সাত মাস আগে চট্টগ্রাম শহরে মিতু খুন হওয়ার পর কয়েকজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করলেও হত্যাকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে এখনও কিছু জানায়নি।
চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. কামরুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করেন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন ও মা সাহেদা মোশাররফ নীলা।
সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মিতুর মা বলেন, তার মেয়ের মোবাইল নম্বরটি এখনও চালু আছে।
“মোবাইলটা যার কাছে আছে তার সাথে আমার কথা হয়েছে। সে বিষয়টিও আমরা জানিয়েছি।
“সে (মোবাইল যার কাছে আছে) বলেছে, ‘আমি সিএনজি চালক। মগবাজারে আছি’। আপনি সিমটি কোথায় পেয়েছেন জানতে চেয়েছি, সে বলেছে, ‘হাতিরঝিলে পেয়েছি’। মাঝে মাঝে মিসড কল দেয়।”
তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার সময় ওই নম্বরে ফোন দিলে তা রিসিভ করা হয় বলে জানান তিনি।
পরে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বলেন, মোবাইলের বিষয়ে তাদের আইটি ‘এক্সপার্ট’ টিম কাজ করছে।
মিতুর বাবা-মা বলেন, যত সময় লাগুক মেয়েকে হত্যার কারণ জানতে চান তারা।
জামাতা বাবুল আক্তার তদন্তে সহায়তা করছেন কি না সে প্রশ্নের সরাসরি উত্তর এড়িয়ে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বলেন, “এটা আইও বলবে। আমরা মনে করি যে, আজকে যে আমরা আসছি, আমাদের সাথে বাবুল আক্তারের আসা উচিত ছিল।”
মিতু হত্যার পর বেশ কিছুদিন ঢাকার বনশ্রীতে শ্বশুর বাড়িতে থাকলেও বাবুল এখন সন্তানদের নিয়ে মগবাজারে থাকেন বলে জানান মিতুর মা।
তাদের বাসায় থাকার সময় এ বিষয়ে বাবুলের কাছে জানতে চেয়েছিলেন কি না-এ প্রশ্নে মিতুর বাবা বলেন, “আমরা বলেছি, এটা তোমাকেই বের করতে হবে।”
জঙ্গি তৎপরতা নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে গত বছর ৫ জুন ওই হত্যাকাণ্ডে নড়েচড়ে বসে পুলিশ প্রশাসন। দেশব্যাপী জঙ্গিবিরোধী অভিযানের পাশাপাশি অন্যান্য দিক বিবেচনায় নিয়ে শুরু হয় তদন্ত।
এক পর্যায়ে সন্দেহভাজন কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের পর এক রাতে বাবুলকে ঢাকার ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে টানা ১৪ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর ছাড়া হয়। বাবুল পুলিশের চাকরিতে ইস্তফা দিয়েছেন বলে সে সময় খবর ছড়ায়, তার কয়েক মাস পরে বাবুলের পদত্যাগপত্র গৃহীত হওয়ার কথা জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
বাবুলের পুলিশের চাকরিটা যাতে থাকে সেজন্য চেষ্টা করেছিলেন বলে জানান শ্বশুর মোশাররফ হোসেন।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা চেয়েছি তার চাকরিটা থাক। আমরা তদ্বির করেছি এটা আপনারা জানেন... কেন থাক? চেয়েছি ওর স্ত্রীর কেইসটা ও ডিল করুক।”
তদন্তের অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে মোশাররফ বলেন, “আমরা চাচ্ছি, শুধু মোটিভটা। একটা মেয়ে মানুষ কেন মার্ডার হবে?
“আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে তাকে মারবে কেন, তারতো কোনো প্রোপার্টি নেই, অ্যাসেট নেই, টাকা-পয়সা নাই, কিছু নাই।
“যত সময় লাগে লাগুক, আমরা চাই শুধু মোটিভটা। মোটিভের পর আমাদের কোনো কোয়ারি নাই।”
মিতুর বাবা বলেন, “সে যে-ই হোক বাবুল আক্তার হোক, তার বন্ধু-বান্ধব হোক, অন্য কোনো মেয়ে হোক, কোনো পরকীয়া প্রেম থাক। সে যা-ই থাক সেটা বের করা পুলিশের দায়িত্ব, বাদী হিসেবে বাবুল আক্তারের দায়িত্ব।
“.... সে বলুক আমার বৌ ভালো ছিল, খারাপ ছিল।”
এ হত্যাকাণ্ডে পুলিশ ইতোমধ্যে সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে এবং দুইজন পুলিশের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ছাত্রলীগ নেতা রাশেদ হত্যাসহ প্রায় ছয় মামলার আসামি মুসা, বাবুল আক্তার চট্টগ্রাম গোয়েন্দা পুলিশে থাকাকালে তার সোর্স হিসেবে কাজ করতেন তিনি। পাশাপাশি অস্ত্রের যোগানদাতা হিসেবে গ্রেপ্তার এহতাশেমুল হক ভোলাও বাবুলের সোর্স বলে পরিচিত।
গত অক্টোবরে মুছার সঙ্গে সন্দেহভাজন কালু নামে আরেকজনকে ধরতে পুলিশের পক্ষ থেকে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।
তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা সম্পর্কে জানতে চাইলে মিতুর মা বলেন, “মামলা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে, বাচ্চা দুটা কেমন আছে? মেয়ের সম্পর্কে জানতে চাইল, সে কী করত।”
মিতুর মা-বাবার কাছে কী বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তদন্ত কর্মকর্তা কামরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, “মামলা সংক্রান্ত কিছু বিষয় ছিল, সেগুলো জানতে চেয়েছি।”
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “পরকীয়া নিয়ে এখন কিছু বলব না। তবে সেটা নিয়ে আমরা আগে থেকে কাজ করছি।”
দিন দিন মামলার তদন্তে অগ্রগতি হচ্ছে দাবি করে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, মুছা ও কালুকে ধরতে অনেক জায়গায় অভিযান চালানো হচ্ছে।
গত ১৫ ডিসেম্বর বাবুল আক্তারের সঙ্গে কথা বলেন তদন্ত কর্মকর্তা। এরপর ২২ ডিসেম্বর মোশারফ হোসেন, ২ জানুয়ারি বাবুলের বাবা আব্দুল ওয়াদুদ মিয়া ও মা সাহেদা ওয়াদুদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।