চার ওভারের মধ্যে ড্রেসিং রুমে প্রথম তিন ব্যাটসম্যান। কিন্তু তাওহিদ হৃদয়ের ব্যাটিং দেখে তা কে বলবে! বিপর্যয়ে জড়সড় না হয়ে তিনি ছুটলেন রোমাঞ্চের পেছনে। ব্যাটের কানায় লেগে পেলেন বাউন্ডারি। পরের বলে স্লগ সুইপে মারলেন ছক্কা! ঝুঁকির সেই পথে ছুটে বেশিদূর যেতে পারেননি তিনি। তবে অভিপ্রায় পরিস্কার করে দিলেন ওই দুই শটেই। নিজের যেমন, তেমনি দলেরও। বুঝিয়ে দিলেন এই ইতিবাচক মানসিকতাই এখন দলের পাথেয়।
এই পরিকল্পনায় আগের দুই ম্যাচেও খেলেছে বাংলাদেশ। সাফল্যও মিলেছে। তৃতীয়বারে সাফল্য ধরা দেয়নি। তা নিয়ে দুর্ভাবনাও নেই দলের। সামনে এগিয়ে চলার পথ ঠিক হয়ে গেছে। এই পথে দল কখনও গতিময়তায় ছুটবে, কখনও হোঁচট খেয়ে এগোবে, কখনও মুখ থুবড়ে পড়বে। সেখান থেকে উঠে আবার ছুটবে। আপাতত এই পরিকল্পনাই চূড়ান্ত।
জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে আগ্রাসী ক্রিকেটের প্রদর্শনী মেলে ধরে রেকর্ডের পসরা সাজিয়ে সিরিজ নিজেদের করে বাংলাদেশ। শেষ ম্যাচে আইরিশদের হোয়াইটওয়াশ করার অভিযানে পুনরাবৃত্তি হয়নি আগের সাফল্যের। একই মানসিকতায় খেলতে গিয়ে এবার ব্যাটিংয়ে নেমেছে ধস। দল গুটিয়ে গেছে ১২৪ রানেই। যা ৬ ওভার হাতে রেখেই টপকে যায় আইরিশরা।
ম্যাচ হারার পর খেলার ধরন প্রশ্নবিদ্ধ হওয়া স্বাভাবিক নয়। বিশেষ করে, শুরুতে কয়েকটি উইকেট পড়ে যাওয়ার পরও যখন একটু সতর্ক না হয়ে বরং পাল্টা আক্রমণকেই বেছে নিয়েছেন ব্যাটসম্যানরা। তবে ম্যাচের পর পুরস্কার বিতরণীতে সাকিব আল হাসান পরিস্কার জানিয়ে দিলেন, এই অ্যাপ্রোচ বদলাবে না তার দল। পরে দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসা তাসকিনের কণ্ঠেও প্রতিধ্বনি সাকিবের কথারই।
টি-টোয়োন্টতে ভবিষ্যতে ভালো দল হয়ে ওঠার আশায় বর্তমানের এমন দু-একটি হার বা বিপর্যয়কে আলিঙ্গন করে নিতে আপত্তি নেই বাংলাদেশ দলের। এই ভাবনার ছাপ মেলে অভিষিক্ত রিশাদ হোসেনের ব্যাটিংয়েও। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের প্রথম ম্যাচ খেলতে রিশাদের প্রথম স্কোরিং শট ছিল ছক্কা!
ক্রমাগত উইকেট পড়লেও রানের তাড়না দেখানো ছিল বাংলাদেশের দলীয় পরিকল্পনারই অংশ। সংবাদ সম্মেলনে দলের এই ইতিবাচক মানসিকতার কথাই বারবার বললেন তাসকিন আহমেদ।
“কোচ-অধিনায়কসহ আমাদের সবারই মানসিকতা ছিল যে, আমরা ইতিবাচক থাকব। নিজের জোনে বল থাকলে প্রথম বল থেকেই মারব। আজকে ব্যাটসম্যানদের যাদের মিস হিট হয়েছে, আউট হয়েছে, ওটা ব্যাটের ভালো জায়গায় লাগলে ছয়ও হতে পারত। এটা ঠিক আছে। এমন হতেই পারে। সামনে আমরা এগিয়ে যাব।”
“উইকেট ভালো ছিল। দূর্ভাগ্যবশত আজকে দ্রুত উইকেট পড়ে গেছে। তবে ইন্টেন্ট কিন্তু গত দুই ম্যাচে এরকমই ছিল। তখন রান হয়েছে। দূর্ভাগ্যবশত আজকে আউট হয়ে গেছে। আরেকটু ভালো ব্যাটিং হয়তো করতে পারতাম। আমাদের সেই সামর্থ্য আছে। আমাদের সবার ইন্টেন্ট এমনই ছিল, ইতিবাচক মানসিকতায় খেলা, আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলা। আজকে একটা খারাপ দিন ছিল আসলে।”
এমন আগ্রাসী ঘরানার ক্রিকেটে যেমন সাফল্যের হাতছানি থাকে, তেমনি থাকে ব্যর্থতার চোখরাঙানি। উদাহরণ হেরে যাওয়া শেষ ম্যাচটিই। তাই বলে পিছিয়ে যাওয়ার পক্ষে নয় বাংলাদেশ।
“সামনে বড় বড় দলগুলোর সঙ্গে যখন ভালো উইকেটে খেলা হবে, প্রতিপক্ষ যখন ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া থাকবে, আমাদের কিন্তু রান করতেই হবে। ওয়ানডে হোক বা টি-টোয়েন্টি। এই ইন্টেন্টটাই আমাদের সাহায্য করবে। মাঝে মধ্যে ধস হতেই পারে। তবে আমি মনে করি না, আমরা আমাদের খেলার ধরন বদলাব।”
“দল হিসেবে আমাদের টিম ম্যানেজমেন্ট বা ক্রিকেটার, সবারই এই চিন্তাধারা। ব্যাটিং-বোলিং দুই বিভাগেই আমরা ভবিষ্যতে আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলব। আমাদের ম্যানেজমেন্টও চায়, আমরা যেন নির্ভয়ে থাকি। যদি ব্যর্থও হই, এটা আমাদের ভবিষ্যতে দীর্ঘ মেয়াদে বড় দল হতে সাহায্য করবে। এটাই পরিকল্পনা।”
এই মানসিকতা অটুট থাকলে সামনের দিনগুলোতে দল আরও বড় জায়গায় পৌঁছে যাবে মনে করেন তাসকিন।
“আজকে হয়তো আমাদের ব্যাটিংয়ে ধস নেমেছে। তবে এরকম ইন্টেন্ট না থাকলে কিন্তু দুইটা ম্যাচে দুইশ হতো না। এটাও সত্যি কথা, বুঝতে হবে। আমরা যদি ভবিষ্যতে টি-টোয়েন্টিতে ভালো করতে চাই, আমাদের ইন্টেন্ট থাকতেই হবে। বোলার-ব্যাটসম্যান সবারই আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে এগোতে হবে।”
“কিছু দিন হয়তো এরকম খেলতে গিয়ে ধস নামবে, এটাও আমরা মেনে নিয়ে এগোবো। এমন না যে আমরা ভয়ডর নিয়ে থাকব। ভবিষ্যতে আমাদের সাহায্য করবে এই ইন্টেন্ট, ব্যর্থতার ভয়টা বাদ দিয়ে ক্রিকেট খেলা। আমি মনে করি, এই ইন্টেন্টই আমাদের সামনে আরও ভালো করতে সাহায্য করবে।”