ইনিংস ব্যবধানে জিতে ৪-১ করে ফেলল ভারত

ধারামশালা টেস্টে লড়াই জমাতেই পারল না ইংল্যান্ড, হারে শুরুর পর টানা চার ম্যাচ জিতে সিরিজ শেষ করল ভারত।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 March 2024, 09:24 AM
Updated : 9 March 2024, 09:24 AM

কুলদিপ ইয়াদাভকে বেরিয়ে এসে খেলে লং-অনে ধরা পড়লেন জো রুট। সম্ভাবনা জাগিয়েও সেঞ্চুরি পেলেন না তিনি। ইংল্যান্ডও পারল না ইনিংস হার এড়াতে। বড় জয়ে সিরিজ শেষ করল ভারত।

ধারামশালায় পঞ্চম ও শেষ টেস্টে তিন দিনেই স্বাগতিকরা জিতল ইনিংস ও ৬৪ রানে।

হারে শুরুর পর টানা চার টেস্ট জিতল ভারত, পাঁচ ম্যাচের সিরিজ তারা শেষ করল ৪-১ ব্যবধানে জিতে।

প্রথম ইনিংসে ২১৮ রান করা ইংল্যান্ড শনিবার দ্বিতীয় ইনিংসে গুটিয়ে যায় ১৯৫ রানে। একমাত্র ইনিংসে ভারত করে ৪৭৭ রান।

ক্যারিয়ারের শততম টেস্টে দ্বিতীয় ইনিংসে পাঁচটিসহ ম্যাচে ১২৮ রানে ৯ উইকেট নেন অফ স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন।

শততম টেস্টে কোনো ক্রিকেটারের সেরা বোলিং এটিই। আগের সেরা ছিল শ্রীলঙ্কার স্পিনার মুত্তাইয়া মুরালিদারানের ১৪১ রানে ৯ উইকেট, ২০০৬ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে।

ম্যাচের সেরা যদিও অশ্বিন নন, পুরস্কারটি পান কুলদিপ ইয়াদাভ। বাঁহাতি এই রিস্ট স্পিনার প্রথম ইনিংসে পাঁচটিসহ ম্যাচে নেন ৭ উইকেট। ব্যাট হাতে খেলেন ৩০ রানের ইনিংস।

দ্বিতীয় ইনিংসে রুটের ১২৮ বলে ৮৪ ও জনি বেয়ারস্টোর ৩১ বলে ৩৯ রান ছাড়া উল্লেখ করার মতো কিছু করতে পারেনি ইংল্যান্ডের আর কেউ।

৮ উইকেটে ৪৭৩ রান নিয়ে তৃতীয় দিন শুরু করে ভারত যোগ করতে পারে কেবল ৪ রান।

কুলদিপকে ফিরিয়ে টেস্ট ইতিহাসের প্রথম পেসার ও তৃতীয় বোলার হিসেবে ৭০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন ৪১ বছর বয়সী পেসার জেমস অ্যান্ডারসন।

পরের ওভারে জাসপ্রিত বুমরাহকে বিদায় করে পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন শোয়েব বাশির। তিন টেস্টের ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বার এই স্বাদ পেলেন ২০ বছর বয়সী অফ স্পিনার। বয়স ২১ হওয়ার আগে একাধিকবার ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিতে পরেননি ইংল্যান্ডের আর কেউ।

ভারতকে আবার ব্যাটিংয়ে নামাতে ইংল্যান্ডের করতে হতো ২৫৯ রান। কিন্তু দুই ওপেনার বেন ডাকেট ও জ্যাক ক্রলিকে হারায় তারা শুরুতেই। বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি অলিভার পোপও। টপ অর্ডারের তিন জনই অশ্বিনের শিকার।

প্রথম ইনিংসের মতো এবারও আগ্রাসী ব্যাটিং শুরু করেন বেয়ারস্টো। অশ্বিনকে টানা দুটি ছক্কা মারেন তিনি। দ্বিতীয়টি এই সিরিজের ১০১তম ছক্কা।

টেস্ট ইতিহাসে এই প্রথম একশ ছক্কা দেখল কোনো সিরিজ। ২০২৩ অ্যাশেজের ৭৪ ছক্কা ছিল এক সিরিজে আগের সর্বোচ্চ।

বেয়ারস্টোর ৩টি করে চার ও ছক্কায় গড়া ৩৯ রানের ইনিংস থামান কুলদিপ। লাঞ্চের আগে-পরে বেন স্টোকস ও বেন ফোকসকে বোল্ড করে পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন অশ্বিন।

এই নিয়ে ৩৬ বার ইনিংসে পাঁচ উইকেট পেলেন তিনি। ভারতীয় কোনো বোলারের যা সর্বোচ্চ। স্বদেশি অনিল কুম্বলেকে ছাড়িয়ে নিউ জিল্যান্ডের রিচার্ড হ্যাডলিকে ছুঁয়ে ফেললেন অশ্বিন। ওপরে আছেন কেবল দুজন- শেন ওয়ার্ন (৩৭) ও মুরালিদারান (৬৭)

তখন ১১৩ রানে ৬ উইকেট নেই ইংল্যান্ডের। এরপর বুমরাহর একই ওভারে টম হার্টলি ও মার্ক উডের বিদায়ে স্কোর হয়ে যায় ৮ উইকেটে ১৪১।

সেখান থেকে রুটের নৈপুণ্যে দুইশর কাছাকাছি যেতে পারে সফরকারীরা। বাশিরকে ফিরিয়ে জাদেজা ৪৮ রানের জুটি ভাঙার পর রুটকে বিদায় করে ম্যাচের ইতি টেনে দেন কুলদিপ।

ঘরের মাঠে ভারতের এটি টানা ১৭তম টেস্ট সিরিজ জয়। সেই তালিকায় এই সিরিজ ওপরের দিকেই থাকবে। কেননা, পুরো সিরিজে নিজেদের সেরা দল পায়নি ভারত।

ব্যক্তিগত কারণে গোটা সিরিজে ছিলেন না ভিরাট কোহলি। প্রথম ম্যাচের পর চোট নিয়ে ছিটকে যান লোকেশ রাহুল। চোটে একটি টেস্টে খেলতে পারেননি জাদেজা। এমনকি একটি করে ম্যাচে বিশ্রাম দেওয়া হয় বুমরাহ ও সিরাজকে।

সিরিজে টেস্ট অভিষেক হয় ভারতের মোট পাঁচ জনের- রাজাত পাতিদার, ধ্রুভ জুরেল, সারফারাজ খান, আকাশ দিপ ও দেভদুত পাডিক্কাল। এর মধ্যে পাতিদার দুই টেস্ট খেলে ভালো করতে না পারলেও বাকিরা সামর্থ্যের ছাপ রাখেন উজ্জ্বল পারফরম্যান্সে।

সিরিজের সবচেয়ে আলোকিত নাম ইয়াশাসভি জয়সওয়াল। ৯ ইনিংসে দুটি ডাবল সেঞ্চুরিতে ৮৯ গড়ে বাঁহাতি ওপেনার করেন ৭১২ রান। ভারতের দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে এক সিরিজে সাতশ রানের কীর্তি গড়েন তিনি। আরও বেশ কিছু রেকর্ড-অর্জনে নাম উঠে যায় তার। সিরিজ সেরার পুরস্কার ওঠে তার হাতেই।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ২১৮

ভারত ১ম ইনিংস: (আগের দিন ৪৭৩/৮) ১২৪.১ ওভারে ৪৭৭ (কুলদিপ ৩০, বুমরাহ ২০, সিরাজ ০*; অ্যান্ডারসন ১৬-২-৬০-২, উড ১৫-১-৮৯-০, হার্টলি ৩৯-৩-১২৬-২, বাশির ৪৬.১-৫-১৭৩-৫, স্টোকস ৫-১-১৭-১, রুট ৩-০-৮-০)

ইংল্যান্ড ২য় ইনিংস: ৪৮.১ ওভারে ১৯৫ (ক্রলি ০, ডাকেট ২, পোপ ১৯, রুট ৮৪, বেয়ারস্টো ৩৯, স্টোকস ২, ফোকস ৮, হার্টলি ২০, উড ০, বাশির ১৩, অ্যান্ডারসন ০*; বুমরাহ ১০-২-৩৮-২, অশ্বিন ১৪-০-৭৭-৫, জাদেজা ৯-১-২৫-১, কুলদিপ ১৪.১-০-৪০-২, সিরাজ ১-০-৮-০)

ফল: ভারত ইনিংস ও ৬৪ রানে জয়ী

সিরিজ: ৫ ম্যাচের সিরিজ ৪-১ ব্যবধানে জয়ী ভারত

ম্যান অব দা ম্যাচ: কুলদিপ ইয়াদাভ

ম্যান অব দা সিরিজ: ইয়াশাসভি জয়সওয়াল