‘সাকিব ভুল বুঝতে পেরেছে’

ভুল স্বীকার করে তা পুনরাবৃত্তি না করার আশ্বাস দেওয়ায় সাকিবকে অধিনায়ক করা হয়েছে, জানালেন বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান জালাল ইউনুস।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 August 2022, 02:24 PM
Updated : 13 August 2022, 02:24 PM

দুই দিন আগের বাস্তবতা ছিল, বাংলাদেশ ক্রিকেটের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যেতে পারে সাকিব আল হাসানের। এখন সেই সম্পর্ক আরও পোক্ত। তিনিই দেশের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক। আগামী বিশ্বকাপে তার নেতৃত্বেই খেলবে দল। বিতর্কের শীর্ষ থেকে দায়িত্বের চূড়ায়, এমন বৈপরীত্য যেমন বিরল, তেমনি প্রশ্নবিদ্ধও বটে। বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান জালাল ইউনুস অবশ্য বলছেন, সাকিব ভুল স্বীকার করে ভবিষ্যতে পুনরাবৃত্তি না করার আশ্বাস দেওয়ার পরই তাকে অধিনায়ক করেছে বোর্ড।

অনলাইন বেটিং সাইট বেটউইনারের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বেটউইনার নিউজের শুভেচ্ছা দূত হওয়া নিয়ে কয়েক দিন ধরে তুমুল বিতর্ক চলছিল সাকিবকে ঘিরে। এই চুক্তি নিয়ে বিসিবি তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়। সেই নোটিশের জবাব আসতে দেরি হওয়ায় গত বৃহস্পতিবার বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “সাকিবকেই বেছে নিতে হবে সে দেশের ক্রিকেটে থাকবে নাকি বেটিংয়ে।”

এই বক্তব্যের পরপরই বিসিবিতে লিখিত দিয়ে সাকিব চুক্তি বাতিলের কথা জানান। যুক্তরাষ্ট্রে ছুটি কাটিয়ে তিনি দেশে ফেরেন শুক্রবার রাতে। শনিবার বিকেলে বিসিবি সভাপতির গুলশানে নিজের বাসভবনে আলেচনায় বসেন সাকিবকে নিয়ে। পরে বোর্ডের ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান জালাল ইউনুস সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা করেন, আগামী বিশ্বকাপ পর্যন্ত সাকিবই অধিনায়ক।

মাত্রই বিতর্কের কেন্দ্রে থাকা একজনকে কেন নেতৃত্বের জন্য বেছে নেওয়া হলো, সেটির ব্যাখ্যা দিলেন জালাল ইউনুস।

“এটা নিয়ে অনেক আলাপ হয়েছে। সাকিব তার ভুল বুঝতে পেরেছে যে এটা করা তার উচিত হয়নি। সাকিব আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার। আগে বোর্ড মিটিংয়েই আমাদের একটা চিন্তা-ভাবনা ছিল যে সাকিবকে অধিনায়ক করা হবে। আমরা সেটাতেই অটল থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

“যেহেতু সাকিব প্রেসিডেন্টের সামনে এবং আমাদের বলেছে যে, ভুল করে ওটাকে অনলাইন (নিউজ পোর্টাল) মনে করে এন্ডোর্সমেন্ট করেছিল। কাজটা ঠিক হয়নি। তাকে বুঝিয়ে বলার পর সে কিন্তু সরে এসেছে।”

জালাল ইউনুস বললেন, সাকিব তাদের কাছে দাবি করেছেন যে তাকে ভুল বোঝানো হয়েছে এই চুক্তি নিয়ে, “তার কাছে মনে হয়েছে যে হয়তো তাকে মিসগাইড করা হয়েছে।”

বেটিং সাইটের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি ছাড়াও বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তির আরও একটি ধারা ভঙ্গ করেছেন সাকিব। চুক্তিবদ্ধ যে কোনো ক্রিকেটারকে তাদের যে কোনো স্পন্সরশিপের কথা বিসিবিকে জানাতে হয় ও চুক্তিপত্রও বোর্ডে জমা দিতে হয়। সাকিব তা করেননি।

জালাল ইউনুস জানালেন, পরবর্তীতে এটা নিয়ে তারা আলোচনা করবেন।

“এসব নিয়েও আলোচনা হয়েছে। যেহেতু আমাদের অনুমতি ছাড়া চুক্তি করেছে, এ ব্যাপারে পরবর্তী বোর্ড সভায় আলোচনা করা হবে।”

বোর্ডের চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করা একজনকে অধিনায়ক কেন করা হলো, এটির ব্যাখ্যায় আবার সাকিবের ভুল স্বীকার করার কথাই বললেন জালাল ইউনুস।

“এখানে আমাদের যুক্তি তো আছে। সে আমাদের সেরা ক্রিকেটার, আমরা তাকে ‘ওউন করি।’ সে দেশের বাইরের কেউ না। সে যখন বলেছে যে ভুল করেছে, আমরা তা মেনে নিয়েছি। পরবর্তীতে যেন পুনরাবৃত্তি না করে, সেটা তাকে বলা হয়েছে এবং সে তা মেনে নিয়েছে। সে আশ্বাস দিয়েছে আমাদের বোর্ড প্রেসিডেন্টের সামনে, তাই আমরা মেনে নিয়েছি।”

সাকিবের এরকম বিতর্কে জড়ানো ও ভুল স্বীকার করা এই প্রথম নয়। মাঠের ক্রিকেটে যেমন তিনি দলের সেরা পারফরমার, দেশের ইতিহাসের সেরা ক্রিকেটার, তেমনি মাঠের ভেতরে-বাইরে অসংখ্য বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন ক্যারিয়ার জুড়ে। নানা সময় শাস্তিও কম হয়নি। অনেক সময় আবার পার পেয়ে গেছেন।

সেসব বিবেচনায় রেখেও তার এবারের কাণ্ড যথেষ্ট বিস্ময়কর। জুয়াড়ির প্রস্তাব গোপন করায় ২০১৯ সালে তাকে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে আইসিসি। সঙ্গে স্থগিত নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয় আরও এক বছরের। ওই অভিজ্ঞতার পর আবার বেটিং সংশ্লিষ্ট কিছুতে তার জড়িয়ে পড়া ছিল অভাবনীয়।

দলের সেরা ক্রিকেটার বলেই শৃঙ্খলাভঙ্গের ঘটনায় পার পেয়ে যাচ্ছেন কিনা, এই প্রশ্ন উঠল অবধারিতভাবেই। জালাল ইউনুসের উত্তরেও মিশে থাকল সেই বাস্তবতার রেশ।

“এমন কিছু হলে আসলে কম্প্রোমাইজ করা উচিত নয়। শৃঙ্খলা বা কোড অব কন্ডাক্ট ভঙ্গ করলে কম্প্রোমাইজ করা উচিত নয়। কিন্তু দলের স্বার্থে… দেখা যাক, যেহেতু সে আর করবে না এবং সে যেহেতু বলেছে এবার আমরা মেনে নিয়েছি। আশা করছি, পরবর্তীতে এমন কিছু আর হবে না।