মোসাদ্দেকের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে মোহামেডানকে ফের হারিয়ে শীর্ষে আবাহনী

দিনের অন্য দুই ম্যাচে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের বিপক্ষে পাত্তাই পায়নি শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব এবং লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জকে উড়িয়ে দিয়েছে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব। 

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 May 2023, 12:30 PM
Updated : 1 May 2023, 12:30 PM

শেষ ওভারে ২০ রানের সমীকরণে প্রথম বলেই ছক্কা মারলেন মুশফিক হোসেন। এক বল পরই অবশ্য তাকে ফিরিয়ে দিলেন মোসাদ্দেক হোসেন। ওভারে দিলেন কেবল ১১ রান। শেষ ওভারের মতো পুরো ম্যাচেই উজ্জ্বল আবাহনী লিমিটেড অধিনায়ক। তার অলরাউন্ড দ্যুতিতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবকে হারাল আবাহনী।

মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে সুপার লিগের প্রথম দিন মোহামেডানের বিপক্ষে ৮ রানে জিতেছে আবাহনী। ২৫৯ রানের লক্ষ্যে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৫০ রানে থেমেছে মোহামেডান। 

এই জয়ে ১২ ম্যাচে ২২ পয়েন্ট নিয়ে এককভাবে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠে গেছে প্রিমিয়ার লিগের সফল ক্লাবটি। সমান ম্যাচে ৬ জয়ে মোহামেডানের সংগ্রহ ১৩ পয়েন্ট। 

প্রথমে ব্যাট হাতে চাপের মুখে ৬৩ রানের ইনিংস খেলেন মোসাদ্দেক। পরে বোলিংয়ে ৪ উইকেট নিয়ে মোহামেডানকে আটকে রাখার কাজটি দারুণভাবে সামলান তিনি। তার হাতেই ওঠে ম্যাচ সেরার পুরস্কার।

অধিনায়ককে দারুণ সঙ্গ দিয়ে ৬৩ রান করেন কিপার-ব্যাটসম্যান জাকের আলিও। পেস বোলিংয়ের দুর্দান্ত প্রদর্শনীতে ৩ উইকেট নেন তরুণ তানজিম হাসান।

একই মাঠে দুই দলের প্রথম পর্বের ম্যাচে মোহামেডানকে ৬ উইকেটে হারিয়েছিল আবাহনী।

দ্বিতীয় দেখায় টস জিতে ব্যাটিংয়ে শুরুটা তেমন ভালো ছিল না আবাহনীর। পঞ্চাশের আগেই ড্রেসিং রুমে ফিরে যান প্রথম তিন ব্যাটসম্যান। ছন্দে থাকা দুই ওপেনার এনামুল হক ও মোহাম্মদ নাইম শেখ ফেরেন অল্পে। একই পথ ধরেন মাহমুদুল হাসান জয়। 

চতুর্থ ওভারে নাজমুল ইসলামের জোরের ওপর করা আর্মারে বোল্ড এনামুল (১৪ বলে ১১)। ১৯ বলে ২ রান করা নাইম ফেরেন মুশফিক হাসানের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে প্লেইড অন হয়ে।

সৈয়দ খালেদ আহমেদের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে গালিতে ধরা পড়েন ৪ চারে ১৯ রান করা জয়। আগের বলে ঠিক একইভাবে একই জায়গায় ক্যাচ দিয়ে জীবন পেয়েছিলেন তিনি।

চতুর্থ উইকেট জুটিতে ধাক্কা সামাল দেন জাকের আলি ও আফিফ হোসেন। দারুণ ব্যাটিংয়ে দুজন মিলে যোগ করেন ৮৫ বলে ৭৫ রান। এই জুটি ভাঙেন শুভাগত হোম। 

স্টাম্পের ওপর করা ডেলিভারিতে সুইপের চেষ্টায় ক্যাচ আউট হন আফিফ। ৪ চার ও ১ ছক্কায় ৪০ বলে ৩৬ রান করে ফেরেন তিনি। এরপর জাকের ফিফটি স্পর্শ করলেও বেশিদূর যেতে পারেননি। ৮২ বলে ৬৩ রান করে শুভাগতর বলেই স্টাম্পড হন এই কিপার-ব্যাটসম্যান। 

এরপর খুশদিল শাহর সঙ্গে জুটি বেঁধে দলকে এগিয়ে নেন মোসাদ্দেক। ৪২তম ওভারে দুইশ করে আবাহনী। মোসাদ্দেক ফিফটি করেন ৫৯ বল খেলে। 

৪৪তম ওভারে দুই রান নিতে গিয়ে রান আউট হন খুশদিল। আর মোসাদ্দেক ৩টি করে চার-ছক্কায় ৬৩ রান করে মুশফিকের বলে কট বিহাইন্ড হন। 

দারুণ বোলিংয়ে ৩২ রান খরচায় ২ উইকেট নেন মুশফিক। শুভাগতর ঝুলিতেও জমা পড়ে ২টি। 

রান তাড়ায় শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে মোহামেডান। পাঁচ ওভারের মধ্যে ফিরে যান তিন ব্যাটসম্যান। তৃতীয় ওভারে প্রথমবার বল হাতে নিয়ে সৌম্য সরকারকে এলবিডব্লিউ করেন তানজিম হাসান। ২ চারে স্রেফ ৮ রান করতে পারেন সৌম্য। 

পরের ওভারে নাহিদুলকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে ধরা পড়েন ইমরুল কায়েস (১২ বলে ১)। 

তানজিমের অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল ড্রাইভ করতে গিয়ে কট বিহাইন্ড হন কামিন্দু মেন্ডিস। বল হাতে ৭ ওভারে ৪৮ রান খরচায় উইকেটশূন্য থাকা শ্রীলঙ্কান অলরাউন্ডার ব্যাটিংয়ে করেন স্রেফ ১ রান। 

স্রেফ ১২ রানে ৩ উইকেট হারানো দলের পক্ষে প্রতিরোধ গড়েন দুই তরুণ আরিফুল ইসলাম ও মাহিদুল ইসলাম। চতুর্থ উইকেটে ৭৩ রানের জুটি গড়তে দুজন খেলেন ১১৯ বল। 

২৪তম ওভারে এই জুটি ভাঙেন তানজিম। আগের বলে চার মেরে পরেরটিতে কট বিহাইন্ড হন আরিফুল। ৫৯ বলে ৪ চারে ৩০ রান করেন তিনি। 

আরিফুলের বিদায়ের পর ছয় নম্বরে নামা মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে জুটি বাঁধেন মাহিদুল। ৫ চারে চলতি লিগে নিজের চতুর্থ ফিফটি করতে ৮২ বল খেলেন কিপার-ব্যাটসম্যান। পঞ্চাশ ছোঁয়ার পর হাত খুলে খেলতে শুরু করেন তিনি। 

রাকিবুল হাসান ও খুশদিলকে লং অন ও মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা মারেন মাহিদুল। তবে মাহমুদউল্লাহ শুরুতে ঠিক চাহিদা অনুযায়ী রান নিতে পারেননি। ফলে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে বলের সঙ্গে রানের ব্যবধান। 

শেষ ১০ ওভারে জয়ের জন্য ৯৯ রান দরকার ছিল মোহামেডানের। 

রাকিবুলকে ছক্কায় ওড়ানোর পরের ওভারে মোসাদ্দেককে আবার ছক্কা মারতে গিয়ে লং অনে ধরা পড়েন মাহিদুল। ৬ চার ও ৩ ছক্কায় ১১৩ বলে ৮৮ রান করেন তিনি।  ভাঙে ১০২ বলে ৮৬ রানের জুটি।

এরপর দলকে জেতানোর দায়িত্ব বর্তায় মাহমুদউল্লাহর কাঁধে। অনুজ সতীর্থের ফেরার পর খোলস ছেড়ে বের হন তিনি। উইকেটের চারপাশে দারুণ কিছু চারে আশা বাঁচিয়ে রাখেন। 

প্রথম ৫০ বলে ৩২ রান করা মাহমুদউল্লাহ পঞ্চাশ ছুঁতে খেলেন ৫৯ বল। তানজিমকে জোড়া চার মেরে ফিফটি পূরণ করেন তিনি। 

তবে এরপর টিকতে পারেননি। তাকেও ফেরান মোসাদ্দেক। জোরের ওপর করা ডেলিভারি স্লগ করতে গিয়ে বোল্ড হন ৬৩ বলে ৫৪ রান করা অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। 

এরপর ৪৫তম ওভারে সাইফ উদ্দিনকে জোড়া ছক্কা মেরে আশা জাগান আরিফুল হক। পরের ওভারে আরও একটি ছক্কা মারেন তিনি। ওই ওভারেই দুই রান নিতে গিয়ে আফিফের সরাসরি থ্রোয়ে রান আউট হয়ে ফিরতে হয় ১৪ বলে ২৬ রান করা অলরাউন্ডারকে। 

শেষ দিকে শুভাগত হোমের সামনে সুযোগ ছিল নায়ক হওয়ার। কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। ২ ওভারে ২৪ রানের সমীকরণে তানজিমের ওভারে স্রেফ ৪ রান নিতে পারেন অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার। 

এরপর শেষ ওভারে মোসাদ্দেকের ওই দৃঢ়তা এবং জয়ের আনন্দে ভাসে আবাহনী।  

সংক্ষিপ্ত স্কোর: 

আবাহনী লিমিটেড: ৫০ ওভারে ২৫৮/৭ (এনামুল ১১, নাইম ২, জয় ১৯, জাকের ৬৩, আফিফ ৩৬, মোসাদ্দেক ৬৩, খুশদিল ২৯, সাইফ উদ্দিন ১৬*, নাহিদুল ৯*; মুশফিক ১০-১-৩২-২, নাজমুল ১০-০-৬৩-১, খালেদ ১০-০-৪৯-১, সৌম্য ৩-০-১৮-০, কামিন্দু ৭-০-৪৮-০, শুভাগত ১০-০-৪৭-২)

মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব: ৫০ ওভারে ২৫০/৯ (ইমরুল ১, সৌম্য ৮, মাহিদুল ৮৮, কামিন্দু ১, আরিফুল ইসলাম ৩০, মাহমুদউল্লাহ ৫৪, আরিফুল ২৬, শুভাগত ২১*, খালেদ ০, মুশফিক ৮, নাজমুল ২*; সাইফ উদ্দিন ৭-০-৪২-০, নাহিদুল ১০-২-২১-১, তানজিম ৯-০-৪৮-৩, রাকিবুল ৯-০-৫৬-০, খুশদিল ৭-১-৩১-০, মোসাদ্দেক ৮-০-৫১-৪) 

ফল: আবাহনী লিমিটেড ৮ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: মোসাদ্দেক হোসেন

জয়নুল-টিপুর ছোবলে বিধ্বস্ত শেখ জামাল 

প্রথম পর্বে প্রায় অপ্রতিরোধ্য ছিল শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব। কিন্তু সুপার লিগের শুরুতে মুখ থুবড়ে পড়ল প্রিমিয়ার লিগের বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। জয়নুর ইসলামের পেস ও টিপু সুলতানের স্পিনে কাবু হয়ে আসরে দ্বিতীয় হারের স্বাদ পেল নুরুল হাসান সোহানের নেতৃত্বাধীন দলটি। 

ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলি স্টেডিয়ামে শেখ জামালকে ৭ উইকেট হারিয়েছে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স। স্রেফ ৯০ রানের লক্ষ্য ২০৫ বল হাতে রেখে ছুঁয়ে ফেলেছে তারা।

এই পরাজয়ে শিরোপা ধরে রাখার অভিযানে বড়সড় ধাক্কাই খেল শেখ জামাল। ১২ ম্যাচে তাদের সংগ্রহ ২০ পয়েন্ট। সমান ম্যাচে ষষ্ঠ জয়ে গাজী গ্রুপের পয়েন্ট ১৩।

চলতি লিগে একশ রানের নিচে অলআউট হওয়া দ্বিতীয় দল শেখ জামাল। প্রথম পর্বে লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জের বিপক্ষে ৮০ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব।

এদিন শেখ জামালকে অল্পে থামানোর কারিগর জয়নুল ও টিপু। ডানহাতি পেসে স্রেফ ২৩ রানে ৪ উইকেট নেন জয়নুল। বাঁহাতি স্পিনার টিপুর শিকার ২১ রানে ৩টি। জয়নুলের হাতে ওঠে ম্যাচসেরার পুরস্কার।

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে দেখেশুনে শুরু করেন দুই ওপেনার সাইফ হাসান ও রবিউল ইসলাম রবি। পঞ্চম ওভারে জয়নুলের অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল পুল করতে গিয়ে মিড অনে ক্যাচ দেন রবিউল (৭)।

পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে টিপুর ঝুলিয়ে দেওয়া ডেলিভারি অনেক দূর থেকে সুইপ খেলার চেষ্টা করেন সাইফ। ব্যাটের ওপরের কানায় লেগে বল উঠে যায় আকাশে। পয়েন্ট ও গালির মাঝামাঝি থেকে ক্যাচ নেন আলাদুল্লা আল গালিব। 

সাইফ আউট হন ৪ চার ও ১ ছক্কায় ২২ রান করে। পরের ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় এটিই হয়ে থাকে ইনিংসের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। 

রান তাড়ায় বেশি কিছু করতে পারেননি সবশেষ ম্যাচে দ্রুততম সেঞ্চুরি করা হাবিবুর রহমান। তিন নম্বরে নামা ফরহাদ হোসেনও ফেরেন অল্পে। 

তবে মেহেদি হাসান মারুফ একপ্রান্তে সাবলিল ব্যাটিং করে দলকে জয়ের কাছাকাছি নিয়ে যান। স্রেফ ২ রান বাকি থাকতে আউট হন ডানহাতি ওপেনার। ৫৫ বলে ৮ চারে ৪৫ রান করেন তিনি। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর: 

শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব: ৩৩.২ ওভারে ৮৯ (সাইফ ২২, রবিউল ৭, সৈকত ১৯, ফজলে ২০, সোহান ৮, রসুল ২, তাইবুর ২, জিয়াউর ৬, আরিফ ০, মনির ১, শফিকুল ০*; জয়নুল ৮.২-১-২৩-৪, মহিউদ্দিন ৭-১-২০-১, এনামুল ৯-১-১৫-০, টিপু ৬-১-২১-৩, মাহমুদুল ৩-০-৯-১)

গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স:  ১৫.৫ ওভারে ৯২/৩ (মেহেদি ৪৫, হাবিবুর ১৩, ফরহাদ ১৩, গালিব ৪*, মাহমুদুল ৪*; রসুল ৮-১-২৯-১, আরিফ ৩-০-২৬-০, মনির ৩.৫-১-১৮-২, শফিকুল ১-০-১১-০)

ফল: গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স ৭ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: জয়নুল ইসলাম 

জাকির-শাহাদাতের সেঞ্চুরিতে রান পাহাড়ে চাপা রূপগঞ্জ

চোট কাটিয়ে দীর্ঘ দিন পর ফিরেই সেঞ্চুরি করলেন জাকির হাসান। উদ্বোধনী সঙ্গী শাহাদাত হোসেনও পেলেন তিন অঙ্কের দেখা। শেষ দিকে ঝড় তুললেন আল আমিন হোসেন। প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব পৌঁছে গেল বিশাল সংগ্রহে। যার ধারেকাছেও যেতে পারেনি লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ। 

বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে রূপগঞ্জকে ১৭৩ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে প্রাইম ব্যাংক। ৩৩১ রানের লক্ষ্যে স্রেফ ১৫৭ রানে গুটিয়ে গেছে মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। 

১২ ম্যাচে ৮ জয়ে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের তিন নম্বরে উঠে গেছে প্রাইম ব্যাংক। সমান ম্যাচে সমান পয়েন্ট নিয়ে চারে রূপগঞ্জ। 

প্রাইম ব্যাংকের বড় জয়ের রুপকার দুই ওপেনার জাকির ও শাহাদাত। দারুণ সেঞ্চুরিতে নিজের ফেরার ম্যাচটি রাঙান আঙুলের চোটের কারণে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে ও বিদেশ সফরের দুই সিরিজ মিস করা জাকির। 

লিস্ট 'এ' ক্রিকেটে নিজের তৃতীয় সেঞ্চুরিতে ১০৬ বলে ১০৬ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরার পুরস্কারও জেতেন বাঁহাতি ওপেনার। চলতি লিগে নিজের প্রথম ফিফটিকেই সেঞ্চুরিতে রূপ দেওয়া শাহাদাত ১১৯ বলে করেন ১০৪ রান। 

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে উদ্বোধনী জুটিতে ২২২ রান যোগ করেন জাকির ও শাহাদাত। শুরুতে খানিক ধীরে খেলা জাকির ক্রমে খুলে দেন নিজের আগল। ষষ্ঠ ওভারে আল আমিন হোসেনকে তিন চার মারেন তিনি। 

এরপর সাবলিল ব্যাটিংয়ে এগিয়ে নেন নিজের ইনিংস। অপর প্রান্তে শাহাদাতও ছিলেন ছন্দে। ৬ চারে ৫৭ বলে পঞ্চাশ পূরণ করেন জাকির। ৫ চারে শাহাদাতের লাগে ৬৮ বল। 

পরের পঞ্চাশ করতে জাকিরের লাগে ৪৪ বল। ৯৮ রান থেকে সোহাগ গাজীর লেংথ বলে পুল করে চার মেরে দুই হাত দুই পাশে ছড়িয়ে উদযাপনে মেতে ওঠেন তিনি।

সেঞ্চুরির পর অবশ্য আর বেশি দূর এগোতে পারেননি জাকির। চিরাগ জানির বলে জায়গা বানিয়ে খেলতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন তিনি। শেষ হয় তার ১৩ চারের ইনিংস।

জাকির ফেরার পর তিন অঙ্কে পৌঁছান শাহাদাত। জাকিরের মতোই তৃতীয় সেঞ্চুরি করতে তার লাগে ১১৭ বল। তিনিও এরপর আর টিকতে পারেননি। আব্দুল হালিমের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন তিনি। 

এরপর প্রাইম ব্যাংককে তিনশ পার করান আল আমিন জুনিয়র। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে স্রেফ ২৩ বলে ফিফটি করেন ডানহাতি মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। শেষ ওভারে ফেরার আগে ৮ চার ও ১ ছক্কায় ২৭ বলে ৫৬ রান করেন তিনি। 

অন্য বোলারদের ব্যর্থতার দিনে ১০ ওভারে স্রেফ ৩৯ রান খরচায় ৩ উইকেট নেন শুরু থেকেই দারুণ অলরাউন্ড নৈপুণ্য দেখানো চিরাগ। 

পরে ব্যাটিংয়ে নেমেও দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৮ রানের ইনিংস খেলেন রূপগঞ্জের ভারতীয় অলরাউন্ডার।

বিশাল লক্ষ্যে ৩০ পেরোতে পেরেছেন আর কেবল আশিক উল আলম । তিন নম্বরে নেমে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ৪৮ বলে ৩৬ রান করেন তিনি। 

আর কোনো ব্যাটসম্যান তেমন কিছু করতে না পারায় ৬৯ বল আগেই গুটিয়ে যায় তাদের ইনিংস। 

প্রাইম ব্যাংকের পক্ষে ২টি করে উইকেট নেন শেখ মেহেদি হাসান, রুবেল হোসেন ও নাসির হোসেন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর: 

প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব: ৫০ ওভারে ৩৩০/৬ (শাহাদাত ১০৪, জাকির ১০৬, মিঠুন ১৮, নাসির ১৫, আল আমিন ৫৬, মেহেদি ৫, কাশিফ ৩*, অলক ৩*; চিরাগ ১০-০-৩৯-৩, আল আমিন ৭-০-৪৩-১, হালিম ১০-০-৭২-২, মাশরাফি ৯-০-৬৭-০, সোহাগ ৭-০-৫১-০, আশিক ২-০-১১-০, রাজিবুল ৪-০-৩২-০, তানবির ১-০-৯-০)

লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ: ৩৮.৩ ওভারে ১৫৭ (সাব্বির ২০, ফারদিন ৬, আশিক ৩৬, ইরফান ৭, চিরাগ ৩৮, মাশরাফি ০, তানবির ৪, সোহাগ ২১, রাজিবুল ১৬, হালিম ১, আল আমিন ১*; মেহেদি ৭-১-২৮-২, রুবেল ৭-০-৩১-২, রাজা ৭-১-৩১-০, নাসির ৭-০-২২-২, কাশিফ ৮-০-৩৬-১, মইনুল ২-০-৩-১, অলক ০.৩-০-১-১) 

ফল: প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব ১৭৩ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: জাকির হাসান

শেষ ওভারের রোমাঞ্চে লেপার্ডসকে বিদায় করল অগ্রণী ব্যাংক 

শেষ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন পড়ে ১৩ রান। উইকেট হাতে ২টি। সালাউদ্দিন শাকিলের প্রথম দুই বলে ২ রান নেন মার্শাল আইয়ুব ও এনামুল। তৃতীয় বলে মিড উইকেট দিয়ে বিশাল ছক্কা মারেন এনামুল। তার ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে পরের বল চলে যায় থার্ড ম্যান বাউন্ডারিতে। ম্যাচ হয়ে যায় টাই। পঞ্চম বলে এনামুল রান আউট হলেও শেষ বলে ১ রান নিয়ে নাটকীয় জয় পায় অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব।

বিকেএসপির ৪ নম্বর মাঠে রেলিগেশন লিগের ম্যাচে ঢাকা লেপার্ডসের বিপক্ষে ২৫৩ রানের লক্ষ্যে ১ উইকেটে জিতেছে অগ্রণী ব্যাংক।

এই জয়ে প্রিমিয়ার লিগে টিকে থাকার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হলো অগ্রণী ব্যাংকের। ১২ ম্যাচে তাদের সংগ্রহ ৮ পয়েন্ট। সমান ম্যাচে ৩ পয়েন্ট নিয়ে প্রথম বিভাগে অবনমন নিশ্চিত হয়ে গেছে নবাগত লেপার্ডসের।

রেলিগেশন লিগের আরেক দল শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব তাদের বাকি দুই ম্যাচ জিতলে বিপদে পড়তে পারে অগ্রণী ব্যাংক। 

লেপার্ডসকে হারানোর পথে দায়িত্বশীল ব্যাটিং করেছেন দুই মার্শাল আইয়ুব ও জহুরুল ইসলাম। পাঁচ নম্বরে নেমে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে ৭৭ বলে ৬৩ রান করেন অধিনায়ক মার্শাল। 

জহুরুল খেলেন ৩ চার ও ৪ ছক্কায় ৬৬ রানের ইনিংস। সাদমান ইসলামের ব্যাট থেকে আসে ৪৫ রান। শেষ দিকে এনামুলের ৯ বলে ১৭ রানের ছোট তবে অতি গুরুত্বপূর্ণ ইনিংসে জয় নিশ্চিত হয় অগ্রণী ব্যাংকের। 

লেপার্ডসকে আড়াইশ ছাড়ানো সংগ্রহ এনে দেওয়ার কারিগর মইন খান। আট নম্বরে নেমে ৭ চার ও ২ ছক্কায় স্রেফ ২৭ বলে ৫৮ রান করেন তিনি। এছাড়া ধ্রুব শোরে ৪৫, সোহরাওয়ার্দি শুভ ৪০ ও সাব্বির হোসেনের ব্যাট থেকে আসে ৩৩ রান। 

অগ্রণী ব্যাংকের হয়ে ৪ উইকেট নেন ভারতীয় ক্রিকেটার রোহিত রাইডু।

সংক্ষিপ্ত স্কোর: 

ঢাকা লেপার্ডস: ৫০ ওভারে ২৫২/৭ (শোভন ১০, পিনাক ২১, ধ্রুব ৪৫, রকিবুল ১২, সাব্বির ৩৩, সোহরাওয়ার্দি ৪০, আশিকুর ৮, মইন ৫৮*, আরিফুল ১০*; এনামুল ৬-০-৫২-০, শরিফউল্লাহ ১০-০-২৭-১, আরাফাত ৮-০-৪৫-১, আবু হায়দার ৮-০-৪৯-০, রোহিত ১০-০-৪৫-৪, ইলিয়াস ৮-১-৩০-১)

অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব: ৫০ ওভারে ২৫৩/৯ (আজমির ১, সাদমান ৪৫, রোহিত ১২, জহুরুল ৬৬, মার্শাল ৬৩*, শামসুল ২০, শরিফউল্লাহ ০, ইলিয়াস ৪, আবু হায়দার ১২, এনামুল ১৭*, আরাফাত ১; সালাউদ্দিন ১০-১-৪৪-২, সোহেল ১০-১-৬৩-২, মইন ১০-০-৪১-২, আরিফুল ১০-০-৫৪-০, সোহরাওয়ার্দি ১০-০-৪৮-১)

ফল: অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব ১ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: মার্শাল আইয়ুব