সময়ের হিসাবে পাকিস্তানের সবশেষ দুই ওয়ানডের মাঝে ব্যবধান সাড়ে চার মাসের বেশি। তবে দুই ম্যাচেই একই বিন্দুতে মিলে গেলেন নাসিম শাহ ও বাবর আজম। দুবারই নাসিম পেলেন পাঁচ উইকেটের স্বাদ, ব্যাট হাতে বাবর করলেন ফিফটি। সঙ্গে ফখর জামান ও মোহাম্মদ রিজওয়ানের পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংসে নিউ জিল্যান্ডকে অনায়াসে হারিয়ে ওয়ানডে সিরিজের শুরুটা দারুণ করল পাকিস্তান।
করাচিতে সোমবার তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে পাকিস্তানের জয় ৬ উইকেটে। ২৫৬ রানের লক্ষ্য তারা পেরিয়ে যায় ১১ বল হাতে রেখে।
নিউ জিল্যান্ডের প্রথম সাত ব্যাটসম্যানের চার জন স্পর্শ করেন ত্রিশ, এর কাছাকাছি দুই জন। তবে পঞ্চাশে যেতে পারেননি কেউই। কিউইদের সংগ্রহটাও তাই বড় হয়নি।
তরুণ পেসার নাসিম ৫৭ রানে নেন ৫ উইকেট। অভিষেকে আলো ছড়িয়ে লেগ স্পিনার উসামা মিরের প্রাপ্তি ৪২ রানে ২টি।
রান তাড়ায় ৭৪ বলে ৫৬ রানের ইনিংস খেলে সুর বেঁধে দেন ওপেনার ফখর। এই সংস্করণে টানা চতুর্থ ফিফটিতে ৮২ বলে ৬২ রান করেন অধিনায়ক বাবর। কিপার-ব্যাটসম্যান রিজওয়ান জয় নিয়ে ফেরেন ৮৬ বলে অপরাজিত ৭৭ রানের ইনিংস খেলে।
এই ম্যাচের আগে পাকিস্তান সবশেষ ওয়ানডে খেলেছিল গত বছরের অগাস্টে। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৯ রানে জয়ের ওই ম্যাচে ৯১ রানের ইনিংস খেলেছিলেন বাবর। পরে ৩৩ রানে ৫ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা হয়েছিলেন নাসিম। এবারও পুরস্কারটি উঠেছে তার হাতেই।
করাচির জাতীয় স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ওভারেই ডেভন কনওয়েকে হারায় নিউ জিল্যান্ড। তাকে বোল্ড করে নাসিমের শিকার ধরা শুরু।
এই মাঠে সিরিজের শেষ টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসের পর ওয়ানডে ম্যাচেও গোল্ডেন ডাক এর তেতো স্বাদ পেলেন কিউই বাঁহাতি ওপেনার।
পরের ওভারে হারিস রউফের বলে আরেক ওপেনার ফিন অ্যালেনকে এলবিডব্লিউ দেন আম্পায়ার। ডানহাতি ব্যাটসম্যান বেঁচে যান রিভিউ নিয়ে। এরপর দারুণ কয়েকটি চার মারলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি তিনি। কাভারে আঘা সালমানের দুর্দান্ত ক্যাচে বিদায় নেন ২৭ বলে ২৯ রান করে।
অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনও ফেরেন থিতু হয়ে (৩৯ বলে ২৬)। অসাধারণ এক ডেলিভারিতে তাকে বোল্ড করে নিজের প্রথম উইকেট নেন উসামা।
চতুর্থ উইকেটে ৫৬ রানের জুটিতে দলকে এগিয়ে নেন ড্যারিল মিচেল ও টম ল্যাথাম। মিচেলকে (৫৫ বলে ৩৬) বোল্ড করে জুটি ভাঙেন মোহাম্মদ নাওয়াজ। উসামা থামান ল্যাথামকে (৫২ বলে ৪২)।
এরপরই ইনিংস সেরা ৭৫ বলে ৬৬ রানের জুটি নিউ জিল্যান্ড পায় গ্লেন ফিলিপস ও মাইকেল ব্রেসওয়েলের সৌজন্যে। খুব বেশি বড় শট যদিও তারা খেলতে পারেননি। ফিলিপসকে ফেরানোর পর নিজের পরের ওভারে টানা দুই বলে ব্রেসওয়েল ও অভিষিক্ত হেনরি শিপলিকে বিদায় করেন নাসিম।
৪২ বলে ৪টি চার ও একটি ছক্কায় সর্বোচ্চ ৪৩ রান করেন ব্রেসওয়েল। ৫৩ বলে একটি করে চার-ছক্কা ৩৭ রান করেন ফিলিপস।
কিউইদের সংগ্রহ আড়াইশ ছাড়ায় এরপর মিচেল স্যান্টনারের ২১ ও টিম সাউদির অপরাজিত ১৫ রানের সুবাদে।
শেষ ওভারে স্যান্টনারকে ফিরিয়ে পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন নাসিম। স্রেফ ৪ ওয়ানডে খেলে ১৯ বছর বয়সী পেসারের উইকেট হলো ১৫টি।
লক্ষ্য তাড়ায় ষষ্ঠ ওভারে ইমাম-উল-হককে হারায় পাকিস্তান। এরপর ৭৮ রানের জুটিতে দলকে এগিয়ে নেন ফখর ও বাবর।
ফখর ফিফটি পূর্ণ করেন ৬০ বলে। এর পরপরই তাকে বোল্ড করে দেন ব্রেসওয়েল। ৭ চারে গড়া ফখরের ৫৬ রানের ইনিংস।
পরের দুই উইকেটেও পাকিস্তান পায় পঞ্চাশোর্ধ জুটি। বাবর ফিফটি করেন ৬৩ বলে। এরপর বেশিদূর যেতে পারেননি তিনি। তাকে ফিরিয়ে ৬০ রানের জুটি ভাঙেন ফিলিপস।
এই নিয়ে সবশেষ ১১ ওয়ানডে ইনিংসে বাবরের দশম পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস এটি।
রিজওয়ান এরপর ৬৪ রানের জুটিতে দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নেন হারিস সোহেলকে সঙ্গী করে। ২টি করে চার-ছক্কায় ২৩ বলে ৩২ রান করেন সোহেল। সালমানকে নিয়ে বাকিটা অনায়াসে সারেন রিজওয়ান। তার ৭৭ রানের ইনিংসটি গড়া ৬ চার ও এক ছক্কায়।
একই মাঠে বুধবার দ্বিতীয় ম্যাচে নিউ জিল্যান্ডের সামনে সিরিজ বাঁচানোর চ্যালেঞ্জ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউ জিল্যান্ড: ৫০ ওভারে ২৫৫/৯ (অ্যালেন ২৯, কনওয়ে ০, উইলিয়ামসন ২৬, মিচেল ৩৬, ল্যাথাম ৪২, ফিলিপস ৩৭, ব্রেসওয়েল ৪৩, স্যান্টনার ২১, শিপলি ০, সাউদি ১৫*, ফার্গুসন ১*; নাসিম ১০-০-৫৭-৫, রউফ ৮-১-৫৪-০, ওয়াসিম ৮-০-৪৩-১, উসামা ১০-০-৪২-২, নাওয়াজ ১০-০-৩৮-১, সালমান ৪-০-১৮-০)
পাকিস্তান: ৪৮.১ ওভারে ২৫৮/৪ (ফখর ৫৬, ইমাম ১১, বাবর ৬, রিজওয়ান ৭৭, সোহেল ৩২, সালমান ১৩*; সাউদি ৮.১-০-৫৫-১, শিপলি ৬-১-২৮-০, ব্রেসওয়েল ১০-০-৪৪-২, ফার্গুসন ৮-০-৫১-০, স্যান্টনার ১০-০-৪৩-০, ফিলিপস ৬-০-৩৫-১)
ফল: পাকিস্তান ৬ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথমটির পর ১-০তে এগিয়ে পাকিস্তান
ম্যান অব দা ম্যাচ: নাসিম শাহ