জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ ঘোষণা’ চট্টগ্রাম পুলিশ সুপারের

জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সামাজিক ও আদর্শিক যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার (এসপি) নূরে আলম মিনা।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 August 2016, 01:00 PM
Updated : 13 August 2016, 07:08 PM

শনিবার বিকালে নগরীতে সার্বিক আইন শৃঙ্খলা বিষয়ে জেলা পুলিশের পক্ষে আয়োজিত এক মত বিনিময়সভায় তিনি বলেন, “জেলা পুলিশের সব সদস্যকে আমরা মোটিভেট করেছি।

“জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সামাজিক ও আর্দশিক যুদ্ধ ঘোষণা করছি। বাংলাদেশ ও চট্টগ্রামকে যারা ভালোবাসে এ লড়াইয়ে তারা আমাদের শক্তি।”

নগরীর ২ নম্বর গেট এলাকায় পুলিশ সুপার কার্যালয়ের পাশের একটি কমিউনিটি সেন্টারে এ সভার আয়োজন করা হয়।

এতে এসপি নূরে আলম মিনা বলেন, “অঙ্গীকার করছি… চট্টগ্রাম থেকে জঙ্গিবাদের মূল শেকড় তুলে না ফেলা পর্যন্ত ব্যারাকে ফিরবে না জেলা পুলিশের কোনো সদস্য।

“সন্ত্রাসীরা ট্রেঞ্চ করে মাটির নিচে লুকালেও প্রতি ইঞ্চি মাটি খুঁড়ে তাদের বের করা হবে। জঙ্গি বা সন্ত্রাসীর আতঙ্কে জনগণ নয়, বরং পুলিশ-জনতার আতঙ্কে জঙ্গিরাই পালাবে- এটা আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস।”

সভায় ‘জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের কর্মপন্থা’ শীর্ষক এক লিখিত প্রতিবেদনে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের জঙ্গি ও সন্ত্রাস বিরোধী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের বিবরণ ও তথ্য জানান পুলিশ সুপার।

নূরে আলম মিনা বলেন, জঙ্গি ও সন্ত্রাস বিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। 

“জঙ্গি দমনে চার সদস্যের স্পেশাল টাস্ক গ্রুপ (এসটিজি) গঠন করা হয়েছে। জেএমবি, এবিটি, হামজা বিগ্রেড, হুজি ও হিযবুত তাহরীরসহ নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনগুলোর গোপন তৎপরতা নজরদারিতে আনতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।”

২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলায় জঙ্গি সংশ্লিষ্ট ১৩টি মামলা হয়েছে, যার মধ্যে নয়টি সন্ত্রাসবিরোধী আইনে, দুটি বিস্ফোরক ও দুটি অস্ত্র আইনে বলে জানান এসপি।

তিনি বলেন, সীতাকুণ্ডে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ছয় সক্রিয় সদস্য গ্রেপ্তার সংক্রান্ত মামলাটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, জনবসতি ও সীতাকুণ্ড-বাঁশখালী-ফটিকছড়ি-ভুজপুরের পাহাড়ি এলাকায় জঙ্গি আস্তানার সন্ধানে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে বলেও জানান এসপি।

প্রশ্নের জবাবে নূরে আলম মিনা বলেন, “সীতাকুণ্ড ও ফটিকছড়ির পাহাড়ি এলাকায় জঙ্গি আস্তানা আছে কি না ? পত্রিকায় এ সংক্রান্ত খবর দেখেছি। খোঁজ নিচ্ছি। এখনো খোঁজ পাইনি।”

বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও সার কারখানাসহ চট্টগ্রাম জেলায় ১০টি কেপিআই (কি পয়েন্ট ইন্সটলেশন) আছে জানিয়ে তিনি বলেন, এসব স্থাপনায় পুলিশ প্রহরা বাড়ানো হয়েছে।

জেলায় ভাড়াটিয়া ও বিদেশি নাগরিকের তালিকা হচ্ছে জানিয়ে এসপি মিনা বলেন, এখন পর্যন্ত ৭৬৭ টি বাসায় এক হাজার ১৫৩ ভাড়াটিয়া পরিবারের তালিকা করা হয়েছে।

“আরও তালিকা করা হবে। তাদের কোড নম্বর দেব। যাতে যে কোনো জায়গায় বাসা বদলে গেলে তথ্য রাখতে পারি।”

এসপি বলেন, জেলার শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এবং শিক্ষার্থীসহ ৪৫৭ জনের তালিকা করা হয়েছে। তাদের নগর থেকে কর্মস্থলে যাতায়াত ও নানা প্রয়োজনে সফরের সময় পুলিশী প্রহরার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

জেলায় ‘নিখোঁজ’ ৮ জন

অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নূরে আলম মিনা বলেন, জেলায় এ পর্যন্ত ১৭ জন নিখোঁজ হলেও এরমধ্যে নয়জনের সন্ধান পাওয়া গেছে। বাকি আটজনের খোঁজ নেই।

“তাদের ব্যাপারে তথ্য রাখছি। কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার তথ্য জানলেই আইনগত ব্যবস্থা নেব।”

নিখোঁজ আটজনের নাম ও তাদের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে এসপি বলেন, “নাম আমাদের কাছে আছে। নাম দিলে কিছু সমস্যা আছে।

“চন্দনাইশের তিন জন, হাটহাজারীর দুই জন, সীতাকুণ্ড, লোহাগাড়া ও ভুজপুরের একজন করে নিখোঁজ। তথ্য রাখছি। কনফার্ম হলেই বলব।”

চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি কলিম সরওয়ারের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মহসিন চৌধুরী।

উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) একেএম এমরান ভূঁইয়া।