কোটাবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে ছয়জন নিহত হওয়ার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন হেফাজত নেতারা।
Published : 18 Jul 2024, 01:34 AM
কোটা সংস্কারের দাবিকে 'ন্যায়সঙ্গত' বলে বর্ণনা করে আলোচনার মাধ্যমে বিদ্যমান সংকট ও অস্থিরতা নিরসনের আহ্বান রেখে বিবৃতি দিয়েছে কওমী মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম।
বুধবার গভীর রাতে হেফাজতে ইসলামের প্রচার সম্পাদক মুফতী কিফায়াতুল্লাহ আজহারীর সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বিবৃতির বিষয়ে সংবাদমাধ্যমকে তথ্য দেওয়া হয়েছে।
হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব আল্লামা শায়েখ সাজেদুর রহমান বিবৃতিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে হামলায় ছয়জনের নিহত হওয়ার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে তারা অভিযোগ করেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে ছয়জনকে হত্যা করা হয়েছে। মেয়েদেরকেও পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়েছে। এমনকি হাসপাতালে ঢুকেও আহতদের ওপর হামলা করা হয়েছে।
“আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি," বলেন হেফাজতের শীর্ষ দুই নেতা।
হেফাজত নেতারা বলেন, কোটা সংস্কারের দাবি অত্যন্ত ন্যায়সঙ্গত একটি দাবি। কোটার নামে মেধাবীদের বঞ্চিত করা জুলুম। ইসলাম সব ধরনের জুলুম ও বৈষম্যের বিপক্ষে। সংবিধান অনুযায়ী কোটা প্রাপ্যদের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ন্যায়ানুগ অনুপাতে আলোচনার মাধ্যমে কোটা সংস্কার করে বিদ্যমান সংকট ও অস্থিরতার নিরসন করা সম্ভব।
"আমরা মনে করি, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিরপেক্ষ রাখা জরুরি। দমন পীড়নের মাধ্যমে সমাজকে বিভক্ত করলে তা রাষ্ট্রের শেকড়কে দুর্বল করে দেয়। এভাবে চলতে দেওয়া যায় না।"
বিবৃতিতে মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও সাজেদুর রহমান বলেছেন, “কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা আমাদের সন্তানের মত। তারা দেশের ভবিষ্যৎ। আলোচনার মাধ্যমে তাদের ন্যায়সঙ্গত দাবির সমাধানের জন্য সরকারের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।
"আমরা নিহতদের পরিবারে প্রতি গভীর সমবেদনা এবং আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থার জন্য দাবি জানাচ্ছি।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে মঙ্গলবার সারা দেশে কোথাও কোথাও আন্দোলনকারী এবং সরকার দলীয় সংগঠন ও পুলিশের ত্রিমুখী সংর্ঘের মধ্যে ছয়জন নিহত হন। সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ায় দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বুধবার সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজের শিক্ষার্থীরা হল ছাড়া শুরু করেন।
এর মধ্যেই মঙ্গলবার নিহতদের স্মরণে বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো বুধবার ঢাকায় গায়েবানা জানাজা কর্মসূচি পালন করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরাও গায়েবানা জানাজা ও প্রতীকী কফিন মিছিল করার সময় তাদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয়।
বুধবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কোটা সংস্কারের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের জন্য অপেক্ষা করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, সহিংসতার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।
এরপর রাত পৌনে ৮টার দিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষে খুনের দায়ে জড়িতদের বিচার ও সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবিতে বৃহস্পতিবার সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন' কর্মসূচি ঘোষণা আসে আন্দোলনকারীদের পক্ষে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এর অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ তার ফেসইবুক প্রোফাইলে এ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন। একই বার্তা তিনি সাংবাদিকদের কাছেও পাঠিয়েছেন।