কারাগারে বন্দির মৃত্যু: ওসি, জেল সুপারের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন

মদ উদ্ধারের ‘ভুয়া মামলা সাজিয়ে’ পুলিশ দুই লাখ টাকা ‘ঘুষ’ দাবি করেছিল বলেও অভিযোগ করা হয়েছে মামলায়।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Feb 2024, 05:51 PM
Updated : 20 Feb 2024, 05:51 PM

গ্রেপ্তারের পর চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে এক বন্দি মৃত্যুর ঘটনায় বোয়ালখালী থানার ওসি, সিনিয়র জেল সুপারসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলার আবেদন হয়েছে।

মারা যাওয়া বন্দি রুবেল দে’র স্ত্রী পূরবী পালিত মঙ্গলবার চট্টগ্রামের সিনিয়র স্পেশাল জজ জেবুন্নেছা বেগমের আদালতে এই মামলার আবেদন করেন।

রুবেলের বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার শ্রীপুর-খরনদ্বীপ ইউনিয়নের দক্ষিণ জ্যৈষ্ঠপুরা গ্রামে। গত ৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে তার মৃত্যুর খবর পান পূরবী পালিত।

বাদীর আইনজীবী অজয় ধর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গ্রেপ্তারের পর হেফাজতে নির্যাতন করে মৃত্যুর অভিযোগে ‘নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন ২০১৩ এর ১৫ (২) ধারায় মামলার এই আবেদন করা হয়েছে।

বোয়ালখালী থানার ওসি মো. আছহাব উদ্দিন, পরিদর্শক (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম, এসআই এসএম আবু মুছা, এএসআই মাঈনুদ্দিন, এএসআই সাইফুল ইসলাম, কনস্টেবল কামাল ও আসাদুল্লাহ, এসআই রিযাউল জব্বার, থানার ডিউটি অফিসার, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মঞ্জুর হোসেন, জেলার এমরান হোসেন মিয়া, ডেপুটি জেলার নওশাদ মিয়া, আখেরুল ইসলাম, সুমাইয়া খাতুন ও ইব্রাহীম এবং ওয়ার্ড মাস্টারকে সেখানে আসামি করা হয়েছে।

বিচারক আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি বাদীর উপিস্থিতিতে মামলার গ্রহণযোগ্যতার শুনানির দিন রেখেছেন বলে জানান এ আইনজীবী।

মামলার আবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৭ জানুয়ারি বিকেলে নিজ বাড়ি থেকে রুবেল দেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার বিরুদ্ধে মদ উদ্ধারের ‘ভুয়া মামলা সাজিয়ে’ পুলিশ দুই লাখ টাকা ‘ঘুষ’ দাবি করে।

পরদিন রুবেলকে আদালতে হাজির করলে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়া হয়। সে সময় তাকে ‘অসুস্থ অবস্থায়’ প্রিজন ভ্যানে করে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

২ ফেব্রুয়ারি রুবেলের সাথে পরিবারের সদস্যরা কারাগারে দেখা করতে গেলে তাকে ‘মুমূর্ষু’ অবস্থায় হুইল চেয়ারে করে নিয়ে আসা হয়েছিল এবং তার ডান চোখের ভ্রুর ওপর কাটা জখম দেখা গিয়েছিল বলে বাদীর ভাষ্য।

পরে ৫ ফেব্রুয়ারি কারাগারে রুবেলের মৃত্যুর খবর জানানো হয় তার স্ত্রীকে।

আইনজীবী অজয় ধর বলেন, “গ্রেপ্তারের পর অসুস্থ অবস্থায় রুবেলকে কারাগারে নেওয়া হয় এবং সেখানেই তার মৃত্যু হয়। সে কারণে হেফাজতে নির্যাতন করে মৃত্যুর অভিযোগে আদালতে মামলার আবেদন করা হয়েছে।’

অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করলে বোয়ালখালী থানার ওসি আছহাব উদ্দিন বলেন, “আসামির বিরুদ্ধে এলাকায় মাদক ব্যবসার অভিযোগ আছে। তার বিরুদ্ধে এলাকায় মানববন্ধনও হয়েছিল। গত ২৭ জানুয়ারি তাকে মদসহ গ্রেপ্তার করে ২৮ তারিখে মামলা নিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।” 

নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে তিনি বলেন, “কোনো আসামির শরীরে দাগ থাকলেও আদালতে ফরওয়ার্ডিংয়ে উল্লেখ করতে হয়। জেলেও রিসিভ করার সময় সবকিছু দেখে আসামি গ্রহণ করে। আমাদের কাজ আসামি গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো, আমরা তা করেছি। ২৮ জানুয়ারি কারাগারে নেওয়ার পর ৫ ফেব্রুয়ারি আসামির মৃত্যু হয়েছে, ওখানে পুলিশের কী দোষ আছে?” 

মামলার আবেদনে থানার ডিউটি অফিসারকেও আসামি করা হয়েছে, যাকে ‘হাস্যকর’ বলছেন ওসি।