বাংলাদেশ-ভারত লড়াইয়ের ঝাঁজ ফিরবে আবার?

মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে রোববার শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত ওয়ানডে সিরিজ।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Dec 2022, 02:41 PM
Updated : 3 Dec 2022, 02:41 PM

টিকেট বুথের সামনে দীর্ঘ লাইন সকাল থেকেই। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিক্রির কথা থাকলেও বুথ বন্ধ বেশ আগেই। টিকেট নাকি শেষ! ফুটবল বিশ্বকাপের উন্মাদনার মধ্যে বাংলাদেশ-ভারত ক্রিকেট লড়াই কতটা জায়গা করে নিতে পারবে, কৌতূহলটুকুর সম্ভাব্য উত্তর হতে পারে এই তথ্য। কদিন আগে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানও তুলে ধরেছিলেন টিকেট নিয়ে প্রচণ্ড চাপে থাকার কথা। সিরিজ ঘিরে তাই আগ্রহের কমতি নেই। কিন্তু মাঠের ক্রিকেটে কতটা জমবে লড়াই!

জমিয়ে তোলার দায়টা মূলত বাংলাদেশেরই। নিজেদের আঙিনায় যদি ভারতকে কঠিন পরীক্ষায় ফেলতে পারেন লিটন দাসরা, মিইয়ে যাওয়া বারুদও হয়তো তাতে জ্বলে উঠবে আবার। একটা সময় বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ মানেই বাতাসে পাওয়া যেত যে বারুদের গন্ধ।

রাজনৈতিক বৈরিতার সূত্রে ক্রিকেটেও ভারত-পাকিস্তানের যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা, এই দুই দলের ম্যাচ মানেই যে যুদ্ধের আবহ, কয়েক বছর আগে সেই আবহ সঙ্গী হয়েছিল বাংলাদশ-ভারত লড়াই ঘিরেও। ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার-ফাইনালে ‘নো বল’ বিতর্ক দিয়ে শুরু। বিশ্বকাপের কিছুদিন পর দেশের মাঠে ভারতকে ওয়ানডে সিরিজ হারানো দিয়ে তাতে যোগ হয় নতুন মাত্রা। মাঠের ক্রিকেটে তুমুল লড়াই, মাঠের ভেতরে-বাইরে নানা বিতর্ক, সামাজিক মাধ্যমে তোলপাড় আর আবেগের ঝড় মিলিয়ে এই অঞ্চলে বাংলাদেশ-ভারত লড়াইয়ের উত্তেজনা ছাড়িয়ে গিয়েছিল সবকিছুকে।

কিন্তু মাঠের ক্রিকেটে সেই লড়াইয়ের ধারাবাহিকতা তো থাকতে হবে! বাংলাদেশ ব্যর্থ হয় সেখানেই। ভারতের কাছে একের পর এক পরাজয়ে ব্যবধান স্পষ্ট হতে থাকে ক্রমে। সময়ের সঙ্গে পাকিস্তান দলও নিজেদের গুছিয়ে আবার ভারতের সঙ্গে সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা ফিরিয়ে আনে। বাংলাদেশ-ভারত লড়াইয়ের উত্তেজনা ক্রমেই যেতে থাকে মিলিয়ে।

সেখানেই নতুন মসলা যোগ করার সুযোগ এবার বাংলাদেশের সামনে। মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে শুরু দুই দলের তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ। বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টায় শুরু খেলা। এই সিরিজে যদি দারুণ কিছু করতে পারে বাংলাদেশ, আবারও প্রাণ ফিরবে এই দুই দেশের প্রতিদ্বন্দ্বিতায়।

কদিন আগে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অবশ্য দারুণ জমেছিল বাংলাদেশ-ভারত লড়াই। ২০১৯ সালের ভারত সফরে একটি টি-টোয়েন্টিতে জয়ের পর দুটিতে বাংলাদেশের হার, পরে টেস্ট সিরিজে অসহায় আত্মসমপর্ণের পর ভাটা নামে উত্তেজনার স্রোতে।

এবার লড়াইটা নিজেদের মাঠে বলেই বাংলাদেশের সম্ভাবনা কিছুটা বেশি। সিরিজ শুরুর আগের দিন ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মার কণ্ঠেও ফুটে উঠল সেই সমীহ।

“আমার মনে হয়, এই কবছর ধরে এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল দারুণ রোমাঞ্চকর। গত ৭-৮ বছর ধরে বাংলাদেশ ভিন্ন এক দল। খুবই চ্যালেঞ্জিং দল তারা এবং আমরা সহজে জিততে পারিনি। ওদের বিপক্ষে জিততে হলে আমাদের ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে।”

“প্রতিবারই তাদের সঙ্গে আমরা যখন খেলি, হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে। এমনকি এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও জোর লড়াই হলো। ২০১৫ সালে এখানে এসে আমরা সিরিজ হেরে গেছি। আমরা জানি, গত কয়েক বছরে তারা বেশ উন্নতি করেছে। এবারও সিরিজ জিততে হলে নিজেদের সেরাটা খেলতে হবে আমাদের। কাজটা মোটেও সহজ হবে না।” 

ভারতের কাজ সত্যিই কঠিন করে তুলতে পারতেন যারা, এমন দুজন গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটারকে অবশ্য পাচ্ছে না বাংলাদেশ। চোটের কারণে প্রথম ম্যাচে খেলতে পারবেন না অভিজ্ঞ ফাস্ট বোলার তাসকিন আহমেদ। চোট নিয়ে গোটা সিরিজ থেকেই ছিটকে গেছেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল। এই দলের নেই কোনো সহ-অধিনায়ক। শুক্রবার সন্ধ্যায় ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক হিসেবে জানানো হয় লিটন দাসের নাম।

এই সিরিজ দিয়ে ওয়ানডের নেতৃত্বে অভিষেক হচ্ছে তার। নতুন কিছু মানেই সম্ভাবনার হাতছানি। সেই রোমাঞ্চ সঙ্গী হচ্ছে লিটনের নেতৃত্বের ক্ষেত্রেও, তবে খুব বেশি প্রত্যাশা বা নির্ভরতার সুযোগ তো এখানেই নেই! সিরিজ শুরুর আগেই তাই কিছুটা পিছিয়ে থাকছে বাংলাদেশ।

আরেকটি জায়গাতেও বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকবে খানিকটা। ওয়ানডে বাংলাদেশের প্রিয় সংস্করণ হলেও গত প্রায় চার মাসে এই সংস্করণে ম্যাচ খেলা হয়নি। ভারতের এই দলের বেশ কজন মাত্রই নিউ জিল্যান্ড থেকে ওয়ানডে সিরিজ খেলে ফিরলেন।

এমনিতে বাংলাদেশের ওয়ানডে দলটা মোটামুটি থিতু। তবে এবার চোটের কারণেই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আছে অন্তত দুটি। তামিমের জায়গায় ওপেনিংয়ে লিটনের সঙ্গী এনামুল হক নাকি নাজমুল হোসেন শান্ত? যদি শান্ত হন, তাহলে একাদশে ইয়াসির আলি চৌধুরির জায়গা পাওয়ার সম্ভাবনা সামান্য। পেস আক্রমণে তাসকিন না থাকায় বাছাই করতে হবে একজন বিকল্প। তিনি পেসারই হবেন নাকি বাড়তি স্পিনার, সেই সিদ্ধান্তের ব্যাপারও আছে।

উইকেট নিয়ে ম্যাচের আগের দিন স্পষ্ট কোনো ধারণা দেননি কোনো অধিনায়কই। মিরপুরের উইকেটের চরিত্র অবশ্য বরাবরই রহস্যময়। ম্যাচের দিন কোন রূপে এটা আবির্ভূত হবে, অনেক সময় তা নিশ্চিত করে বলতে পারেন না এখানে অনেক বছর খেলা ক্রিকেটাররাও। লিটন যেমন শনিবারও বললেন, তারাও অনেক সময় বুঝে উঠতে পারেন না এই ২২ গজকে। ম্যাচের ফলে বড় ভূমিকা রাখতে পারে উইকেটও। দুপুর ১২টায় শুরু ম্যাচে অবশ্য শিশিরের ভূমিকা খুব একটা থাকবে না বলেই ধারণা করা যায়।

আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ সুপার লিগের অংশ নয় বলে এই সিরিজে পয়েন্টের চাপ কোনো দলের নেই। তবে বিশ্বকাপের দিকে এগিয়ে যাওয়ার শুরু অবশ্যই এখান থেকেই। আগামী বছর ভারতের অনুষ্ঠেয় বিশ্ব আসরের আর বাকি মাস দশেক। এখন থেকে প্রতিটি ম্যাচই গুরুত্বপূর্ণ। ভারত তো আর এমনি এমনি প্রায় পূর্ণ শক্তির দল পাঠায়নি!

সেই দলের সঙ্গে শক্তির মহড়া হবে বাংলাদেশের। আগামী বিশ্বকাপকে ঘিরে বাংলাদেশ ক্রিকেটের স্বপ্ন আকাশ ছোঁয়া। সেই স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যেতে হলে এই ধরনের বড় সিরিজগুলো থেকে পোক্ত করে নিতে হবে বিশ্বাস, ছড়িয়ে দিতে হবে বার্তা। তামিম-তাসকিনরা না থাকায় সুযোগ নিজেদের শক্তির গভীরতা দেখিয়ে দেওয়ার এবং এই চিত্র ফুটিয়ে তোলার যে, ওয়ানডের বাংলাদেশ সত্যিই অন্যরকম!