নিজেদের খেলার ধরনের আস্থা এখনও অটুট জ্যাক ক্রলির, তবে প্রক্রিয়ায় একটু ঘষামাজার প্রয়োজন দেখছেন এই ওপেনার।
Published : 29 Mar 2024, 10:37 AM
বাজবলের দাপুটে যাত্রা মুখ থুবড়ে পড়েছে ভারতে গিয়ে। পুরোনো প্রশ্ন আর সংশয়গুলিও তাই উচ্চকিত হয়েছে আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। জ্যাক ক্রলি অবশ্য নিজেদের ঘরানায় এখনও আস্থা রাখছেন প্রবলভাবেই। তবে সময়ের দাবি মিটিয়ে নতুন মৌসুমে দলীয় কৌশলে একটু ঘষামাজার প্রয়োজনও দেখছেন ইংল্যান্ডের এই ওপেনার।
বাজবল ঘরানার ক্রিকেট দিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটে ঝড় তোলা ইংল্যান্ড এবার ভারত সফরে গিয়েছিল অনেক আশাকে সঙ্গী করে। প্রথম টেস্টে দারুণ জয়ের পর সেই আশার পালে জোর হাওয়া লাগে আরও। কিন্তু সময়ের সঙ্গে পাল ছিঁড়ে দিশাহীন হয়ে পড়ে আশার তরী। পরের সব টেস্ট হেরে ইংলিশরা শেষ পর্যন্ত সিরিজ হেরে বসে ৪-১ ব্যবধানে। এর মধ্যে ৪৩৪ রানের হার, ইনিংস ব্যবধানে পরাজয়ও আছে।
বাজবলের অপ্রতিরোধ্য যাত্রায় প্রথম প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পেরেছিল অস্ট্রেলিয়া। গত অ্যাশেজে প্রথম দুই টেস্টেই হেরে যায় ইংল্যান্ড। পরে তৃতীয় টেস্ট জিতলেও ইংলিশরা পারেনি অ্যাশেজ ফিরিয়ে আনতে। চতুর্থ টেস্ট ড্র করে এক ম্যাচ বাকি রেখেই অ্যাশেজ ধরে রাখা নিশ্চিত করেন প্যাট কামিন্সরা। তবে শেষ টেস্ট জিতে বেন স্টোকসের দল সিরিজ হার এড়ানোর পাশাপাশি বাজবলকেও অপরাজেয় রাখতে পারে।
কিন্তু ভারতে ভালো শুরুর পর আর পাত্তা পায়নি বাজবল। সিরিজ যত এগিয়েছে, ইংল্যান্ডের সাবেকদের অনেকেই স্টোকসদের খেলার ধরনের সমালোচনা করে বলেছেন প্রথাগত ঘরানায় ফিরে আসতে। কিন্তু এই দল বেছে নিয়েছে নিজেদের পথই। সাফল্য তাতে আসেনি।
ব্যর্থ সিরিজে ইংল্যান্ডের সফলত ব্যাটসম্যান ছিলেন ক্রলি। ৫ টস্টে ৪০.৭ গড়ে তিনি করেন ৪০৭ রান। ইংলিশ কাউন্টি মৌসুম শুরুর আগে ওভালে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে এই ওপেনার বললেন, কোনো ঔদ্ধত্য বা অহংকার থেকে নয়, বরং বিশ্বাস থেকেই নিজেদের ধরনটা বদলাতে চাননি তারা।
“আমরা সত্যি বলতে কখনোই আস্থা হারাইনি এবং একই মানসিকতা ধরে রেখেছি। সিরিজজুড়েই একই মানসিকতা ছিল আমাদের এবং আমার মনে হয় না, এতে কোনো দাম্ভিকতা ছিল। আমরা সত্যিকার অর্থেই নিজেদের ওপর ভরসা রেখেছি এবং বিশ্বাস রেখেছি যে সিরিজ জিততে পারি।”
“সবকটি ম্যাচেই একটা পর্যায়ে আমাদের সম্ভাবনা ছিল এবং আমরা খেলায় ছিলাম। এর আগে যখন আমি ভারত সফরে গিয়েছিলাম, তখন তো আমরা লড়াইয়েই থাকতে পারিনি। এবার আমরা নিজেদের ভালো সম্ভাবনা জাগিয়েছি। তবে সত্যি বলতে, ওদের (ভারত) মতো যথেষ্ট নিখুঁত হতে পারিনি আমরা।”
চতুর্থ টেস্টের কথা মনে করিয়ে দিলেন ক্রলি, যেখানে ইংল্যান্ড একটা সময় পর্যন্ত প্রবল চাপে রেখেছিল ভারতকে। জো রুটের অপরাজিত শতরানে প্রথম ইনিংসে ৩৫৩ রান তোলে ইংলিশরা। এরপর ভারতের রান ছিল একটা সময় ৭ উইকেটে ১৭৭। কিন্তু লোয়ার অর্ডারদের নিয়ে দারুণ লড়াইয়ে ধ্রুব জুরেল ভারতকে পার করান তিনশ। এরপরও ৪৬ রানের লিড পায় ইংল্যান্ড। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে এগোতে গিয়েই তারা গুটিয়ে যায় কেবল ১৪৫ রানে। ভারত শেষ পর্যন্ত জিতে যায় ৫ উইকেটে।
ক্রলির ধারণা, ওই ম্যাচটা ইংল্যান্ড জিততে পারলে সিরিজের বাস্তবতা ভিন্ন হতে পারত।
“রাঁচিতে আমাদের জেতা উচিত ছিল। জিতলেই সিরিজ ২-২ হতো এবং তখন শেষ টেস্টে কী হতে পারত, কেউ জানে না। পিছিয়ে পড়ে মোমেন্টাম প্রতিষ্ঠা করা সবসময়ই কঠিন। পাঁচ দিন ধরে লড়াইয়ে তাদের স্কিল তো কোনো না কোনো পর্যায়ে ফুটে উঠবেই এবং তারা অসাধারণ এক দল।”
“তার পরও সফর উপভোগ্য ছিল। আমরা ভালো চেষ্টা করেছি এবং শেখার অনেক কিছু আছে এখান থেকে।”
ইংল্যান্ডের পরের সিরিজ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আগামী জুলাইয়ে। ভারত সিরিজ থেকে শিক্ষা নিয়ে বাজবলকে একটু ঘষেমেজে তৈরি করে ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে মাঠে নামতে চান ক্রলি।
“স্রেফ কিছুটা মরিমার্জন দরকার। চাপ হজম করে তা প্রতিপক্ষের ওপর ফিরিয়ে দেওয়ার কথা আমরা সবসময়ই বলে আসছি। গত দুই বছরে এই কাজটি আমরা খুব ভালোভাবে করে আসছিলাম। সেটার জন্য (ম্যাচের) সঠিক সময়টা বুঝতে পারা নিয়ে আলোচনা করেছি। নিশ্চিতভাবেই এটাকে পরিমার্জিত করতে পারি আমরা।”
“এর মানে এই নয় যে আমরা আরও নেতিবাচক হয়ে উঠব। বরং যেভাবে খেলে আসছি এবং দ্রুত রান করেছি, তা করে যাব আমরা। তবে সেই সময়টা ঠিকঠাক বাছাই করতে হবে আমাদের, যখন আমরা খেলার চূড়ায় থাকি। নিশ্চিত করতে হবে যেন আমরা ইতিবাচক থাকি এবং গত দুই বছরে যা খুব ভালোভাবে করে আসছি, তা ফসকে যেতে দেওয়া যাবে না।”
ভারতে সিরিজ জিততে না পারার আক্ষেপটা আবার ফুটে উঠল তার কণ্ঠে। তবে নিজেদের খেলার ধরন নিয়ে তার কোনো আফসোস নেই।
“ঘরের মাঠে টানা ১৭ সিরিজ জিতেছে ভারত। এটাকে উল্টে দিতে পারলে বিশেষ কিছু হতো। পারিনি আমরা, তবে তাতে আমরা খুব ভেঙে পড়ছি না। আমাদের চেনা পথেই আমরা অটল থাকব, স্রেফ আরেকটু ভালোভাবে করার চেষ্টা করব।”