ভারতকে হারিয়ে ফাইনালে বাংলাদেশের যুবারা

যুব এশিয়া কাপের সেমি-ফাইনালে ভারতকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Dec 2023, 01:00 PM
Updated : 15 Dec 2023, 01:00 PM

মারুফ মৃধার বিধ্বংসী বোলিংয়ে লক্ষ্যটা নাগালের মধ্যেই রাখল বাংলাদেশ। তার পরও টপ -অর্ডারের ব্যর্থতায় জেঁকে বসল হারের শঙ্কা। তবে দারুণ ব্যাটিংয়ে সব দুর্ভাবনা দূর করলেন আরিফুল ইসলাম। অল্পের জন্য সেঞ্চুরি না পেলেও তার অসাধারণ ইনিংসে ফাইনালে উঠল বাংলাদেশের যুবারা।

দুবাইয়ে আইসিসি একাডেমির দুই নম্বর মাঠে যুব এশিয়া কাপের সেমি-ফাইনালে ভারত অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। ১৮৯ রানের লক্ষ্য তারা ছুঁয়েছে ৪৩ বল বাকি রেখে।

এই নিয়ে দ্বিতীয়বার যুব এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠল বাংলাদেশ। ২০১৯ সালের আসরে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে ভারতের কাছে হেরে যায় তারা।

ভারতের টপ-অর্ডার গুঁড়িয়ে ম্যাচের শুরুতে বাংলাদেশকে এগিয়ে দেন মারুফ। ১০ ওভারে এক মেডেনসহ ৪১ রানে ৪ উইকেট শিকারে তার হাতেই উঠেছে ম্যাচ সেরার পুরস্কার। ৯৪ রানের ইনিংস খেলা আরিফুলও ছিলেন এই স্বীকৃতির জোর দাবিদার।

রান তাড়ায় শুরুটা একদমই ভালো হয়নি বাংলাদেশের। প্রথম ওভারেই রাজ লিম্বানির দারুণ ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে ড্রেসিং রুমের পথ ধরেন জিসান আলম। চৌধুরি মোহাম্মদ রিজওয়ানও টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ।

যুবাদের বিপদ আরও বাড়ে পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে আশিকুর রহমানের রান আউটে। সৌমি পান্ডের বল অন সাইডে ঠেলে রানের জন্য ক্রিজ থেকে দুই পা এগোন আরিফুল। সঙ্গীর ডাক মনে করে ততক্ষণে প্রায় মাঝ পথে আশিকুর। কিন্তু আরিফুল ফিরিয়ে দিলে অল্পেই বিদায়ঘণ্টা বাজে গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচেই পঞ্চাশ ছোঁয়া আশিকুরের।

স্রেফ ৩৪ রানে ৩ উইকেট হারানো দলের হাল ধরেন আরিফুল। অন্য প্রান্তে তাকে দারুণ সঙ্গ দেন আহরার আমিন। প্রাথমিক চাপ সামলে ধীরে ধীরে এগোতে থাকে বাংলাদেশ। ষোড়শ ওভারে দলীয় পঞ্চাশ পূর্ণ করার পর একশতে যেতে লাগে আর ১১ ওভার।

বাঁহাতি স্পিনার মুশির খানকে লং অফ দিয়ে বিশাল ছক্কা মেরে ফিফটি স্পর্শ করেন গত যুব বিশ্বকাপে দুটি সেঞ্চুরি করা আরিফুল।

৩৪তম ওভারে পূর্ণ হয় জুটির শতরান। পরের দুই ওভারে একটি করে চার মারেন আরিফুল। ৩৭তম ওভারে সৌমির ওপর দিয়ে ঝড় বইয়ে দেন তিনি। প্রথম বলে স্লগ সুইপে ডিপ মিড উইকেট দিয়ে মারেন বিশাল ছক্কা। পরের বল লং অন দিয়ে পাঠান একই ঠিকানায়।

ওভারের শেষ বলে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে মারা তৃতীয় ছক্কায় ৯৪ রানে পৌঁছে যান আরিফুল। পরের ওভারে রাজের বলে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে অন সাইডে খেলার চেষ্টায় তার ব্যাটের সামনের কানায় লাগে বল। মিড অফে সহজ ক্যাচ নেন উদয় সাহারান। সমাপ্তি ঘটে ৯০ বলে ৯ চার ও ৪ ছক্কায় সাজানো ইনিংসের।

আরিফুলের বিদায়ে ভাঙে ১৩৮ রানের চতুর্থ উইকেট জুটি। এরপর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি মোহাম্মদ শিহাব জেমস। দলের জয় থেকে ২ রান বাকি থাকতে ১০১ বলে ৪৪ রান করে ফেরেন আহরার।

পরে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন মাহফুজুর ও পারভেজ।

ম্যাচের প্রথমভাগে টস জিতে ফিল্ডিং নিয়ে ভারতকে চেপে ধরে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় বলেই আদার্শ সিংকে এলবিডব্লিউ করেন মারুফ। তার পরের ওভারে অন সাইডে ফ্লিক করতে গিয়ে ব্যাটের সামনের কানায় লেগে ডিপ থার্ড ম্যানে ধরা পড়েন আরেক ওপেনার আর্শিন কুলকার্নি।

নতুন বলে নিজের সেরা ডেলিভারিটা যেন ভারত অধিনায়কের জন্য জমিয়ে রাখেন মারুফ। বাঁহাতি পেসারের রাউন্ড দা উইকেট থেকে অফ স্টাম্পের বাইরে পিচ করে হালকা মুভমেন্টের ডেলিভারিতে খানিক বেকায়দায় পড়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন উদয় সাহারান।

২০ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় ভারত। পাওয়ার প্লেতে করে মোটে ২৬ রান। দ্বাদশ ওভারে দারুণ ডেলিভারিতে সাচিন দাসকে বোল্ড করেন রোহানাত দৌল্লাহ।

ছয় নম্বরে নেমে পাল্টা আক্রমণের ইঙ্গিত দেন মুশির খান। কিছুটা বাড়ে রানের গতি। অন্যপ্রান্তে মন্থর ব্যাটিং করতে থাকা প্রিয়ানশু মোলিয়াকে থামান রোহানাত। ৪৫ বলে ১৯ রান করেন ষোড়শ ওভারে ফেরা প্রিয়ানশু।

এক বল পর সোজা মিড অফ ফিল্ডার বরাবর মেরেই রানের খোঁজে উইকেট দিয়ে আসেন আরাভেলি আভিনাশ। সরাসরি থ্রোয়ে তার বিদায়ঘণ্টা বাজান মাহফুজুর। ৬১ রানে ৬ উইকেট নিয়ে তখন নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের হাতে।

সপ্তম উইকেট জুটিতে মুরুগান আভিষেককে নিয়ে প্রতিরোধ গড়েন মুশির। দুজন মিলে ১০৮ বলে যোগ করেন ৮৪ রান। ৬০ বলে পঞ্চাশ পূর্ণ করেন মুশির।

ভারতের দেড়শ হওয়ার আগে এই জুটি ভাঙেন মাহফুজুর। ফিফটি ছুঁয়েই বড় শটের চেষ্টায় স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগ সীমানার অনেক ভেতরে ক্যাচ দেন মুশির।

পরে নিচের সারির ব্যাটসম্যানদের নিয়ে এগোতে থাকেন আভিষেক। শেষ স্পেলে ফিরে তাকে থামিয়ে নিজের চতুর্থ শিকার ধরেন মারুফ। ৭৪ বলের ইনিংসে ৬ চার ও ২ ছক্কায় ৬২ রান করেন আভিষেক।

নামান তিওয়ারিকে এলবিডব্লিউ করে ৪৪ বল বাকি থাকতেই ভারতকে অল আউট করে দেন শেখ পারভেজ।

মারুফের ৪ উইকেট ছাড়াও আরেক পেসার রোহানাত ধরেন ২ শিকার। কোনো উইকেট না পেলেও নতুন বলে মারুফের সঙ্গে জুটি বেধে অসাধারণ লাইন-লেংথে ভারতের ব্যাটসম্যানদের কঠিন পরীক্ষা নেন আরেক পেসার ইকবাল হোসেন।

অন্য সেমি-ফাইনালে পাকিস্তানের যুবাদের ১১ রানে হারিয়ে ফাইনালের টিকেট পেয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। রোববার শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে তাদের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ভারত অনূর্ধ্ব-১৯ দল: ৪২.৪ ওভারে ১৮৮ (আদার্শ ২, আর্শিন ১, প্রিয়ানশু ১৯, উদয় ০, সাচিন ১৬, মুশির ৫০, আরাভেলি ০, আভিষেক ৬২, সৌমি ১, রাজ ১১*, নামান ৬; মারুফ ১০-১-৪১-৪, ইকবাল ৯-১-৩১-০, রোহানাত ৭-০-৩৯-২, রিজওয়ান ২-০-১২-০, পারভেজ ৮.৪-০-২৯-২, মাহফুজুর ৬-০-৩৩-১)

বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল: ৪২.৫ ওভারে ১৮৯/৬ (আশিকুর ৭, জিসান ০, রিজওয়ান ১৩, আরিফুল ৯৪, আহরার ৪৪, শিহাব ৯, মাহফুজুর ৩*, পারভেজ ২*; রাজ ১০-১-৪৭-২, নামান ৯-১-৩৫-৩, সৌমি ১০-২-৪৪-০, আর্শিন ৭.৫-০-১৯-০, মুরুগান ৪-০-২২-০, মুশির ২-০-১৪-০)

ফল: বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল ৪ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: মারুফ মৃধা