের ঘরি চুড়ি করতেন ফারুক। পরে সেখান থেকে চোরদের সর্দার বনে যায়।

চুরির পাশাপাশি চট্টগ্রামের মাদক আস্তানা হিসেবে খ্যাত বরিশাল কলোনির মাদক বিক্রেতাদের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়। মাদক পাচার করতে করতে একসময় নিজেও বিক্রেতা হয়ে উঠেন ফারুক।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানায়, আগে বরিশাল কলোনিতে বেশ কয়েকজন মাদক বিক্রি নিয়ন্ত্রণ করলেও ২০১০ সালের দিকে মনির নামে এক মাদক বিক্রেতার সঙ্গে সখ্য গড়ে উঠে ফারুকের। ওই সময় থেকে দুইজন মিলে বরিশাল কলোনি নিয়ন্ত্রণ করতেন।

তবে বছর দুয়েক আগে ‘নিখোঁজ’ হয় মনির। তার নিখোঁজের পর থেকে বরিশাল কলোনি এলাকায় একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে ফারুক।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রামের রেল স্টেশন ও বরিশাল কলোনি কেন্দ্রিক ইয়াবা ও মাদক স্পটগুলোর নিয়ন্ত্রক ছিল ফারুক।

নগরীতে ইয়াবা বিক্রি করলেও পটিয়ার ধলঘাট নন্দেরখিল এলাকায় তিনি এসব ইয়াবা ও মাদক রাখতেন। চট্টগ্রামে এনে বিভিন্ন স্থানে পাচারও করতেন।

গত ৯ অক্টোবর নগরীর ষোলশহর রেল স্টেশনে দোহাজারি থেকে চট্টগ্রামগামী লোকাল ট্রেন থেকে ২০ হাজার ইয়াবাসহ নাজিম নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।

অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের দাবি, জব্দ করা ইয়াবাগুলোর মালিক ফারুক। নাজিম তার ভাতিজা।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মেট্রো উপ-অঞ্চলের উপ-পরিচালক শামীম আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ফারুকের বাড়ি যে এলাকায় তার পাশ দিয়ে রেললাইন রয়েছে। ফারুক মূলত সেখানে মাদকগুলো মজুদ করত। সেখানে লোকদিয়ে মাদকগুলো পুরিয়া করে ট্রেনে চট্টগ্রাম নিয়ে আসত এবং বিভিন্ন স্পটে সরবরাহ করত।

“আমরা গত ৯ অক্টোবর যেসব ইয়াবা আটক করেছিলাম, সেগুলো ছিল একটি একটি পুরিয়া করা। পুরিয়া আকারে ইয়াবাগুলো মাদকসেবীদের কাছে বিক্রি করা হত।”

তিনি বলেন, “মাদকের পুরিয়া তৈরি অনেক সময় সাপেক্ষ, একাজে লোকবলও প্রয়োজন হয়। আমরা জেনেছি সে নিজের বাড়িতে মাদক মজুদের পর পুরিয়া করে চট্টগ্রামে নিয়ে আসে।”