কষ্টের জয়ে আশা বাঁচিয়ে রাখল অস্ট্রেলিয়া

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ইংল্যান্ড হারলে কিংবা ম্যাচটি ভেস্তে গেলেই কেবল সেমি-ফাইনালে যেতে পারবে অস্ট্রেলিয়া।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Nov 2022, 11:58 AM
Updated : 4 Nov 2022, 11:58 AM

ইব্রাহিম জাদরান ও গুলবাদিন নাইবের পঞ্চাশোর্ধ জুটি অস্ট্রেলিয়ার মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠছিল তখন। লেগ স্পিনার অ্যাডাম জ্যাম্পাকে ডিপ মিড উইকেটে খেলে দ্বিতীয় রানের জন্য ছুটলেন ইব্রাহিম। গ্লেন ম্যাক্সওয়েল লং অন থেকে অনেকটা দৌড়ে অসাধারণ এক থ্রোয়ে সরাসরি বল লাগালেন নন স্ট্রাইকার প্রান্তের স্টাম্পে। বিপজ্জনক হয়ে ওঠা নাইব তখনও বেশ দূরে। যেন ম্যাচের ভাগ্য লেখা হয়ে গেল সেখানেই। শেষের ঝড়ে রশিদ খান আশা জাগালেও পারলেন না অল্পের জন্য। আফগানিস্তানকে হারিয়ে সেমি-ফাইনালে যাওয়ার আশা বাঁচিয়ে রাখল অস্ট্রেলিয়া।

অ্যাডিলেইডে শুক্রবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভ পর্বে দুই দলের শেষ ম্যাচে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের জয় ৪ রানে।

দলের বাঁচা-মরার ম্যাচে ফিল্ডিংয়ে ওই ঝলকের আগে ব্যাট হাতেও নায়ক ম্যাক্সওয়েল। টি-টোয়েন্টিতে দেড় বছরের বেশি সময় পর ফিফটি করে তিনি খেলেন ৩২ বলে অপরাজিত ৫৪ রানের ঝড়ো ইনিংস। অস্ট্রেলিয়া পায় ১৬৮ রানের পুঁজি।

জবাবে ১৩ ওভারে ২ উইকেটে ৯৮ রানের শক্ত অবস্থানে থেকে ৯ বলের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে পথ হারিয়ে ফেলে আফগানিস্তান। রশিদের ২৩ বলে ৪ ছক্কা ও ৩ চারে অপরাজিত ৪৮ রানের ইনিংসে কমে পরাজয়ের ব্যবধান।

শেষ তিন বলে দরকার যখন ১৭, মার্কাস স্টয়নিসকে ছক্কা মেরে নাটকীয়তার আভাস দেন রশিদ। তবে বাকি দুই বলে একটি ডাবলের পর শুধু চার মারতে পারেন তিনি।

এই জয়ে এক নম্বর গ্রুপের দ্বিতীয় স্থানে উঠেছে অস্ট্রেলিয়া। শনিবার এই গ্রুপের শেষ ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ইংল্যান্ড হারলে কিংবা ম্যাচটি ভেস্তে গেলেই কেবল সেমি-ফাইনালে যেতে পারবে স্বাগতিকরা।

অস্ট্রেলিয়ার জয়ে বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেছে শ্রীলঙ্কার। লঙ্কানদের হারাতে পারলে সেমি-ফাইনালে উঠবে ইংল্যান্ড। এই গ্রুপ থেকে প্রথম দল হিসেবে পরের ধাপে গেছে নিউ জিল্যান্ড।

হ্যামস্ট্রিং চোটের জন্য নিয়মিত অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ ও টিম ডেভিডকে এ দিন পায়নি অস্ট্রেলিয়া। বাইরে রাখা হয় মিচেল স্টার্ককে। তাদের জায়গায় সুযোগ পান ক্যামেরন গ্রিন, স্টিভেন স্মিথ ও কেন রিচার্ডসন।

বিশ্বকাপ অভিষেকটা রাঙাতে পারেননি গ্রিন। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা অস্ট্রেলিয়া তৃতীয় ওভারে হারায় এই ওপেনারকে।

ডেভিড ওয়ার্নার খেলেন দারুণ কিছু শট। তবে আসর জুড়ে নিজের ছায়া হয়ে থাকা অভিজ্ঞ ওপেনার ইনিংস বড় করতে পারেননি এই ম্যাচেও (১৮ বলে ২৫)। একই ওভারে তাকে বোল্ড করার পর স্মিথকে এলবিডব্লিউ করে দেন নাভিন-উল-হক।

রানের গতিতে দম দেন এরপর মিচেল মার্শ ও স্টয়নিস। ৩০ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৪৫ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন মার্শ। ২১ বলে ২৫ রান করেন স্টয়নিস।

আর ম্যাক্সওয়েলের ঝড়ে দেড়শ ছাড়ায় স্বাগতিকদের সংগ্রহ। এই সংস্করণে ফিফটির স্বাদ পান তিনি ২৬ ইনিংস পর। ৬ চার ও ২ ছক্কায় গড়া তার ম্যাচের সেরা ইনিংসটি।

২১ রানে ৩ উইকেট নিয়ে আফগানিস্তানের সফলতম বোলার নাভিন। অফ স্পিনার মুজিব উর রহমান সুবিধা করতে পারেননি। ৪২ রান দিয়ে তিনি পান একটি উইকেট, লেগ স্পিনার রশিদ ২৯ রানে একটি।

রান তাড়ায় প্যাট কামিন্সের প্রথম ওভারে চার-ছক্কায় শুরু করেন রহমানউল্লাহ গুরবাজ। তবে উসমান গনি যেতে পারেননি দুই অঙ্কে।

পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে গুরবাজের ১৭ বলে ৩০ রানের ইনিংস থামান রিচার্ডসন। ৬ ওভারে আফগানিস্তানের রান ছিল ২ উইকেটে ৪৭।

চার নম্বরে নেমে ঝড় তোলেন হজরতউল্লাহ জাজাইয়ের বদলি হিসেবে বিশ্বকাপে সুযোগ পাওয়া নাইব। গ্রিনকে ছক্কায় ওড়ানোর পর তিনি টানা ছক্কা-চার মারেন রিচার্ডসনকে।

শেষ ৪২ বলে ৮ উইকেট হাতে রেখে আফগানিস্তানের দরকার ছিল ৭১ রান।

এরপরই ম্যাক্সওয়েলের ওই ঝলকে রান আউট হন নাইব। ২৩ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় তিনি করেন ৩৯ রান।

একই ওভারে জ্যাম্পা পরের তিন বলের মধ্যে ফিরিয়ে দেন ইব্রাহিম (২৬) ও নাজিবউল্লাহ জাদরানকে। টিকতে পারেননি অধিনায়ক মোহাম্মদ নবিও।

এরপর রশিদের ঝড়ে নতুন আশার সঞ্চার। বিগ ব্যাশে অ্যাডিলেইড স্টাইকার্সের হয়ে খেলায় অ্যাডিলেইড ওভাল বলা যায় তার ‘ঘরের মাঠ’।

১৪ বলে দরকার যখন ৪৫ রান, রিচার্ডসনকে পরপর দুই ছক্কায় ব্যবধান কমিয়ে আনেন রশিদ। পরের ওভারে তিনি একটি করে ছক্কা-চার মারেন জশ হেইজেলউডকে।

শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ২২। স্টয়নিসের প্রথম ডেলিভারি ওয়াইড হলেও নন স্ট্রাইকার প্রান্তে রান আউট হয়ে যান দারবিশ রাসুলি।

বৈধ প্রথম তিন বলের একটিতে চার মারলেও দুটি ডট খেলেন রশিদ। এরপর তৃতীয় বলে মারেন ছক্কা। ২ বলে দরকার যখন ১১, অবিশ্বাস্য কিছু আর করে দেখাতে পারেননি টি-টোয়েন্টি র‍্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর বোলার রশিদ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

অস্ট্রেলিয়া: ২০ ওভারে ১৬৮/৮ (ওয়ার্নার ২৫, গ্রিন ৩, মার্শ ৪৫, স্মিথ ৪, স্টয়নিস ২৫, ম্যাক্সওয়েল ৫৪*, কামিন্স ০, রিচার্ডসন ১, জ্যাম্পা ১*; ফারুকি ৪-০-২৯-২, মুজিব ৪-০-৪২-১, নাভিন ৪-০-২১-৩, নাইব ৩-০-৩১-০, রশিদ ৪-০-২৯-১, নবি ১-০-১৪-০)

আফগানিস্তান: ২০ ওভারে ১৬৪/৭ (গুরবাজ ৩০, গনি ২, ইব্রাহিম ২৬, নাইব ৩৯, নবি ১, নাজিবউল্লাহ ০, রাসুলি ১৫, রশিদ ৪৮*, নাভিন ০*; হেইজেলউড ৪-০-৩৩-২, কামিন্স ৪-০-২২-০, স্টয়নিস ২-০-২৬-০, রিচার্ডসন ৪-০-৪৮-১, জ্যাম্পা ৪-০-২২-২, গ্রিন ২-০-১৩-০)

ফল: অস্ট্রেলিয়া ৪ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: গ্লেন ম্যাক্সওয়েল