মারজান পুলিশ ‘নেটওয়ার্কের মধ্যে’: চট্টগ্রামে এসপি

গুলশান হামলার ‘অন্যতম পরিকল্পনাকারী’ নূরুল ইসলাম মারজানসহ আরও কয়েকজন ‘মাস্টারমাইন্ড’ পুলিশের নজরদারিতে রয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের এসপি নূরে আলম মিনা।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 August 2016, 06:58 PM
Updated : 16 August 2016, 06:58 PM

মঙ্গলবার চট্টগ্রাম জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির এক বৈঠকে তিনি বলেন, “গুলশান হামলার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড মারজান, সে কিন্তু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল। আমি খবর নিয়ে জানলাম দেড় বছর আগে থেকে সে পড়ালেখা ছেড়ে দিয়েছে।

“বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছয় মাস আগে তার ছাত্রত্ব বাতিল করেছে। সে পুলিশের নেটওয়ার্কের মধ্যে আছে… সাথে দুই তিনজন মাস্টারমাইন্ড, আমার বিশ্বাস তারা ধরা পড়ে যাবে।”

গত ১ জুলাই হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলা ও জিম্মি সঙ্কট শুরুর ১২ ঘন্টা পর কমান্ডো অভিযানে রেস্তোরাঁর নিয়ন্ত্রণ নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।  এরপর জঙ্গিদের হাতে নিহত ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনের লাশ উদ্ধারের সঙ্গে সঙ্গে অভিযানে নিহত রেস্তোরাঁর পাচক ও আরও পাঁচ জঙ্গির লাশ বের করা হয়।

পুলিশ বলছে, এই হামলার ঘটনায় নিহত জঙ্গিরা ছাড়াও আরও কয়েকজন বিভিন্নভাবে জড়িত, যাদের অগ্রভাগে রয়েছে তামিম চৌধুরী ও চাকরিচ্যুত সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল হক ও মারজানসহ বেশকয়েকজন।

সম্প্রতি মারজানের একটি ছবি প্রকাশ করে তাকে শনাক্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেশবাসীর কাছে সহায়তা চাওয়ার পর তার পরিবার ও পড়াশুনা সংক্রান্ত তথ্য বের হয়ে আসে।

আইআইইউসি নিয়ে শঙ্কা

সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার পর চট্টগ্রাম জেলার জন্য বেসরকারি আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (আইআইইউসি) ‘বড় সমস্যার’ কারণ হতে পারে বলে মনে করেন চট্টগ্রামের এসপি নূরে আলম মিনা।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে হওয়া জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে তিনি বলেন, “জেলার জন্য বড় সমস্যার কারণ হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে সীতাকুণ্ডের আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।

“কারণ এটা মহাসড়কের পাশে আর রাস্তা ব্লক দেওয়াও সহজ। পেছনে রয়েছে সলিমপুরের পাহাড়। ফলে তারা সেখান দিয়ে পালিয়ে যেতে পারে।”

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার কুমিরা এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশেই আইআইইউসির অবস্থান। বেসরকারি এই বিশ্ববিদ্যালয়টি জামায়াতে ইসলামীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত বলে অভিযোগ রয়েছে।

নূরে আলম মিনা (ফাইল ছবি)

চট্টগ্রাম নগরীতে বিশ্ববিদ্যালয়টির একাধিক আউটার ক্যাম্পাস ছিল। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আউটার ক্যাম্পাস নিষিদ্ধ করে।

এরপর আইআইইউসি’র পাঁচটি আউটার ক্যাম্পাস সরিয়ে সব বিভাগের ক্লাশ ও প্রশাসনিক কার্যক্রম কুমিরা ক্যাম্পাসে নিয়ে যাওয়া হয়।

২০১৪ ও ২০১৫ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে বিএনপি-জামায়াত জোটের নেতৃত্বে হরতাল-অবরোধ চলাকালে সীতাকুণ্ড এলাকায় বেশ কিছু নাশকতার ঘটনা ঘটে। সে সময় ও পরে কয়েকবার আইআইইউসি ক্যাম্পাসে তল্লাশিও চালিয়েছিল পুলিশ।

নূরে আলম মিনা বলেন, বাংলাদেশে যারা নিজেদের আইএস দাবি করে তারা মূলত জামায়াত-শিবিরের লোক। জামায়াত-শিবিরের উগ্র অংশ, তারাই মূলত এ কাজগুলো করছে।

জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার উপরও গুরুত্বারোপ করেন চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার হিসেবে সদ্য যোগ দেওয়া এ কর্মকর্তা।

পুলিশের জনবলের ঘাটতির কথা উল্লেখ করে এসপি বলেন, চট্টগ্রাম জেলায় পুলিশের অনুপাত তিন হাজার ৪০০ জনের বিপরীতে একজন।

এ সমস্যা দ্রুত কেটে যাবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে মিনা বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে ২১ হাজার জনবল নিয়োগ হবে পুলিশে। সেটা হলে আমরা আগের চেয়ে দ্রুত যে কোনো সমস্যায় মুভ করতে পারব।

সভায় সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন বলেন, জঙ্গিবাদ দমনের আমাদের যতটুকু দায়িত্ব আমরা সেটা যথাযথভাবে পালনের চেষ্টা করছি।

জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা এ ক্ষেত্রে নিয়ামক উল্লেখ করে তাদের উদ্দেশে মেজবাহ উদ্দিন বলেন, আপনারা গ্রামের তৃণমূলে যান। সেখানে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তুলুন।

“গ্রামের যে কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে যান, সেখানে খবর নেবেন ওই এলাকায় জঙ্গিবাদি তৎপরতা আছে কিনা। জঙ্গিবাদ দেশের এক নম্বর সমস্যা। জনগণের সহযোগিতা ছাড়া সেটা দমন সম্ভব নয়।”

সভায় চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।